আলমগীর মানিক,রাঙামাটি :

সংস্কারপন্থী জেএসএস এর কর্মীকে গুলিকরে হত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস নেতাকর্মীদের আসামী করার প্রতিবাদে রাঙামাটি তথা দেশের সবচেয়ে বড় উপজেলা বাঘাইছড়িতে অনির্দিষ্ট্যকালের হাট-বাজার বয়কটে চরম দূর্ভোগে পড়েছে লক্ষাধিক প্রার্ন্তিক বাসিন্দা। শীত মৌসুমের এই সময়টাতে ব্যাপকহারে উৎপাদিত কৃষিজপণ্য নিয়ে বিপাকে পড়েছে কয়েক হাজার জুমিয়া কৃষক পরিবার। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি জেএসএস’র ডাকে উপজেলাধীন নয়টি বাজারের সবগুলোতেই বয়কট অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, আঞ্চলিকদলের বয়কট কর্মসূচীর ফলে বাঘাইছড়ি উপজেলাধীন ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে নাগরিক সেবাসহ জনসেবামূলক কর্মকান্ডগুলো।

এদিকে, বাঘাইছড়ি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নাদিম সারোয়ার জানিয়েছেন, আমরা এই ধরনের ঘটনা থেকে উত্তরনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে আলোচন চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, বর্তমানে বাজারগুলোতে স্থানীয় জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আগের চেয়ে সামান্য কম। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই আমরা সকল স্তরের জনপ্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগ করে একটি সুষ্ঠ সমাধানে আসার চেষ্ঠা অব্যাহত রেখেছি।

চলতি মাসের গত ৪ জানুয়ারী সন্ধ্যায় বাঘাইছড়ি উপজেলা সদরের বাবু পাড়া এলাকার বাসিন্দা প্রভাত কুমার চাকমার বাসায় অবস্থানরত বসু চাকমা নামে একজনকে গুলি করে হত্যা করে অজ্ঞাতনামা পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা। নিহত বসু চাকমা সংস্কারপন্থী জেএসএস এর সক্রিয় সদস্য। এই ঘটনায় ঘরের মালিক প্রভাত কুমার চাকমা বাদি হয়ে ‘আগ্নেয়াস্ত্র সহকারে গৃহে প্রবেশ করত: খুন করার’ অভিযোগে একটি মামলা (মামলা নং ০২/০২) এবং বাঘাইছড়ি থানার এসআই হিরু বড়–য়া কর্তৃক ‘অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র গুলি দখলে রাখার’ অভিযোগে আরেকটি মামলা (মামলা নং ০৩/০৩) দায়ের করা হয়। বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জেএসএস নেতা বড় ঋষি চাকমাসহ ২৭জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়।

এদিকে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস এর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে দায়েরকৃত মামলাগুলোতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে জেএসএস এর নেতাকর্মীদেরকে আসামী করা হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রেরিত এক প্রেসবার্তার মাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে গত ১৬ জানুয়ারী থেকে ৪৮ ঘন্টার অবরোধ কর্মসূচী পালন করা হয়। এই কর্মসূচীর পরে আবারো জেএসএস এর ডাকে অনির্দিষ্ট্যকালের বাজার বয়কটের কর্মসূচী পালন করা হচ্ছে। এদিকে এই ধরনের কর্মসূচীর ফলে চরম দূর্ভোগে পড়েছে বাঘাইছড়ির লক্ষাধিক মানুষ। মামলার ফলে উপজেলা চেয়ারম্যান পালিয়ে যাওয়ায় উপজেলা পরিষদসহ ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দারা।

উপজেলার খেদারমারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তোষ কুমার চাকমা জানিয়েছেন, বাজার বয়কট কর্মসূচীর ফলে আমার এলাকার হাজারো বাসিন্দা তাদের উৎপাদিত কৃষিজপণ্য হাটে তুলতে পারছেনা। তিনি জানান, এই ধরনের অচলাবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই এলাকাগুলোতে দুর্ভিক্ষ দেখা দিবে।

এদিকে, বাঘাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুনীল বিহারী চাকমা জানিয়েছেন, বসু হত্যা মামলায় উপজেলা চেয়ারম্যানকে আসামী করায় তিনি পলাতক রয়েছেন। একারনে উপজেলায় কোনো কাজই করতে যেতে পারছেননা ইউপি চেয়ারম্যানরা। তার ইউপিতেও একই অবস্থা।

সুনীল বিহারী বলেন, সংশ্লিষ্ট্য প্রশাসনের উচিত সকলের সাথে কথা বলে একটি সুষ্ঠ সমাধান করে এই ধরনের অচলাবস্থা থেকে উত্তরনের পথ খুঁেজ বের করা।

এদিকে জেএসএস এর বাঘাইছড়ি উপজেলার সহ-সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিব চাকমা জানিয়েছেন, বসু চাকমা হত্যাকান্ডটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এই ধরনের ঘটনার সাথে জড়িত যেই হোক তাকে আইনের আওতায় আনার দাবি আমরাও করছি। কিন্তু সম্পূর্ন রাজনৈতিক কারনে জেএসএস এর নেতাকর্মীদের আসামী করা হয়েছে। এ কারনেই জনগণের চাপে আমরা রাজনৈতিক কর্মসূচী দিতে বাধ্য হয়েছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের দাবি আদায় নাহলে আমরা আরো কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করবে আমাদের দল।

এদিকে বাঘাইছড়ি থানার ওসি তদন্ত জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, বসু চাকমা হত্যা মামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাকে কেন্দ্র করে অহেতুক ঝামেলা সৃষ্টি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, একটি হত্যা মামলাকে কেন্দ্র করে তিন মাস সময়ের মধ্যে ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু একমাসের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার দাবিটি মোটেও সম্ভব নয়। মামলার পর এখনো পর্যন্ত একজন সাক্ষী পাওয়া যায়নি মন্তব্য করে জনাব জাহাঙ্গীর বলেন, পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেফতার করেনি বা অহেতুক হয়রানীও করেনি। কিন্তু তারপরেও একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে একটি মহল জনদূর্ভোগ সৃষ্টি করছে। তিনি জানান, বসু হত্যার ঘটনায় অস্ত্রধারী যারা তাদের বিরুদ্ধেই তদন্ত চলছে এবং হত্যাকারীদেরই আটক করা হবে।