তাজুল ইসলাম পলাশ , চট্টগ্রাম ব্যুরো:

ক্যান্সারের মত জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য একমাত্র রেডিওথেরাপি মেশিনটি অচল হয়ে যাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা। নিরুপায় হয়ে অনেকে চিকিৎসা সেবা নিতে যাচ্ছেন ঢাকায়। কিন্তু সেখানেও অপেক্ষা করে পাচ্ছেনা কাক্ষিত এই সেবা। এ রোগের চিকিৎসার জন্য সামর্থবানদের ঢাকা কিংবা দেশের বাইরে গিয়ে সেবা নেওয়ার সুযোগ থাকলেও অসহায় ও হতদরিদ্র মানুষগুলো টাকার অভাবে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

চমেক হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রায় চার বছর ধরেই রেডিওথেরাপি মেশিনটি নষ্ট। পরে ১২ কোটি টাকা মূল্যে আমদানি হয় ক্যান্সার চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ এই মেশিনটি। গেল বছরের ৩১ অক্টোবর পরমাণু শক্তি কমিশনের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল মেশিনটির সোর্স পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। গত ৪ নভেম্বর সোর্স থেকে রেডিয়েশন নির্গমন সংক্রান্ত ‘বিপদমুক্ত’ বলে সনদ দেয়। এরপরই মেশিনটি চালুর সিদ্ধান্ত নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এর আগে ২০০২ সালে কোবাল্ট নামের রেডিওথেরাপি মেশিন চালু হয়। যার মেয়াদ ছিল ১০ বছর। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এটি সম্পূর্ণ অকার্যকর হয়ে পড়ে। এরপর গেল বছরের ৩০ জানুয়ারি নতুন রেডিওথেরাপি মেশিনটি আসে হাসপাতালে। ১৩ নভেম্বও মেশিনটির উদ্ধোধন করেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ২৬ ডিসেম্বর বন্ধ হয়ে যায় অত্যাধুনিক মেশিনটি। আরও জানা যায়, বছরে প্রায় ২০ হাজার ক্যানসার রোগী এই হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। রেডিওথেরাপি যন্ত্র যখন সচল ছিল, তখন বছরে আড়াই থেকে তিন হাজার রোগীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হতো। তখনো ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বড় একটি অংশ রেডিওথেরাপির সেবার বাইরে থেকে যেত।

হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, রেডিওথেরাপি সেবার কক্ষটি বন্ধ। এ অবস্থায় দূর দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। চিকিৎসা নিতে আসা ক্যান্সার রোগীরা জানান, মেশিন নষ্ট থাকায় সেবা পাচ্ছেনা তারা। ঢাকায় গিয়ে বা বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার মতো টাকা তাদের নেই। এ অবস্থায় মেশিনটি চালু না হলে বিনা চিকিৎসায় মরতে হবে তাদের। টেকনিশিয়ানরা জানান, ক্যালিব্রেশনের (ক্যানসারের কোষ ধ্বংস করার রশ্মি) কাজ ঠিকমতো হচ্ছে না। বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ‘সেবা চালুর পর প্রতিদিন গড়ে ৮০জনের মতো রেডিওথেরাপি নিয়েছেন। তারা (রোগীরা) মাত্র ১০০ টাকার বিনিময়ে রোগীরা রেডিওথেরাপি সেবা পেয়েছেন। মেশিনটি অকেজো হয়ে পড়ায় রোগীরা কষ্ট পাচ্ছে। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি এ মাসের মধ্যে মেশিনটি চালু করা সম্ভব হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, প্রতি ১০ লাখ মানুষের জন্য একটি রেডিওথেরাপি মেশিন থাকার কথা। সেই হিসেবে চট্টগ্রাম বিভাগে প্রয়োজন ৪০টি।

এ প্রসঙ্গে রেডিওথেরাপি বিভাগীয় প্রধান ডা. সাজ্জাদ মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, রেডিওথেরাপি যন্ত্র নষ্ট জেনে এখন অনেক রোগী এখানে আসছে না। কেউ ঢাকায় চলে যাচ্ছে, কেউবা চিকিৎসার বাইরে থেকে যাচ্ছে। এই হাসপাতালে বিভিন্ন জেলার ক্যানসারের রোগীরা আসে।

হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আখতারুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, মেশিনটির পার্টস ঠিকমতো কাজ করছে না। বিদেশ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং এর একটি টিম আসবে। তাছাড়া বর্তমানে যে মেশিনটি আছে সেখানে সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ৬০ জনের মতো চিকিৎসা দেওয়া যাবে। কিন্তুু আমরা আরো বেশি রোগীর চিকিৎসা দেওয়ার কারনে মেশিনটি কাজ করছেনা। তিনি বলেন, বর্তমানে যে মেশিনটি আছে তার সাথে যদি সিমুলাইটার নামে আরেকটি মেশিন সংযোজন করা যায় তাহলে ১০০ উপরে রোগীর চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে। যে মেশিনটিম দাম ৬ কোটি টাকা। সেটার প্রক্রিয়া চলছে। জোর্মান, ভারত থেকে ইঞ্জিনিয়ার আসবে। সব ঠিকটাক থাকলে পুণরায় মেশিনটি চালু করা হবে।