এম. মনছুর আলম, চকরিয়া: 

১৯৮৫-২০১৮সাল তিন দশক রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির প্রভাবশালী সদস্য আমিনুর রশিদ দুলাল। দীর্ঘ ৩৩বছরের রাজনীতি জীবন তাঁর। চকরিয়া থেকে ছাত্র রাজনীতির মধ্যে বেড়ে উঠে চট্টগ্রাম সিটি কলেজে সংগ্রাম মুখর তাঁর পথ চলা। ছাত্র রাজনীতির জীবন শুরু হয় প্রথম জেল-জুলুমের অভিজ্ঞতা নিয়ে।

১৯৮৭সালের ৫ডিসেম্বর স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে চকরিয়া উপজেলা পরিষদ অবরোধে মিছিল করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হন তিনি। এক মাস কারাভোগ জীবন পার করতে হয়। ওই মিছিলে ছাত্রনেতা দৌলত খান পুলিশের গুলিতে শহিদ হন। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের ত্যাগী নেতা আমিনুর রশিদ দুলাল আসন্ন চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হচ্ছেন।

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আমিনুর রশিদ দুলাল গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরেন নিজের রাজনীতি জীবনের ‘সুসময়-দুঃসময়ের কথা’। এই রাজনৈতিক নেতার জীবন ছিল নানা প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতায় ভরপুর। তবুও তিনি সব বাধাকে জয় করে হয়েছিলেন নেতা।

১৯৬৯সালের কক্সবাজার জেলা চকরিয়া পৌরসভার কাহারিয়া ঘোনার আব্দুল হক মাষ্টার পাড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নেন ধুলো-বালি, মাটি ও মানুষের নিবিড় সান্নিধ্যে শৈশব, কৈশোর বেড়ে উঠেন আমিনুর রশিদ দুলাল। পিতা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মরহুম আব্দুর রাজ্জাক মেম্বার।

তিনি স্বাধীনতা পরবর্তি প্রথম ইউপি নির্বাচনে চিরিঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন। মাতা আলেয়া বেগম। তাঁর মাতামহ মরহুম এস কে শামসুল হুদা ছিলেন আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক।

স্কুল জীবন পার করেন কাহারিয়াঘোনা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে চকরিয়া কেন্দ্রীয় উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৮৬সালে ওই বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। স্কুল জীবনে ১৯৮৫ সালে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৮৬সালে চকরিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক ও চকরিয়া কলেজ ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক ছিলেন।

কলেজের প্রথম বছরেই সেখানের পাঠ না চুকিয়ে ১৯৮৭সালের ৫ডিসেম্বর স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। কেটেছেন জেলও। আমিনুর রশিদ দুলাল চকরিয়া কলেজে ছাত্র থাকা অবস্থায় ১৯৮৮সালে বৃহত্তর চকরিয়া-পেকুয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ১৯৮৯সালে ওই কলেজ এইচএসসি পাশ করার পর চট্টগ্রাম সরকারী সিটি কলেজ ভর্তি হন।

স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সফল ভূমিকা রাখার কারণে ১৯৯১সালে সরকারী সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এসময় বিএনপি-জামায়াত বিরোধী সফল আন্দোলন সংগঠিত করেন। লেখাপড়া শেষ করে ১৯৯৪সালে সিটি কলেজ থেকে বের হয়ে লাখ টাকা বেতনের চাকুরি পেলেও তা করেনি।

১৯৯৬সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে চট্টগ্রাম ছেড়ে চকরিয়ায় এসে পৌরসভা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০১সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে কক্সবাজার জেলা যুবলীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পরবর্তিতে ২০০৪সালে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

২০০৩সালে জেলা যুবলীগের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে বৃহত্তর চকরিয়া উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়কের দায়িত্ব নেন। তখন বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে দলের কঠিন সময়ে সব নেতাকর্মী এলাকা ছাড়া হলে যুবলীগের রাজনীতির হাল ধরেন। জেলা যুবলীগের পাশাপাশি বৃহত্তর চকরিয়া উপজেলা যুবলীগকে সুসংগঠিত করেন। ১/১১ সময় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করা হলে তাঁর মুক্তির আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন।

আমিনুর রশিদ দুলাল রাজনীতির পাশাপাশি এলাকায় শিক্ষার প্রসারসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাজে জড়িত রয়েছেন। তিনি সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট চকরিয়া উপজেলা শাখার আহ্বায়ক। চকরিয়া পৌরশহরে থানা সেন্টার এলাকায় বর্ণমালা একাডেমী নামের একটি বেসরকারী স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ওই স্কুলের সভাপতি।

এছাড়াও অরগনাইজেশন ফর সোশ্যাল এন্ড এনভাইরনমেন্টাল ডেভেলপমেন্ট (ওসেড) নির্বাহী পরিচালক। রেড ক্রিসেট সোসাইটির আজীবন সদস্য ও চকরিয়া রোগী কল্যাণ সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক। চিরিঙ্গা বহুমুখি সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

নানা প্রতিকূলতার কারণে চকরিয়া উপজেলা বছরের পর বছর অবহেলিত। চকরিয়ায় আপামর জনগণ তাঁর ইষ্পাত দৃঢ় ত্যাগের কারণে দুলালকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দেখতে চান। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে চকরিয়ার অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের কাঙ্খিত স্বপ্ন নিয়ে চকরিয়া বাসীকে সাথে নিয়ে উন্নয়নের ধারাকে এগিয়ে নিতে চাই দুলাল।

তিনি স্বাধীনতার ৪৫বছর পর চকরিয়া আওয়ামী লীগের নির্বাচিত এমপি জাফর আলমের উন্নয়ন পরিকল্পনা ও সমৃদ্ধ চকরিয়া গড়ে তোলার জন্য তাঁর সঙ্গি হতে চাই। তিনি নির্বাচিত হয়ে চকরিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বর্তমান এমপি জাফর আলমের অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করবেন।

প্রকৃত সেবাদানের মানসিকতা নিয়ে তিনি চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা ঘোষণা করায় সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশা ও দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের নাগরিক সমাজ তাঁকে আন্তরিকভাবে উৎসাহ প্রদান করছেন। কারণ তিনি চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ক্লিন ইমেজের প্রার্থী হিসেবে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন।

কক্সবাজার-১ আসনের সদস্য সংসদ জাফর আলমের ¯েœহতুল্য আমিনুর রশিদ দুলাল চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে চকরিয়া উপজেলা পরিষদকে সত্যিকার অর্থে সেবামূলক ও জনবান্ধব প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। চকরিয়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য় ফিরিয়ে আনা, উপজেলাবাসীর জলবদ্ধতা নিরসনসহ স্থায়ী বেরিবাঁধ নির্মাণ করে তাঁর পরিকল্পনায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সর্বপ্রথম তিনি এসব কাজ বাস্তবায়ন করবেন। তাঁর সাথে সাথে চকরিয়াকে ক্লিন-গ্রিন শহর ও শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ বান্ধব, আধুনিক এবং নান্দনিকতায় পরিনত করাই তাঁর মূল লক্ষ্য।