এম. বেদারুল আলম:
মানুষ মরনশীল। নশ্বর পৃথিবীর সকল প্রাণীকে একদিন মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। তবে ক্ষণজন্মা পৃথিবীর কিছু মানুষ মানুষের চিত্তে স্থান দখল করে নেয় স্বমহিমায়। যারা অন্তকরণে সর্বশ্রেণির মানুষের কাতারে আলিঙ্গণ করে নেয় তাদের আজীবন মনে রাখে সবপেশা শ্রেণির মানুষ। নির্মোহ সাদা মনের মানুষ বর্নাঢ্য জীবনের অধিকারি কক্সবাজারের আওয়ামী পরিবারের অন্যতম বটবৃক্ষ এডভোকেট শাহাব উদ্দিন সিকদারের ৫ম মৃত্যু বার্ষিকী আজ। ২০১৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তিনি স্রষ্টার ডাকে আমাদের ছেড়ে পরপারে পাড়ি জমান। মহান করুনাময় সরল জীবনযাপনকারি পরোপকারি এ মহান রাজনীতিককে জান্নাতের পরম আসনে শান্তিতে রাখুক।

এই মহান ব্যক্তির সাথে আমার কাজ করার সুযোগ হয়েছিল ২০০৮ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে। আমি তখন দৈনিক আজকের দেশবিদেশের নিজস্ব প্রতিবেদক হিসাবে কাজ করি। তিনি আওয়ামী লীগের হয়ে সদর উপজেলার চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন। বিএনপি থেকে ঈদগাঁও এর বিএনপি নেতা মমতাজুল ইসলাম এবং জামায়াতের প্রার্থী ছিলেন এড. ছািলম উল্লাহ বাহাদুর। আমাকে তৎকালিন জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এড. আব্বাছ উদ্দিন চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগনেতা জিপি মোঃ ইসহাক এবং দৈনিক আজকের দেশবিদেশ পত্রিকার তৎকালিন নির্বাহী সম্পাদক এড. আয়াছুর রহমান ডেকে প্রেস সেক্রেটরির দায়িত্ব দিয়ে বললেন- নির্বাচন পর্যন্ত তোমাকে নির্বাচনের সংবাদ গুলো ভালোভাবে কাভার করতে হবে। আমি বলা মাত্রই রাজি হয়ে গেলাম। প্রথমত তিনি আমার ইউনিয়নের উপরন্তু আমার বাবার মত আমাকে আগে থেকেই সন্তানেরমত ভালবাসতেন। তবে কাজ কঠিন ছিল কেননা আমি তখন লিংকরোডে অবস্থিত আল বয়ান ইনস্টিটিউটের শিক্ষকতা করি। পাশাপাশি ইংরেজী দৈনিক ডেইলী নিউ নেশনের জেলা প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করি। সারা দিন খাটুনী সন্ধা হলে নিউজ। সদরের ইসলামপুরের জনসভার কথা বেশ মনে পড়ে। স্কুল শেষে না খেয়ে আমি সোজা চলে যায় ইসলামপুরের সে জনসভায়। আমার চেহারা দেখে চাচা শাহাব উদ্দিন যে কথাটি বলেছিলেন তা আমার আজীবন মনিকোঠায় গেথেঁ থাকবে। ‘ভাতিজা খেয়ে নাও – বাচঁলে আমার চেয়ারম্যানী দরকার’। না বাঁচলে কি জন্য। সে নির্বাচনে শেষ জনসভা ছিল পিএমখালী নুর মোহাম্মদ চৌধুরী বাজারের নুরুল উলুম মাদ্রাসার মাঠে। তিনি পিএমখালীর সন্তান হিসাবে সবার কাছে অনন্যসাধারণ ব্যক্তি ছিলেন। তা প্রমান করেছিল সেদিনের উপস্থিতি। জনসভায় উপস্থিত ছিলেন এড. শাহাব উদ্দিন চাচার শিক্ষক মৌলানা আবুল কাশেম। বিশাল জনসভায় সবার সামনে তিনি শিক্ষককে পা ছুঁয়ে আলিঙ্গণ করে শিক্ষকদের মান কতটুকু উঁচুতে নিয়ে গিয়েছিলেন , শ্রদ্ধার যে আবেশ ছড়িয়ে ছিলেন তা আজো হৃদয়ে গ্রোথিত রয়েছে। মারপ্যাচহীন সদা সরল জীবন যাপনে অভ্যস্থ ছিলেন তিনি। নিজেকে পরিপাঠি করে গুছিয়ে চলতেন তিনি। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে অনেক কঠিন বির্পজয়ে দলের হাল ধরে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতেন এ কান্ডারি। বলতে গেলে জেলা আওয়ামী লীগের কঠিন সময়ের কান্ডারি ছিলেন চাচা এড. শাহাব উদ্দিন। উনার কাছ থেকে ভদ্রতা,শিষ্ঠাচার, মানুষকে আপন করে নেওয়ার মত সৎ গুন ছিল বলেই তিনি মানুষের মনে স্থান করে নিতে পেরেছিলেন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির কিছুদিন দায়িত্ব পালন করেন। তার দায়িত্বপালনকালিন সময়ে জেলা আওয়ামী লীগ গতি পায় দলীয় কার্যপালনে। বৃহৎ হৃদয়ের অধিকারি এবং দাপুটে নেতা হওয়ার পর ও দখল দারিত্য¡, হামলা, মানুষকে জিম্মি করে সুবিধা আদায় তাকে স্পর্শ করেনি। আজকের পথভ্রষ্ট নেতাদের জন্য এড. শাহাব উদ্দিন সিকদারের সুন্দর চরিত্র, দলের জন্য ত্যাগ তা পথ দেখাতে পারে।

জেলা আওয়ামী লীগের নির্মোহ রাজনীতিবীদ এড.শাহাবুদ্দিন আহাম্মদ ১৯৪৫ সালে সদর উপজেলার পিএম খালীর তোতক খালীর স্বনামধন্য সিকদার বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি তৎকালিন জমিদার মৃত আব্দুল করিম সিকদারের পুত্র। তিনি ১৯৮৪ সালে চট্টগ্রাম কলেজে অধ্যায়নরতবস্থায় সক্রিয় ভাবে জড়িয়ে পড়েন ছাত্র রাজনীতিতে। সে সময় তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সক্রিয় নেতা ছিলেন। পরে ১৯৭৩ সালে আইন পেশাতে জড়িত হন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বিশিষ্ট আইনজীবি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। একই ভাবে তিনি জেলা আইনজীবি সমিতির সভাপতি হিসেবে টানা দু’বার দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সদর উপজেলার প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি নির্বাচিত হন। ১৯৮৪ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত কক্সবাজার জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব ও পালন করেন । খেলাধুলার প্রতি অন্তপ্রাণ এ রাজনীতিবীদ জেলার ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া সংগঠন ঈগল সোর্টিং ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। ১৯৯৬ সালে সক্রিয় ভাবে আওয়ামী লীগে যোগদান করার পর কক্সবাজারে আওয়ামীগের পটভুমি গতি পায়। সক্রিয় হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রাণের সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যক্রম দৃশ্যমান হয়ে উঠে। ব্যক্তি জীবনে তিনি ৩ সন্তানের জনক ছিলেন। ২ ছেলে ১ মেয়ের মধ্যে বর্তমান কক্সবাজার সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক , জেলা পরিষদের সদস্য মাহাদুল করিম মাদু ও বড় ছেলে এক সময়ের দেশসেরা ফুটবলার মামুনুল করিম মামুন । একমাত্র মেয়ে উম্মে সালমা উচ্চ শিক্ষিত কুতুবদিয়ার ঐতিহ্যবাহী পরিবারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ি এনামুল হকের স্ত্রী।

জীবনের শেষলগ্নে এসে তিনি স্ত্রী মর্জিয়া বেগমকে হারিয়ে একা হয়ে পড়েন। জীবনের ছন্দ সামান্য হারালেও দু’সন্তান বুক আগলে তাদের দীক্ষা দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ আওয়ামীগকে বুকে জড়িয়ে সন্তানদের প্রেরণা যুগিয়েছিলেন। সবুজ লাল পতাকার ঝান্ডাবাহী নির্লোভ পরোপকারি রাজনীতিবীদ এড.শাহাব উদ্দিন বর্তমান সময়ের অনেক নেতাকর্মীর জন্য অনুস্মরণীয় দৃষ্টান্ত হবে পারে। ডায়নামিক এ নেতার ৫ম মৃত্যু বার্ষিকীতে পরম করুনাময় মহান স্রষ্টার দরবারে চাওয়া জান্নাতের উচ্চশীরে যেন তাঁকে আসীন করেন। পাশাপাশি প্রয়াত মরহুমা স্ত্রী যিনি এ ব্যক্তিকে আগলে রেখে পথ দেখিয়েছিলেন তাঁর প্রতি রইল অফুরন্ত আশীষ ও শ্রদ্ধার্ঘ্য।

লেখক-
নিজস্ব প্রতিবেদক, দৈনিক কক্সবাজার
শিক্ষক, কক্সবাজার কেজি স্কুল।