এম.আর মাহমুদ

সরকারের এক সময়ের প্রভাবশালী অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আল মুহিত। দক্ষতার সাথে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে দুই পিরিয়ড দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি। বর্তমান মন্ত্রীসভায় স্থান পায়নি হয়তো বার্ধক্যজনিত কারণে। মন্ত্রী থাকাকালে ঢাকা থেকে নিজের নির্বাচনী এলাকা সিলেট গেলে বিমান বন্দরে নেতাকর্মী ভক্ত-অনুরক্তদের অভাব থাকত না। শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত থাকত বিমান বন্দর এলাকা। অথচ আজ তিনি বড় একা।

সাবেক অর্থমন্ত্রী মুহিত সাহেব গত শুক্রবার ঢাকা থেকে সিলেট বিমান বন্দরে গিয়ে বিমান থেকে নেমে হুইল চেয়ারে উঠা পর্যন্ত একজন নেতাকর্মীও তার পাশে ছিল না। হয়তো এমন অবস্থা হয়েছে তিনি ক্ষমতাধর নয় বলে। তিনি শুধু আওয়ামীলীগ আমলে অর্থমন্ত্রী ছিলেন না। এরশাদ জামানায়ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন। শহীদ মুনির চৌধুরীর একটি উক্তিটি বার বার মনে পড়ে “মরে গেলে পঁচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়” তারই বাস্তব প্রতিফলন সাবেক অর্থমন্ত্রী মুহিত সাহেবের ক্ষেত্রে অবলীলায় বলা চলে।

এক সময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন সাহেবের একটি কথা বার বার মনে পড়ে। এরশাদ পতনের পর একজন গণমাধ্যম কর্মী শাহ মোয়াজ্জেম সাহেবের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, “লিডার আপনার বাসায় আগে লোকজনের ভিড় থাকত, এখন কাউকে দেখছি না কেন? তিনি জবাবে বলেছিলেন, ক্ষমতায় যখন ছিলাম তখন কারো না কারো উপকার করতে পারতাম। এখন কারো উপকার করতে পারি না বলে কেউ আসছে না।” তিনি আক্ষেপ করে বলেছিলেন, “নিষ্ফলা গাছে বানরও চড়ে না” অনুরূপ অবস্থা সাবেক অর্থমন্ত্রী মুহিত সাহেবের ক্ষেত্রে হচ্ছে। বর্তমানে ওই আসনের তার আপন ভাই এম.পি হয়েছেন। তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। হয়তো এখন মুহিত সাহেবের নেতাকর্মী ও ভক্ত-অনুরক্তরা ভাইয়ের পিছনে ভিড় জমাবে। ভাই যখন ক্ষমতায় ছিল না তখন তার পাশে কেউ থাকত না। কি বিচিত্র দেশ! “যেখানে মধু নেই, সেখানে মাছির কোন স্থান নেই”।

ছাত্রজীবনে আমার এক প্রিয় শিক্ষক প্রায় সময় বলতেন, মাছি একমাত্র পতঙ্গ যার চোখ মাথার উপরে। মাছিই একমাত্র পতঙ্গ বিষ্টার উপরেও বসতে পারে, মধুর উপরেও বসতে পারে। বর্তমানে আমাদের দেশে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী মাছির মতই হয়ে গেছে। বিনয়ের সাথে একটি কথাই বলতে চাই আজকে যারা ক্ষমতায় তারাও একদিন সাবেক অর্থমন্ত্রী মুহিত সাহেবের মত ক্ষমতাহীন হতে পারে। সুতরাং কোন যোগ্য ও গুনীজনকে উপেক্ষা করতে নেই।

যে জাতি জ্ঞানী ও যোগ্য জনকে সম্মান দিতে জানেনা, সে দেশে জ্ঞানী ও গুনিজনের জন্মও হয় না। রাজনীতিতে জ্ঞানী ও গুনী জনের কদর দিন দিন কমছে। ক্ষমতায় থাকলে সম্মান পাবে, ক্ষমতা হারালে কেউ পাশে থাকবেনা। যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। ছোট একটি শিক্ষনীয় বিষয়ের অবতারনা করে আমার লেখাটি শেষ করব- ইরাকের প্রতাপশালী শাসক সাদ্দাম হোসেনের ফাঁসি হয়েছিল ঈদের রাতে। ওই সময় ইরাক জুড়ে শৈত্য প্রবাহ চলছিল। শীতে কাবু সাদ্দাম হোসেন কাঁপতে ছিল। এমন সময় এক কারা রক্ষীকে বলল “আমার কোটটি নিয়ে আস, কারা রক্ষী বিনয়ের সাথে বললেন, স্যার ক’মিনিট পরে আপনার ফাঁসি হবে, কোর্ট গায়ে দিয়ে লাভ কি? তখন লৌহ মানব সাদ্দাম হোসেন বলেছিলেন টেলিভিশনের পর্দায় আমার কম্পন দেখলে ইরাকবাসী ভিত হয়ে পড়বে এবং বলবে আমি ফাঁসির ভয়ে কাঁপতেছি, আমি ফাঁসিতে ঝুলে প্রান দিতে ভয় করিনা, কিন্তু আমার দেশের জনগণ ভিত হয়ে বেঁচে থাকবে তা আমি চাইনা, কারন আমরা বীরের জাত”। অতএব কোন সম্মানী ব্যক্তিকে অসম্মানিত করা ক্ষমতা না থাকলে ধারে পাশে কেউ উকি না দেওয়া, রাজনৈতিক নেতাদের জন্য অশনি সংকেত। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের মতে, তারা ডুবন্ত সূর্যকে পুঁজা করেনা।  অতএব মন্তব্য করার কিছু নেই।