শাহিদ মোস্তফা  শাহিদ, সদর:
আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী কক্সবাজারের  ঈদগাঁও ফুলেশ্বরী নদী এখন দখল আর দূষণে মুমূর্ষু হয়ে পড়েছে। পার্বত্য বান্দরবানের পুর্ব থেকে উৎপত্তি হয়ে এ নদীটি ঈদগড়, ঈদগাঁও, ইসলামাবাদ, জালালাবাদ ও পোকখালী ইউনিয়নের বুক চিরে প্রবাহিত হয়ে মহেশখালী চ্যানেলে পতিত প্রাচীন ফুলেশ্বরী নদী বর্তমানে ঈদগাঁও নদী দখল দূষণের থাবায় মুমূর্ষু হয়ে পড়েছে। নদী খেকোদের করাল গ্রাসে এ নদী নাব্যতা হারিয়ে মরা খালে পরিনত হওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়,নদীর দু’কুল জুড়ে গড়ে উঠেছে ঘরবাড়ি, দোকানপাঠ,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দখল -বেদখলের  দোলা চলে মৃত প্রায় নদীর চেরচেনা রূপ।
অন্যদিকে জেগে উঠা চর যেন ধুঁ ধুঁ বালি।অনেক জায়গায় যানবাহনসহ লোকজন হেঁটে পার হচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও নদীর তলদেশ ভরে ফসলের ক্ষেতে পরিনত হয়েছে।
প্রতি বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে ঢলের পানির সঙ্গে নেমে আসা পলিতে ঘেরাবেড়া দিয়ে দখল করে নিয়েছে দখলবাজরা।নদীর তলদেশের অনেকাংশে পানি শূন্য এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি থাকার পরও বালি ব্যবসায়ীরা ড্রেজার মেশিন দিয়ে নির্বিচারে বালি উত্তোলন করে দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধ বালি ব্যবসা।যদিও জড়িতরা বলছে বালি গুলো রেল লাইন প্রকল্পের কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
এছাড়া ঈদগড় সড়কের ভোমরিয়া ঘোনা পয়েন্টে বসানো হয়েছে ১৫ টির মত অবৈধ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে প্রতিনিয়ত সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে বালি খেকোরা।একদিকে দখলের প্রভাব অপরদিকে খননের অভাব। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে ঈদগাঁও নদীটি।
নদী তীরবর্তী ঈদগড়,ঈদগাঁও, ইসলামাবাদ, জালালাবাদ, পোকখালী, চৌফলদন্ডীর বিস্তৃত এলাকাজুড়ে এই নদীর পানি সেচের মাধ্যমে বোরো আবাদ করে থাকে। নদীর নাব্যতা হারিয়ে যাওয়ায় প্রতিবছর উপরোক্ত এলাকার হাজার হাজার হেক্টর বোরো জমির অধিকাংশই সংকট দেখা দেয়ার কারনে  অনাবাদী থেকে যায় বলে জানান স্থানীয় কৃষকরা।
একজন বয়োবৃদ্ধ মুরুব্বি জানান, এককালে এই নদীতে শীত, বর্ষা -সব মৌসমে অথৈ পানি থাকত। রঙ বেরঙের পালতোলা নৌকা চলাচল করত। জেলা শহরের সাথে যোগাযোগ ও পন্য আনা নেয়ার জলপথ হিসাবে ব্যবহার হতো। হাজার হাজার কৃষকের পণ্য এ নদী দিয়ে হাট বাজারে নেয়া হত।বর্তমানে নদী খেকোদের দখলে থাবা এর সাথে কর্তৃপক্ষের চরম অবেহলা ও উদাসীনতার কারনে সেই চিত্র এখন কল্পকাহিনীতে পরিনত হয়েছে।
এছাড়া নদীর দু’কুল জুড়ে গড়ে উঠেছে একাধিক পোল্ট্রি ফার্ম। এসব ফার্মের মুরগীর বিষ্ঠাসহ সব ময়লা আবর্জনা সরাসরি নদীতে পড়ছে।ফলে প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে নদীর পরিবেশ। অন্যদিকে নদীর তীরবর্তী গড়ে ওঠা দোকান,হোটেল রেস্তেরার সমস্ত ময়লা আবর্জনাও পেলা হচ্ছে নদীতে।
ঈদগাঁওয়ের সাংবাদিক কাফি আনোয়ার বলেন, ঐতিহ্যবাহী এবং জনগুরুত্বপূর্ণ নদীটি কয়েক বছরে দখলে থাবায় একেবারে মুমূর্ষু হয়ে পড়েছে। মাইলের পর মাইল জুড়ে গড়ে উঠেছে অবৈধ ঘরবাড়ী। ফলে নদীটি এখন ভরাখালে পরিনত হতে চলছে।দ্রুত দখল উচ্ছেদ পূর্বক নদী খনন করা না গেলে হাজার বছরের ঐতিহ্য ঈদগাঁও নদীটি মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।