থেমে নেই বাঁকখালী দখল

প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারী, ২০১৯ ১০:১৮ , আপডেট: ১৮ জানুয়ারী, ২০১৯ ১০:২০

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে


ফাইল ছবি

শিপন পাল :
অবৈধ দখল থেকে থামানো যাচ্ছে না বাঁকখালীকে। বার বার দখলের কবলে পড়ছে বাঁকখালী। শহরের ৬নং জেটিঘাট, কস্তুরাঘাট, নুর পাড়া, নুনিয়ারছড়া, টেকপাড়া, হাঙ্গর পাড়া, ফিশারীঘাট এলাকা সংলগ্ন বাঁকখালী নদীর তীর দখল হয়ে গেছে অনেক আগেই। বাঁকখালীর তীর ঘেঁষে যেসব স্থানে আগে নৌযানের ঘাটি ছিল এখন তা সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে। ওই স্থানে মাটি ভরাট করে তৈরি করা হয়েছে ঘরবাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনা। এদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এসব দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার নিয়ম থাকলেও কর্তৃপক্ষের নিরবতায় বার বার অবৈধ দখল থেকে বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না বাঁকখালীকে। দখলের প্রাথমিক অবস্থায় এসব অবৈধ দখলকারীদের উচ্ছেদের উদ্যোগ না নেয়ায় পরবর্তীতের এদের উচ্ছেদ করতে প্রশাসনকে হিমশিম খেতে হয় বলে ক্ষোভ রয়েছে কক্সবাজারবাসীর।
এদিকে বাঁকখালী নদী বর্তমানে একটি বর্জ্য ফেলার ডাম্পিং স্টেশনে পরিণত হয়েছে। আগেই এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট আপত্তির কারণে শহরের উত্তর নুনিয়ারছড়া এলাকায় ডাম্পিং স্টেশনের জন্য নির্ধারিত জমি বাতিল হয়ে যায়। পরে রেললাইন প্রকল্পে জমি বরাদ্দ হলে বাতিল হয়ে যায় চেইন্দায় নির্ধারিত ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণ কাজ। অন্যদিকে বিভিন্ন অভিযোগে বর্তমানে স্থগিত রয়েছে দক্ষিণ মিঠাছড়িতে নির্ধারিত ডাম্পিং স্টেশন (বর্জ্য ফেলার স্থান) নির্মাণ কাজ।
এভাবে শহরের টেকপাড়া, নুর পাড়া, হাঙ্গরপাড়া, পেশকার পাড়া, কস্তুরাঘাট এলাকা, নতুন বাহারছড়া এলাকা, ৬নং জেটিঘাট সহ শহরের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট বর্তমানে পৌরসভার বর্জ্য ফেলার অন্যতম স্থানে পরিণত হয়। এসব জায়গায় এখনো নিয়মিত বর্জ্য ফেলা হয়। এই সুযোগকে কাজেও লাগাচ্ছে স্বার্থন্বেষী সুবিধাবাদীরা। তারা এসব বর্জ্যরে উপর পুনরায় মাটি ভরাট করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করছে। এতে দৈনন্দিন ভরাট হচ্ছে বাঁকখালী নদী। সম্প্রতি কক্সবাজার পৌরসভা এসব অবৈধ দখলদারদের চিহ্নিত করে ১৩৯ জনের তালিকা তৈরি করেছে। এখন এসব অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রশাসনকে। সবমিলিয়ে বাঁকখালী নদী বর্তমানে দখলদারদের জন্য প্রিয় হয়ে উঠেছে।
এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অনেক প্রভাবশালী বাঁকখালীর কুল দখলের মাধ্যমে স্থাপনা নির্মাণ করে মাসিক ভিত্তিতে ভাড়া আদায় করছেন। সম্প্রতি জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মোঃ আতাহারুল ইসলাম ৬নং জেটিঘাট পরিদর্শন করেছিলেন। ওই সময় তিনি বাঁকখালীর তীরে অবৈধভাবে দালান ও স্থাপনা নির্মাণের দৃশ্য দেখে উদ্বেগও প্রকাশ করেন। নদী দখল করে স্থাপনা নির্মাণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু উচ্ছেদতো দূরের কথা উপরন্তু নতুন করে স্থাপনা নির্মিত হওয়ায় পরিবেশ যে কতটা সংকটাপন্ন তা দৃশ্যমান।
কক্সবাজার সোসাইটির সভাপতি কমরেড গিয়াস উদ্দিন জানান, সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) বাঁকখালী বর্জ্য ফেলার উপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে রীট করেন। ৮৩২৫/২০১৪ ইং রীট পিটিশন শুনানী শেষে বাঁকখালীতে বর্জ্য ফেলার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত। বাঁকখালী নদীর সাথে লাগোয়া শহরের কয়েকটি পয়েন্ট সরেজমিন পরিদর্শন করলে সহজে বুঝা যায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা মানা হচ্ছে কিনা। এমন অবস্থা বাঁকখালী নদী কক্সবাজারের মানচিত্র থেকে তুলে ফেলতে বেশিদিন সময় লাগবে না। বাঁকখালী নদীর এরূপ অবস্থা ভবিষ্যতে কক্সবাজারের সুষ্ঠু পরিবেশকে বিপন্ন করে তুলবে।
তিনি আরও জানান, বাঁকখালীর নদীল নাব্যতা আগের মতো ফিরিয়ে আনতে ২০৪ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছি। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বাঁকখালী নদী কিছুটা হলেও আগের স্থানে ফিরে আসবে বলেও জানানো হয়েছিল। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে এখনো থেমে নেই বাঁকখালী ভরাট। ভরাট করা হচ্ছে তা চোখে পড়ার মতো। এসব ভরাট প্রকল্প বন্ধ করা না গেলে সরকারের মহৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হবে না। অন্যদিকে কক্সবাজার শহর সহ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের বসবাসকারীরা দূর্ভোগের শিকার হবে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বাঁকখালী নদী হতে অবৈধ দখল উচ্ছেদ বিষয়ক সভা বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এতে বাঁকখালী নদী হতে অবৈধ দখল উচ্ছেদে অগ্রগতি পর্যালোচনাসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়।
জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে ওই অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা এবং সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: সবিবুর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট অনেকে বক্তব্য রাখেন।
জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সভায় বাঁকখালী নদীর নাব্যতা ও সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।