হাফেজ মুহাম্মদ আবুল মঞ্জুর

ছোটবেলায় পড়েছি..

“আমাদের ছোট গাঁয়ে ছোট ছোট ঘর
থাকি সেথা সবে মিলে নাহি কেহ পর।
পাড়ার সকল ছেলে মোরা ভাই ভাই
একসাথে খেলি আর পাঠশালে যাই।”

আনন্দাবহে তরুণ-যুবকদের এমনই ঐক্য ও সম্প্রীতির কিছু দৃশ্য চোখে পড়ে। ঐক্য, সংহতি ও ভ্রাতৃত্ববোধের এসব দৃষ্টান্তে আমরা আশান্বিত হই যে, আমাদের নবপ্রজন্ম উদ্যোগী হলে এলাকার সকল যুবক-তরুণদের এক প্লাটফরমে সমবেত করা সম্ভব। অতএব তারাই পারবে ঐক্যের এই প্রয়াসকে আদর্শিকধারায় এগিয়ে নিতে। সম্মিলিত, সমন্বিত প্রচেষ্টায় আলোকিত সমাজবিনির্মাণে এই উদ্যমী তরুণ-যুবকেরাই হতে পারে একনিষ্ঠ, সাহসী সৈনিক। তবে ঐক্যের এই প্রয়াস হতে হবে একমাত্র রাসুলে কারীম স. এর আদর্শের আলোকে। তখনই তা হবে উভয় জগতের জন্য কল্যাণকর ও নির্মল আনন্দের ঝর্ণাধারা। নিছক মাত্র বিনোদনের নামে আনন্দ ভ্রমনকে কেন্দ্র করে বা জাগতিক কোন স্বার্থকে উপলক্ষ করে একত্রিত হওয়ার মধ্যে সাময়িক তৃপ্তি ও আনন্দ অনুভূত হলেও তা স্থায়ীভাবে সামাজিক, মানবিক সর্বোপরি পরকালীন কোন কল্যাণ বয়ে আনবেনা। কারণ আমাদের পরিচয় মুসলিম। আমাদের রয়েছে স্বতন্ত্র পরিচিতি, স্বকীয়তা ও আদর্শিক কর্মসূচী। তাই আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপই হতে হবে আল্লাহ তা’আলার হুকুম ও হযরত রাসুলে কারীম স. এর আদর্শের আলোকে উদ্ভাসিত। স্মরণ রাখতে হবে মুসলমানদের কোন কাজই ইবাদতের বাইরে হতে পারেনা। আর আল্লাহপাকের বিধান ও রাসুলুল্লাহ স. এর সুন্নাত মোতাবেক হলেই সকল কাজ ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে। আনন্দ, বিনোদন ও ভ্রমনের ক্ষেত্রেও সেই দৃষ্টিভঙ্গিকে সমুন্নত রাখতে হবে। মহান আল্লাহর সৃষ্টিরাজির সৌন্দর্য উপভোগ করে বিমুগ্ধ চিত্তে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় ও ইবাদত -বন্দোগীতে মনোনিবেশ করাই সফরের প্রকৃত লক্ষ্য। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সেজন্যই সফর করার নির্দেশ দিয়েছেন। তখন তা ইবাদত হিসেবেও পরিগণিত হবে। অনুভূত হবে আত্মার নির্মল প্রশান্তি।
সেহেতু আমাদের আনন্দ ভ্রমন যাতে কোনভাবেই ইসলামী সভ্যতা সংস্কৃতির বিপরীত স্রোতে গা ভাসানোর মত না হয় সেদিকে সর্বোচ্চ দৃষ্টি রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে তারুণ্যের এই শক্তি, সামর্থ্য ও সময় আল্লাহর দেয়া নিয়ামত। এই নিয়ামতের অপব্যবহার কোনভাবেই কাম্য নয়। আর নিয়ামতের সদ্ব্যবহার করে ইসলামী নীতি-নির্দেশ মেনে যাতে ঐক্যের প্রয়াসে আনন্দের আবহ তৈরী করা যায় সেই লক্ষ্যে আগামীর জন্য কিছু প্রস্তাবনা পেশ করছি।

০১. জুমাবার যেহেতু আল্লাহর ইবাদতের একটি রিজার্ভ দিন। এই দিনটির রয়েছে বহু ফযীলত ও তাৎপর্য। রয়েছে বিশেষ কিছু করণীয়। তাই আনন্দ ভ্রমনের তারিখ নির্ধারণে সুবিধাজনক অন্য কোন দিন বেছে নেয়া। যদি জুমাবারে যেতেই হয় কোনভাবেই যাতে দিনটির পবিত্রতা লংঘিত না হয় এবং ও জুমাও আদায়ের সুব্যবস্থা থাকে সে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে লক্ষ্য রাখা।

০২. বিনোদিত ও আত্মতৃপ্তিলাভের জন্য নাচ-গানের পরিবর্তে হামদে বারী তা’আলা , নাতে রাসুল স., ইসলামী ও দেশাত্মবোধক সঙ্গীত পরিবেশন ও শ্রবনের ব্যবস্থা করা।

০৩. ঐক্য ও সম্প্রীতির এই প্রয়াসকে আরো ইতিবাচক, প্রাণবন্ত ও কার্যকর করার জন্য সক্ষম ও আগ্রহী মুরুব্বীগণসহ সচেতন এলাকাবাসীর স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণের পদক্ষেপ নেয়া। এতে করে সাম্য, মৈত্রী ও ঐক্যের সেতুবন্ধন আরো সুসংহত হবে। বাড়বে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও মমত্ববোধ।

০৪. ঐক্যের বন্ধনকে স্থায়ীকরণ ও মানবকল্যাণে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে কার্যকর আরো কিছু পদক্ষেপ নেয়া। যেমন যে ভাবে আনন্দ ভ্রমনের জন্য সমন্বিত আর্থিক অংশগ্রহন ও উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয় সেভাবে এলাকার যে কোন উন্নয়ন, সংস্কার, শিক্ষার অগ্রগতির জন্যও ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে এগিয়ে আসা। এলাকার অসহায়, এতিম লোক বা পরিবারের প্রতি সহযোগিতার হাত প্রসারিত করা। এতিম, অসহায় ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের পড়া-লেখায় সম্মিলিতভাবে সহযোগিতা করা। সর্বোপরি চুরি, ডাকাতি, মাদক, অন্যায়- অনাচারসহ যাবতীয় অপরাধ নির্মূলে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে এসে আলোকিত সমাজবিনির্মাণ করা।
আশা করি তরুণেরা নিজেদের মেধা, প্রজ্ঞা ও আদর্শিক চিন্তার আলোকে বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবে। শামিল হবে আদর্শিক অভিযাত্রায়।

“নদী যেমন দুই কুলে তার
বিলিয়ে চলে জল
ফুটিয়ে তুলে সবার তরে
শস্য ফুল ও ফল।
তেমনি করে মোরাও সবে
পরের ভাল করব ভবে
মোদের সেবায় উঠবে জেগে
এই ধরণী তল।”