মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন(বিপিএম) সহ কক্সবাজার জেলা পুলিশের চার জন কর্মকর্তা পুলিশ বাহিনীর জন্য সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মানজনক পদক বিপিএম এবং পিপিএম পুরস্কারের জন্য চুড়ান্তভাবে মনোনীত হয়েছেন। একটি জেলায় একটি শৃংখল বাহিনীর কর্ণধার সহ একত্রে চারজন কর্মকর্তা সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় খেতাব পাওয়ায় কক্সবাজার জেলা পুলিশের মাঝে এখন আনন্দের বন্যা বইছে। অপরিসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ পুলিশের সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ জাতীয় পুরস্কার বিপিএম (বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল) এবং পিপিএম (প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল) পাওয়ায় জেলা পুলিশ বাহিনীর সর্বস্থরের সদস্যদের মর্যাদা নিঃসন্দেহে বৃদ্ধি করেছে। মঙ্গলবার ২৯ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের জন নিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ শাখা-২ এর উপসচিব ফারজানা জেসমিনের স্বাক্ষরে ১৯/৬৮/১(১১) নম্বর স্মারকে জারীকৃত এক প্রজ্ঞাপনে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ.বি.মাসুদ হোসেন (বিপি:৭৫০৫১০৫০৭৯) সহ সারাদেশে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ২০১৮ সালের কর্ম বিবেচনায় সর্বমোট ৩৪৯ জন বিপিএম ও পিপিএম পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন। একই প্রজ্ঞাপনে কক্সবাজার জেলা পুলিশের আরো ৩ জন কর্মকর্তা এই পুরস্কারের জন্য চুড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন। তাঁরা হলেন-টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)প্রদীপ কুমার দাশ (বিপি:৭২৯৫০৮৪৪২) বিপিএম পদক, কক্সবাজার সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফরিদ উদ্দিন খন্দকার (বিপি:৬৮৯৮০৫৩৫৪৮) পিপিএম পদক, টেকনাফ মডেল থানার এসআই (নিরস্ত্র) শরিফুল ইসলাম (বিপি:৮৪০৩০৬৪৩৫৭) পিপিএম পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন। পুরস্কারের জন্য চুড়ান্ত মনোনীতরা আর্থিক সুবিধা পাবেন এবং প্রাপ্ত খেতাব তাঁদের নিজ নিজ নামের সাথে যুক্ত করে ব্যবহার করতে পারবেন। মঙ্গলবার জারীকৃত প্রজ্ঞাপনে কক্সবাজার জেলা পুলিশের একত্রে ৪ জন কর্মকর্তা পুরস্কাররের জন্য মনোনীত হওয়ার খবরে জেলা পুলিশ সুপার অফিস, কক্সবাজার সদর মডেল থানা ও টেকনাফ মডেল থানায় পরস্পর মিষ্টি বিতরন, কুশল বিনিময়, ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোর ধুম পড়ে যায়। বুধবার সকালেও অফিস গুলোতে একই দৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। জেলার দায়িত্বশীল উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ স্বশরীরে ও ফোনে পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত ও অভিনন্দিত করছেন। যেন কক্সবাজার জেলা পুলিশের ‘বৃহস্পতি এখন তুঙ্গে’।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জেলা পুলিশের মুখপাত্র মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন জানান-কক্সবাজার জেলা পুলিশের জন্য এটা একটা প্রশংসনীয় রেকর্ড। যা পুলিশ বাহিনীর জন্য একটা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। পুরস্কার প্রাপ্তির বিষয়ে তিনি বলেছেন-ভাল কাজের যথার্থ মূল্যায়ন হলে, বিশেষ অবদান ও ত্যাগের স্বীকৃতি পেলে দায়িত্বশীলতা ও কর্তব্যপরায়ণতা বেড়ে যায়। কর্মস্থলে দায়িত্বপালনে উৎসাহ ও কর্মউদ্দীপনা সৃষ্টি হয়।
বিপিএম পুরস্কার প্রাপ্তির জন্য চুড়ান্তভাবে মনোনীত হওয়া কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন এ প্রতিবেদকের কাছে মুঠোফোনে তাঁর প্রতিক্রিয়ায় মহান আল্লাহরাব্বুল আলামীনের দরবারে শোকরিয়া জ্ঞাপন করে বলেন-এ পুরস্কার পুরো জেলা পুলিশের অনবদ্য অবদান। তিনি বলেন-জেলা পুলিশের সকল সদস্য সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে সম্মিলিতভাবে আন্তরিকতার সাথে কাজ নাকরলে এ বিশাল অর্জন কোনভাবেই সম্ভব হতোনা। পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন (বিপিএম) জেলা পুলিশের সকল সদস্য, জেলার সকল নাগরিক, অন্যান্য শৃংখল বাহিনী সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিরল এ সম্মানের জন্য তিনি সহ জেলা পুলিশের ৪ জনকে মনোনীত করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম(বার), স্বরাষ্ট্রসচিব, চট্টগ্রাম রেন্ঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক (বিপিএম-পিপিএম), পুলিশ সদর দপ্তরের সকল উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন অকপটে বলেন-জেলার একটি বাহিনী প্রধান হিসাবে আমাকে পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। কিন্তু এ অবদান জেলা পুলিশের সবার।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন আরো জানান-জাতীয় পুলিশ সেবা সপ্তাহ-২০১৯ উপলক্ষে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকাস্থ রাজারবাগ পুলিশ হেডকোর্য়াটারে জাতীয় পুলিশ প্যারেড ও কুচকাওয়াজের সালাম গ্রহন করার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই অনুষ্ঠানেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে আনুষ্ঠানিকভাবে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন, জেলা পুলিশের অপর ৩ জন কর্মকর্তাসহ পুলিশের রাষ্ট্রীয়ভাবে জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত ৩৪৯ জনকে এই গৌরবময় সম্মাননা প্রদান করা হতে পারে বলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসাইন জানিয়েছেন। তিনি জানান-এ বিশাল অর্জন শুধুমাত্র জেলা পুলিশ বিভাগের জন্য নয়, পুরো কক্সবাজার জেলাবাসীর জন্য এটা বিরাট সম্মান ও মর্যাদার বিষয়। তিনি বলেন-ভাল কাজের রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি পাওয়ায় ও যথার্থ মূল্যায়িত হওয়ায় আমরা খুবই খুশী। এ বিরল সম্মান একদিকে, কক্সবাজার জেলা পুলিশের ভাবমূর্তি, নিয়মতান্ত্রিক কর্মে উৎসাহ ও গতিশীলতা বাড়াবে, এবং অন্যদিকে, পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা নিঃসন্দেহে অনেক বৃদ্ধি পাবে বলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসাইন দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন-এধরনের সম্মান পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের যেকোন অপরাধ দমনে ঝুঁকিপূর্ণ ও দূঃসাহসী অভিযান চালাতে উদ্বুদ্ধ করবে। মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন ভবিষ্যতে জেলার যেকোন অপরাধ দমনে সর্বস্থরের জণসাধরণ সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।