মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

সাহসিকতা, বীরত্বপূর্ণ অবদান, দৃষ্টান্তমূলক সেবার স্বীকৃতি স্বরূপ কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন সহ কক্সবাজার জেলা পুলিশের ৫ কৃতি পুলিশ কর্মকর্তা পুলিশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় বিপিএম (বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল) এবং পিপিএম (রাষ্ট্রপতি পুলিশ মেডেল) পদকে ভূষিত হয়েছেন। সোমবার ৪ ফেব্রুয়ারি পুলিশ সাপ্তাহ ২০১৯ উপলক্ষ্যে ঢাকা রাজারবাগ পুলিশ সদর দপ্তরের প্যারেড মাঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে পদক প্রাপ্তদের আনুষ্ঠানিকভাবে পদক প্রদান ও ব্যাজ পরিয়ে দেন। বাংলাদেশ পুলিশের সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ রাষ্ট্রীয় পদক বিপিএম এবং পিপিএম প্রাপ্ত কক্সবাজার জেলা পুলিশের গর্বিত পাঁচ কর্মকর্তা হলেন-কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন (বিপি:৭৫০৫১০৫০৭৯) বিপিএম (সাহসিকতা), টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ (বিপি:৭২৯৫০৮৪৪২) বিপিএম (সাহসিকতা), কক্সবাজার সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফরিদ উদ্দিন খন্দকার (বিপি: ৬৮৯৮০৫৩৫৪৮) পিপিএম (সাহসিকতা), টেকনাফ মডেল থানার সাব ইনস্পেক্টর (এসআই) (নিরস্ত্র) শরিফুল ইসলাম (বিপি: ৮৪০৩০৬৪৩৫৭) পিপিএম (সাহসিকতা) এবং একই থানার সাব ইন্সপেক্টর (এসআই) (নিরস্ত্র) রাসেল আহামদ (বিপি: ৮৪১৩১৫৭৮১২) পিপিএম (সাহসিকতা)। পুরস্কার প্রাপ্ত জেলা পুলিশের এ পাঁচজন কর্মকর্তা ছাড়াও র‍্যাব-৭ এর অধীন কক্সবাজার জেলায় কর্মরত সদর উপজেলার কোম্পানি অধিনায়ক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর মেহেদী হাসান এবং টেকনাফে কর্মরত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট শাহেদ মাহতাবও পুলিশের মর্যাদাপূর্ণ একই পুরস্কার গ্রহন করেছেন। পদক প্রাপ্তরা রাষ্ট্রীয় অর্থ সুবিধা এবং প্রাপ্ত উপাধি নিজ নিজ নামের শেষে ব্যবহার করতে পারবেন।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন এই দুর্লভ ও মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার তিনি সহ তাঁর অধীনস্থ কক্সবাজার জেলা পুলিশের পাঁচ জন কর্মকর্তাকে প্রদান করায় ঢাকা থেকে সোমবার মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে তাঁর প্রতিক্রিয়ায় মহান আল্লাহতায়লার কাছে শোকরিয়া জ্ঞাপন করে বলেন-এ বিরল পুরস্কারে তাঁদের ভূষিত করায় তাঁদের ত্যাগ, সাহস ও ঝুঁকিপূর্ণ কর্মের যথার্থ মূল্যায়ন করা হয়েছে। এতে তাঁদের কাজের গতি, সাহস ও উৎসাহ আরো বাড়বে বলে এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন-রাষ্ট্রীয় পুরস্কার প্রাপ্তির এই বিশাল অর্জন শুধুমাত্র তাঁর একার কৃতিত্ব নয়, তাঁর মতে-এই কৃতিত্ব কক্সবাজার জেলা পুলিশের সকল সদস্যের। কারণ, জেলা পুলিশের সকল সদস্য ও কক্সবাজারের নাগরিকবৃন্দ জেলার আইনশৃঙ্খলা সুরক্ষায় সহযোগিতা নাকরলে এ বিরল অর্জন কখনো সম্ভব হতোনা। এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বলেন-এ বিশাল প্রাপ্তি তাঁর ও তাঁর বাহিনীর দায়িত্ব ও কর্মের পরিধিকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে এবং দেশ ও মানুষের কাছে ঋনী করেছে। এ পুরস্কার পুলিশ ও জেলাবাসীর মর্যাদাকে বৃদ্ধি করেছে, পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে, পুলিশের প্রতি গণমানুষের আস্থা ও বিশ্বাস বেড়েছে। তিনি বলেন-জাতীয় পদক পাওয়া জেলা পুলিশের অবশিষ্ট ৪ জন কর্মকর্তাও খুবই কর্মঠ, যোগ্য, দক্ষ এবং মেধাবী। তিনি পুরস্কার প্রাপ্তির এই শুভলগ্নে কক্সবাজার জেলা পুলিশের সকল কর্মকর্তা ও সদস্য এবং কক্সবাজারের সম্মানিত নাগরিকদের আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। এই অপরিসীম অর্জনে কক্সবাজার জেলা পুলিশের সকল সদস্য অধম্য আত্মবিশ্বাস, প্রেরণা ও প্রত্যয়ে সমৃদ্ধ হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন তাঁকে সহ জেলায় ৫ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রদত্ত এই গৌরবময় সম্মাননা প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এমপি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন, ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম (বার), চট্টগ্রাম রেন্ঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক (বিপিএম-পিপিএম), পুলিশ সদর দপ্তরের সকল উর্ধ্বতন কর্মকর্তা সহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। তিনি বলেন-একত্রে কক্সবাজার জেলা পুলিশের পাঁচজন সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক পাওয়া নিঃসন্দেহে গৌরবের বিষয় ও জেলা পুলিশের জন্য প্রশংসনীয় রেকর্ড। পদক প্রাপ্ত টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন-কৃতকর্মের মূল্যায়ন হওয়ায় কর্মস্থলে সাহসিকতা ও অদম্য মনোবল নিয়ে কাজ করতে আরো স্পৃহা ও উদ্যোম বেড়ে যাবে। এ সম্মাননা তাঁর পেশাগত দায়িত্ব ও কর্তব্যকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। পুরস্কার প্রাপ্ত কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি ফরিদ উদ্দিন খন্দকার বলেন-এ প্রাপ্তি পুলিশকে আরো জনবান্ধব ও সেবামুখী করে তুলবে। দাপ্তরিক কাজের গতি ও সেবার মান বৃদ্ধি পাবে। পদকগ্রহন করে টেকনাফ মডেল থানার এসআই শরিফুল ইসলাম তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন-এ পুরস্কার আমার জীনের একটা মাইলফলক। ঝুঁকি ও ত্যাগের স্বীকৃতি পেলাম এবং অপরাধ দমনে অদম্য মনোভাবের সৃষ্টি হয়েছে। এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন সহ পদক প্রাপ্ত সকলে কর্মজীবনের আরো সাফল্যের জন্য সবার কাছে দোয়া ও সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন। স্বামীর গৌরবময় পদক প্রাপ্তির প্রতিক্রিয়ায় এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেনের সহধর্মিনী জেনিফার মাসুদ বলেন-এ বিরল পুরস্কারে পুলিশ বাহিনীর কাছে আমার পরিবার কৃতার্থ হয়েছে। আমার স্বামীর কর্ম, পেশাদারিত্ব, দক্ষতা ও ত্যাগের যথার্থ মূল্যায়ন করায় তিনি খুবই খুশী বলে জানান। তাঁর স্বামীর প্রাপ্ত এ বিরল সম্মাননা তাঁর জীবনের এক অবিস্মরণীয় ঘটনা বলে তিনি মন্তব্য করেন। এ.বি.এম মাসুদ হোসেন ২৪ তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচের একজন চৌকষ ও মেধাবী পুলিশ কর্মকর্তা। বিগত সালের ১৮ সেপ্টেম্বর তিনি পুলিশ সুপার হিসাবে কক্সবাজারে যোগদান করেন। বরিশাল জেলার মেহেন্দীগন্ঞ্জে জন্মগ্রহণকারী এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন ঈসা ও মুসা নামক চোখজুড়ানো ফুটফুটে জমজ দুই পুত্র সন্তনের গর্বিত জনক। রাষ্ট্রীয় পদক প্রাপ্তির বিষয়ে কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মোহম্মদ ইকবাল হোসাইন জানান-একত্রে পাঁচজন পুলিশ কর্মকর্তা জাতীয় পদক পাওয়ায় কক্সবাজার জেলা পুলিশ পুরো দেশে একটি রোল মডেলে পরিনত হয়েছে। এই অসামান্য প্রাপ্তিতে জেলা পুলিশ সত্যিই গর্বিত ও পুলকিত। কক্সবাজার জেলা পুলিশের এই শুভলগ্নে ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন জেলা পুলিশের সকল সদস্য সহ জেলাবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
এর আগে “পুলিশ জনতা ঐক্য গড়ি-মাদক জঙ্গি নির্মূল করি” এই প্রতিপাদ্য নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের বাৎসরিক মহোৎসব নামে খ্যাত পুলিশ সাপ্তাহ ২০১৯ শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি আবিদা সুলতানার নেতৃত্বে পুলিশের ১১ টি পৃথক বাহিনীর সম্মিলিত প্যারেড পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহন করেন। ২০১৮ সালে সফল কৃতকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ বিপিএম এবং পিপিএম পদকের জন্য চুড়ান্ত মনোনীত ৩৪৯ জনের মধ্যে ৩৪৭ জনকে প্রধানমন্ত্রী নিজে পদক ও ব্যাজ পরিয়ে দেন। পদক প্রাপ্তদের তালিকার এক ও দুই নম্বর ক্রমিকে থাকা পুলিশ সদস্যদ্বয় দায়িত্বপালনকালীন সময়ে নিহত হন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরে পুলিশ কল্যাণ সভায় প্রধান অতিথির দিক নির্দশনা মূলক বক্তৃতা করেন এবং মধ্যাহ্যৃভোজে অংশ নেন।