শাহিদ মোস্তফা শাহিদ, সদর  :

কক্সবাজার সদরের বৃহত্তর ঈদগাঁওয়ের ৩ ইউনিয়নে পরিবেশ আইনকে বৃদ্ধ আঙ্গুলী দেখিয়ে স্থাপিত ৮ টি ইটভাটার মধ্যে ৫ টিতে পরিবেশ আইনকে উপেক্ষা করে জ্বালানী কাঠ পুড়ানো হচ্ছে। ফলে পার্শ্ববর্তী বনাঞ্চলের বৃক্ষাদি প্রতিনিয়ত উজাড় হলেও নজর নেই সংশ্লিষ্টদের। যার কারণে সরকার সরকার হারাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব। স্থানীয় সচেতন মহল ও পরিবেশবাদীদের আশংকা এ অবস্থা চলতে থাকলে বৃক্ষ শূণ্য হয়ে পড়বে পুরো বনাঞ্চল।সরেজমিনে দেখা যায়,জালালাবাদ পুর্ব ফরাজী পাড়ায় ২ টি, ঈদগাঁও ইউনিয়নের ভোমরিয়া ঘোনায় একটি, জাগির পাড়া এলাকায় একটি,ইসলামাবাদ ইউনিয়নের ফকিরা বাজারের উত্তরে একটি মোট ৫ টি ইটভাটায় রাতদিন পুড়ানো হচ্ছে বনাঞ্চলের কাঠ।চুল্লীর পাশে স্বল্প ওজনের কয়লা রাখা হলেও সে গুলো লোক দেখানো বলে জানান নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক কয়েকজন শ্রমিক।তবে চৌফলদন্ডীর নতুন মহাল ও ইসলামাবাদ ইউনিয়নের বোয়ালখালীতে স্থাপিত দুটি ইটভাটা ঝিকঝাক বলে সরেজমিনে প্রমাণ মিলেছে।বাস স্টেশনের গরু বাজার এলাকায় অবস্থিত অপর একটিতে তেমন কাঠ পুড়ানো দৃশ্য চোখে পড়েনি।স্থানীয় প্রভাবশালীদের অর্থায়নে এই ইটভাটা স্থাপনাসহ চলতি মৌসুমে পুরোদমে ইট তৈরীর কার্যক্রম চলছে।পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের নিয়মাবলী উপেক্ষা করে ইটভাটা মালিকরা সংশ্লিষ্ট বিভাগকে মাসোহারা দিয়ে সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে কাঠ পাচার করে পোহাচ্ছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। অন্যদিকে পাথরী কয়লার পরিবর্তে দিনরাত চারা গাছ পোড়ানোর ফলে কালো ধোঁয়া চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে। কয়েকজন ইটভাটার শ্রমিকের সাথে কথা হলে বনাঞ্চলের কাঠ পুড়ানো হচ্ছে বলে স্বীকার করেন।এতে পাশ্ববর্তী বন বিভাগের সংরক্ষিত ও রক্ষিত পাহাড়ের সৃজিত বাগানের কচি বৃক্ষাদি উজাড় হচ্ছে প্রতিনিয়ত। জালালাবাদে স্থাপিত ২ টি ইটভাটায় ব্যাপক হারে জ্বালানী কাঠ পুড়ানোর মহোৎসব চলছে বলে স্থানীয়রা জানায়। তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রত্যক ইটভাটায় ৩/৪ টি করে লাইসেন্স বিহীন ডাম্পার ও ট্রাক রয়েছে। মালিকদের বেতনধারী চালকরা এসব পরিবহন দিয়ে রাত -দিন পার্শ্ববর্তী ঈদগাঁও,ইসলামাবাদ, ঈদগড়, বাইশারী,রশিদ নগর,খুটাখালী বনাঞ্চল থেকে চারাগাছ কেটে জ্বালানী কাঠ সংগ্রহ করে নিয়ে আসে স্ব-স্ব ইটভাটায় মজুদ করে রাখে। খোঁজ খবর ও সরেজমিনে দেখা যায় জালালাবাদ ইউনিয়নের পুর্ব ফরাজী পাড়ায় স্থাপিত টিকে ব্রিকফিল্ডে পুড়ানো কাঠ গুলোর ডিপো রয়েছে ঈদগাঁও বাজারস্থ জাগির পাড়া এলাকার ভাটা মালিকের নিজস্ব কলোনীতে।পরে ঐসব জ্বালানী কাঠ সমূহ ইটভাটায় রক্ষিত করে তা নিরাপদে পুড়ানো হয় বলে আবদুল হক, রেজাউল করিম, জাফর আলমসহ আরো অনেকই জানায়।এভাবে ইটভাটার মালিকরা বেপরোয়া বন বাগানের মূল্যবান উঠতি গাছের চারা ইটভাটায় পুড়িয়ে বিপন্ন করেছে বনাঞ্চল আর পরিবেশ। ফলে একদিকে যেমন বন বিভাগের মূল্যবান বৃক্ষ সাবাড় হচ্ছে। সরকার হারাচ্ছে প্রচুর রাজস্ব। অন্যদিকে অনবরত গাছপালা কেটে ফেলার ফলে ওজোনস্তর ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাব ও পরিবেশ তার ভারসাম্য হারিয়ে মানব দেহের ক্ষতিকারক অতিবেগুনী রশ্মি পৃথিবীতে এসে পড়ে। এলাকার সচেতন মহল ও পরিবেশবাদীদের দাবী ইটভাটা গুলোতে অভিযান চালিয়ে বৃক্ষ নিধন বন্ধ করা জরুরী।এছাড়া কাঠ পাচারকারী ও ইটভাটা মালিকদের নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে অচিরেই কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বনজ সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাবে।জানতে চাইলে নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একজন ইটভাটা মালিক বলেন, সংশ্লিষ্টদের প্রতিমাসে মাসোহারা দিয়ে কাঠ গুলো আনা হয়।কয়লার দাম বেশী হওয়ায় কম দামে কাঠ গুলো ক্রয় করে পুড়ানো হচ্ছে। বৃহত্তর ঈদগাঁওয়ের ইটভাটা মালিকদের সভাপতি নামে পরিচিত আলহাজ্ব জসিম উল্লাহ মিয়াজী কাঠ পুড়ানোর সত্যতা নিশ্চিত করে সকালের কক্সবাজারকে জানান, কয়লার দাম একটু বেশি হওয়ায় মাঝে মধ্যে কাঠ গুলো পুড়ানো হয় বলে স্বীকার করেন।কাঠ পাচার বনজ সম্পদ ধ্বংসের বিষয়ে জানতে সদরের এসিএফ বেলায়েত হোসেনের মুঠোফোনে কয়েবার রিং দেওয়া হলেও রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে একাধিক বার কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা হক মাহবুব মুর্শেদের মোবাইলে বার বার কল দেওয়ার পরও ব্যস্ত দেখায় এবং সংযোগ পাওয়া যায়নি।