তাজুল ইসলাম পলাশ, চট্টগ্রাম:

অবশেষে ভুমিদস্যুদের কবল থেকে রক্ষা পেতে যাচ্ছে কর্ণফুলী নদী। দীর্ঘ আড়াই বছর মামলা জটিলতা ও অর্থবরাদ্দের কারনে কর্ণফুলী নদীর দু’পাড়ে প্রায় ১০কিলোমিটার এলাকা দখলে ছিল। সোমবার (৪ ফেরুয়ারি) কর্ণফুলীর উত্তর পাড়ে অবৈধ স্থাপনা গুড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসন। অভিযানের আগেই নদীর পাড়ের অবৈধ কাঁচা, সেমিপাকা, পাকা স্থাপনা সরিয়ে নেন। ক্রেন, গ্যাস কাটার, শ্রমিক দিয়ে নিজ নিজ স্থাপনা সরিয়ে নিচ্ছে অনেক প্রভাবশালী। উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্ব দেন পতেঙ্গা সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাহমিলুর রহমান।

তিনি বলেন, শুরুতেই জেটি ঘাটে নদী সংলগ্ন স্থাপনা বুলডোজার দিযে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীর মোহনা থেকে শুরু করে মোহরা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকা তিনটি জোনে ভাগ করে এ অভিযান চলবে বলে ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর জানান। তিনি বলেন, প্রথম ভাগে সদরঘাট থেকে বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। পরে পতেঙ্গা ও চাক্তাই এলাকায় উচ্ছেদ শুরু হবে। পে লোডার, এক্সক্যাভেটর ও ট্রাক নিয়ে ১০০ জন শ্রমিক নদী তীরের অবৈধ স্থাপনাগুলো ভাঙার কাজ করছেন।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীর মোহনা থেকে শুরু করে মোহরা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নদীর দুই তীরে গড়ে ওঠা এইসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।

পতেঙ্গা সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাহমিলুর রহমান জানান, কর্ণফুলীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের অভিযান শুরু হয়েছে। সদরঘাটে বন্দরের লাইটারেজ জেটি থেকে মাঝিরঘাট পর্যন্ত ভূমি পরিমাপ করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য লাল রং দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। সীমানা পিলার ঠিক করা হয়েছে।

দীর্ঘদিন থেকে কর্ণফুলীর নব্যতা ও দখল দূষণ থেকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদসহ দূষণ বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছে পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীরাও। কিন্তু এসব আন্দোলনে ফলদায়ক তেমন কিছু লক্ষ্য করা যায়নি। আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বরাবরের মতোই দখলদারা তাদের অবস্থানে অনড় ছিল। স্থানীয় প্রভাবশালী ও চিহ্নিত কিছু সন্ত্রাসী এসব অবৈধ স্থাপনা দখলে রেখেছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। অবশেষে নানা জল্পনা শেষে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে।

২০১০ সালের ১৮ জুলাই হিউম্যান রাইটস পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে জনস্বার্থে করা রিট আবেদনে হাই কোর্টের এক আদেশে নদী দখল, মাটি ভরাট ও নদীতে সব ধরণের স্থাপনা বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়। সেইসাথে স্থানীয় প্রশাসনকে নদীর প্রকৃত সীমানা নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দিতে বলে আদালত।

আদালতের নির্দেশের পর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু করে। সেসময় যে অবৈধ স্থাপনাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছিল, সেগুলোই এখন উচ্ছেদ করা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে একটি সমন্বয় সভার পর সোমবার থেকে অভিযান শুরুর ঘোষণা দেওয়া হয়।

পতেঙ্গা, ইপিজেড, বন্দর, কোতোয়ালি, বাকলিয়া, চান্দগাঁও মৌজার ৩৬৮ এবং পূর্ব পতেঙ্গা মৌজার ১৭৪৪টিসহ ২১১২টি স্থাপনা উচ্ছেদের বিষয়ে আলোচনা হয় সেদিনের সভায়। অভিযানে নামার আগে শনিবার বিকালে নগরীর সদরঘাট এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, কর্ণফুলীর দুই তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।