মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

কক্সবাজারের লিংকরোড থেকে লাবনী মোড় পয়েন্ট পর্যন্ত সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় ২৮৮ কোটি ৬৯ লক্ষ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার ২৯ জানুয়ারি শেরেবাংলা নগর পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের সম্মেলেন কক্ষে অনুষ্ঠিত নতুন সরকারের একেনেকে’র দ্বিতীয় সভায় এ প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়। পরিকল্পনা মন্ত্রী এম.এ মান্নান একেনেকে’র সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ তথ্য জানান।
পর্যটকদের আরামদায়ক ও নিরাপদ ভ্রমন নিশ্চিত করতে এবং কক্সবাজার জেলা শহরের অসহনীয় যানযট নিরসনকল্পে সরকার এই বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। এ জন্য ‘লিংক রোড-লাবনী মোড় সড়ক (এন ১১০) চার লেনে উন্নীতকরণ’ নামের প্রকল্পটি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ বাস্তবায়ন করবে।
পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি চলতি জানুয়ারি মাস থেকে ২০২১ সালের জুন মাসে শেষ করার জন্য মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে। সুত্র মতে-সম্পূর্ণ রাজস্ব খাতের অর্থায়নে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির অর্থ দিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হব। প্রকল্পটি এডিপি’র বরাদ্দহীনভাবে অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত বছরের ১৬ অক্টোবর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় দেয়া সুপারিশের আলোকে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়। ফলে মঙ্গলবার (২৯ জানুয়ারি) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রকল্পটি উপস্থাপন করলে সেটি অনুমোদন দেয়া হয়।
সূত্র জানায়, কক্সবাজার বাংলাদেশের প্রধান পর্যটন নগরী। প্রতিবছর দেশ বিদেশের পর্যটকরা পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে কক্সবাজারে বেড়াতে আসেন। লিংক রোড-কক্সবাজার প্রধান সড়কটি কলাতলী মোড় হয়ে হোটেল-মোটেল জোন অতিক্রম করে লাবনী মোড়ে এসে শেষ হয়েছে। সড়কটির মোট দৈর্ঘ্য ৮ দশমিক ২০ কিলোমিটার। সড়কটি পর্যটন নগরীর ব্যস্ততম সড়ক, হোটেল-মোটেল জোনের প্রবেশদ্বার এবং কক্সবাজারের অধিকাংশ হোটেল-মোটেল এ সড়কটির দু’পাশে অবস্থিত। ফলে পর্যটকবাহী বিভিন্ন প্রকার যানবাহনের কারণে সড়কে যানজট সবসময় লেগেই থাকে। বর্তমানে সড়কটির প্রস্থ মাত্র ৭ দশমিক ৩০ মিটার। যা ক্রমবর্ধমান যানবাহনের জন্য খুবই অপ্রতুল। সড়কটি ৪ লেনে উন্নীত করা প্রয়োজন। এজন্য এই প্রকল্পের আওতায় ৮ দশমিক ২০ কিলোমিটার সড়ক ২ লেন হতে ৪ লেনে উন্নয়নের লক্ষ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ হতে মোট ১৯৪ কোটি ৩৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৯ সালের জানুয়ারি হতে ২০২১ সালের জুনে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছিল। প্রকল্পটির ওপর বিগত বছরের ২২ এপ্রিল প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। পিইসি সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ মোট ২১৪ কোটি ২০ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে এবং ২০১৯ সালের জানুয়ারি হতে ২০২১ সালের জুনে বাস্তবায়ন উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠনপূর্বক অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায়েছিল। পরবর্তীতে এই পুনর্গঠিত ডিপিপি’র ওপর বিগত বছরের ১৬ অক্টোবর পুনরায় পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় পিইসি সভায় লারপাড়া-ঝিনুক মার্কেট-লাবনী মোড় আঞ্চলিক মহাসড়কটির যে অংশটুকু কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ৪ লেনে উন্নয়নের প্রস্তাব হতে বাদ দিয়ে দিয়েছে-সে অংশটুকু ৪ লেনে উন্নয়নের জন্য লিংক রোড হতে লাবনী মোড় সড়ক চার লেনের উন্নীতকরণ শীর্ষক প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করে সে অনুযায়ী ডিজাইন ও ব্যয় প্রাক্কলনের সুপারিশ করা হয়। সে অনুযায়ী কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাবিত লারপাড়া-ঝিনুকমার্কেট-লাবনী মোড় আঞ্চলিক মহাসড়কটির বাদ পড়া ১ দশমিক ৪৪ কিলোমিটার অংশ ২ লেন হতে ৪ লেনে উন্নীতকরণের প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ডিপিপি পুনর্গঠন করেছিল। ফলে প্রস্তাবিত সড়কের মোট দৈর্ঘ্য দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৬৪ কিলোমিটার। প্রকল্পের প্রধান কাজগুলো হচ্ছে-শূন্য দশমিক ৫৪ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ, ১ কোটি ১৩ লাখ ৫০ হাজার ঘন মিটার সড়ক বাঁধে মাটির কাজ, ৯ দশমিক ৬৪ কিলোমিটার সার্ফেসিং, ৪ লাখ ৮৮ হাজার সসার ড্রেন নির্মাণ, ৭ দশমিক ৪৪ কিলোমিটার রোড মিডিয়ান নির্মাণ, ১০৫ মিটার আরসিসি বক্স কালভার্ট প্রশস্তকরণ এবং ৪ লাখ ২৬ হাজার ৪০ হাজার বর্গমিটার রোড মার্কিং করা হবে। সুত্র জানিয়েছে, একনেকে’র মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত সভায় ১৬ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে উল্লেখিত প্রকল্পটি সহ মোট ৯ টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অনুমোদিত ৯ টি প্রকল্পের মধ্যে এটি সহ ৫ টি নতুন প্রকল্প ও ৪ সংশোধিত পুরাতন প্রকল্প রয়েছে।