আলমগীর মানিক,রাঙামাটি :

পার্বত্য চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের ঐহিত্যবাহী পানীয় দু’চোয়ানীর অবাধ ব্যবহার কমিয়ে আনলে পাহাড়ের বাসিন্দাদের মধ্যে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটাই কমে আসবে বলে মন্তব্য করেছেন রাঙামাটির স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃপক্ষ। সোমবার বিশ্ব ক্যান্সার দিবস উপলক্ষে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে আয়োজিত আলোচনা সভায় এই তথ্য উঠে আসে। সোমবার দুপুরে রাঙামাটির স্বাস্থ্য বিভাগের আয়োজনে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিভিল সার্জন ডাঃ শহিদ তালুকদার। জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডাঃ শওকত আকবর খানের সঞ্চালনায় উক্ত আলোচনা সভায় ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাঃ নীহার রঞ্জন নন্দী, ডাঃ মাকসুদুর রহমানসহ অন্যান্য বিশেজ্ঞ চিকিৎসকগণসহ সিনিয়র নার্স ও গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা সভায় জানানো হয়, পাহাড়ের বৈচিত্যময় সংস্কৃতি ও ভৌগলিকগত অবস্থানে বসবাসকৃত পাহাড়ি জনগোষ্ঠি সমূহের মধ্যে স্থানীয়ভাবে তৈরিকৃত ঐতিহ্যবাহি চোলাই মদের অবাধ ব্যবহার এখনি কমিয়ে না আনলে অদূর ভবিষ্যতে অত্রাঞ্চলের বাসিন্দারা লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি পরিমাণে রয়েছে। এছাড়াও অত্রাঞ্চলে প্রাপ্ত বয়স্ক নাহওয়া অর্থাৎ বাল্য বিয়ে কমবয়সের সন্তানের মা হওয়ার প্রবণতা চলমান থাকায় এখানকার নারীদের মাঝে স্তন ক্যান্সার ও জরায়ুমুখের ক্যান্সার রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেশি রয়েছে। এমতাবস্থায় স্থানীয় বাসিন্দাদের সচেতন হওয়াসহ পাহাড়ি সমাজে চলমান মদ ও মাদক জাতীয় দ্রব্যের ব্যবহার কমিয়ে আনার কোনো বিকল্প নেই। তাই মরনব্যাধি ক্যান্সারের হাত থেকে পাহাড়বাসীকে রক্ষায় অত্রাঞ্চলে চোলাই মদ ও মাদকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট্য কর্তৃপক্ষসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সমাজ সংস্কারকদের অগ্রণী ভূমিকায় এগিয়ে আসার আহবানও জানিয়েছেন রাঙামাটি স্বাস্থ্য বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকবৃন্দ। পার্বত্যাঞ্চলে বর্তমান সময়ে মেয়েদের মাঝে স্তন ক্যান্সার ও জরায়ু ক্যান্সারের অধিক ঝুঁকি রয়েছে মন্তব্য করে সিভিল সার্জন ডাঃ শহীদ তালুকদার জানান, বিষয়টি নজরে আসায় সরকারীভাবেই রাঙামাটির স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃপক্ষ অত্রাঞ্চলের মেয়েদের বিশেষ করে প্রাপ্ত কিশোরী ও প্রাপ্ত বয়স্ক এবং বিবাহিত মায়েদের বিনামূল্যে ক্যান্সারের অগ্রিম ভায়া পরীক্ষা করাচ্ছে। ইতিমধ্যেই গত একমাসে রাঙামাটিতে ৯৩ জন নারীকে এই পরীক্ষার আওতায় আনা হয়েছে। রাঙামাটির সিভিল সার্জন জানিয়েছেন পরীক্ষায় ৯ (নয়) জন নারীর শরীরে ক্যান্সারের জীবানুর অস্থিত্ব পাওয়ায় তাদেরকে চট্টগ্রাম মেডিকেলের ৬ষ্ঠ তলায় স্থানান্তর করা হয়েছে।

আলোচক চিকিৎসকবৃন্দ জানান, রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল, কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কাপ্তাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সম্পূর্ন বিনামূল্যে ক্যান্সারের ভায়া টেষ্ট করানো হচ্ছে। রাঙামাটির যেকোনো প্রান্ত থেকে এসব হাসপাতালগুলোতে বিনামূল্যে স্তন ও জরায়ু ক্যান্সারের জীবানুর অস্থিত্ব পরীক্ষা করানোর জন্য স্থানীয় নাগরিকদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। এদিকে আলোচনা সভায় জানানো হয়, আগামী এক বছরের মধ্যেই সারাদেশের ন্যায় পার্বত্যাঞ্চলেও ১৩ বছর বয়সী কিশোরী ও মায়েদেরকে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের মাধ্যমে স্তন ও জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধক বিশেষ প্রতিষেধক টিকা প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।