বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে বহুল আলোচিত এক এগারোর ১২ বছর ভয়ানক কালো অধ্যায় পূর্ণ হল গত ১১ জানুয়ারি (শুক্রবার)। চরম এক সংঘাতময় পরিস্থিতিতে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি অপরাহ্নে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রফেসর ইয়াজউদ্দিন আহমেদ দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্বও ছেড়ে দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফখরুদ্দিন আহমদের হাতে।
যে সন্ধ্যায় ওয়ান-ইলেভেনের জরুরি অবস্থা জারি হয়েছিল, সেই রাতে সুধাসদনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত দলের নেতাদের বলেছিলেন, এ ঘটনা রাজনীতিবিদদের জন্য ‘শুভ’ হবে না। পরে তাই-ই হয়েছে। একে একে গ্রেফতার হন ১৬০ জন শীর্ষ রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কার্যক্রম ক্রমশ পরিণত হয় সেমি মার্শাল ল’তে।
তারই অংশ হিসেবে ২০০৭ এর ১৬ জুলাই গ্রেফতার হন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তাঁর গ্রেফতারের সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট পাল্টে যেতে শুরু করে। রাজনীতির চেনা মানুষগুলো অচেনা হয়ে যায়। হালুয়া-রুটির ভোগী মানুষগুলো কেউ বিদেশ পালিয়ে, কেউ বা দেশের মধ্যেই আত্মগোপনে থেকে আত্মরক্ষায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কেউ কেউ অবতীর্ণ হন সংস্কারপন্থীর ভূমিকায়। আবার কেউ গ্রেফতার হয়ে আপাত বেঁচে যাওয়ার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন।
মোদ্দাকথা, শেখ হাসিনার পক্ষে কথা বললেই বিপদ হতে পারে এমন আশঙ্কায় রাজনীতি ও ক্ষমতার পদ-পদবি আঁকড়ে থাকা মানুষগুলো যখন মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকেন। সব দিকে যখন নীরব-নিথর। প্রতিবাদের পুরুষকণ্ঠ যখন কারাপ্রকোষ্টে। ঠিক তখনই প্রতিবাদী ঝাণ্ডা হাতে কক্সবাজার রাজপথে নারীকর্মীদের নিয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার মুক্তির পক্ষে আওয়াজ তোলেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপিকা এথিন রাখাইন।
রাজনৈতিক কর্মসূচির ওপর ফখরুদ্দিন-মইনউদ্দিনের কঠোর পাহারা, নজরদারি তখন। টুঁ-শব্দটি করলেই টুঁটি চেপে ধরার খড়গ। সেই অবস্থাতেই চরম ঝুঁকি নেন অধ্যাপিকা এথিন রাখাইন। কক্সবাজার রাজপথে নারী সমাবেশ ঘটিয়ে দলীয় সভাপতির মুক্তির সংগ্রামের ডাক দেন। জরুরি অবস্থায় এ ধরনের কর্মসূচি পালন করা তখনকার প্রেক্ষাপটে ভয়ানক ব্যাপার ছিলো। এ জন্য গ্রেফতার-নির্যাতনের পাশাপাশি রাজনীতির মাঠ শুধু নয়, জীবনের মাঠ থেকেও সরিয়ে দেয়ার আশঙ্কা স্বাভাবিক। আর এসব জেনে, মেনেই শেখ হাসিনার মুক্তির দাবিতে সেদিন জীবনের সবচেয়ে বড় ঝুঁকিটা নিয়েছিলেন অসীম সাহসী এই নেত্রী।

বঙ্গবন্ধু তনয়া দেশরত্ন শেখ হাসিনার আধুনিক শিক্ষানীতির প্রসারে কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপিকা এথিন রাখাইন রেখেছেন এক অসামান্য অবদান।

যার দৃশ্যমান উদাহরণ হল সারা বাংলাদেশের অন্যতম মডেল কলেজ, সমুদ্র নগরী কক্সবাজার জেলার অন্যতম বিদ্যাপিঠ কক্সবাজার সিটি কলেজ।

১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই কলেজটি শুরু থেকে অনেক ধরণের সংকটের মধ্যে ছিল। যখন এথিন রাখাইন অত্র কলেজের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল তখন মোট ছাত্র-ছাত্রী ছিল ২৫০ জন এবং শিক্ষক/শিক্ষিকা ছিলেন সর্বসাকূল্যে ১১ জন। অত্র কলেজের অবকাঠামো ছিলো খুবই দূর্বল। শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ ছিল না বললেই চলে।

অধ্যাপিকা এথিন রাখাইন দায়িত্ব নেওয়ার সাথে সাথে বাংলাদেশের বরেণ্য শিক্ষাবিদদের পরামর্শ নিয়ে তিনি এই কলেজের শিক্ষার সংস্কারের পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়নে অগ্রগণ্য ভূমিকা রাখেন।

যার উদাহারণ – বহুতল বিশিষ্ট ডিজিটাল প্রযুক্তি সম্পন্ন আধুনিক রিসোর্স ভবন,কমার্স ভবন, বিজ্ঞান ভবন নির্মাণ করেন। সর্বোপরি ডিজিটাল বাংলাদেশের সাথে সমন্বয় রেখে অত্র কলেজকে তিনি মাল্টিমিডিয়া সিস্টেম ক্লাস ও সম্পূর্ণরূপে সি.সি.টি.ভি ক্যামরা ও ওয়াইফাই জোনের মাধ্যমে নিরাপত্তার আওতায় নিয়ে আসেন।

বর্তমানে ২০টি বিষয়ে অনার্স, ৬টি বিষয়ে মাস্টার্স কোর্সের পাশাপাশি ডিগ্রি(পাস) ও কারিগরি কোর্স চালু আছে।
এখন ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যা প্রায় ১৩ হাজারেরও অধিক এবং ২শত (প্রায়) শিক্ষক-শিক্ষিকা কর্মরত রয়েছেন। বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সাথে সমন্বয় রেখে কক্সবাজারবাসীকে আধুনিক ও কর্মমূখী শিক্ষায় শিক্ষিত করার প্রয়াসে নতুনভাবে চালু করেছেন – হোটেল ম্যানেজমেন্ট এন্ড ট্যুরিজম ও হসপিটালিটি, বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার সায়েন্স, সি.এস.ই(কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইন্জিনিয়ারিং), মিডিয়া এন্ড থিয়েটার স্ট্যাডিস, লাইব্রেরি এন্ড সায়েন্স এবং জার্নালিজম ইত্যাদি।
এই বিষয় গুলো যুক্ত করে তিনি অত্র কলেজকে বাংলাদেশের একটি অন্যতম আদর্শ বিদ্যাপিঠ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। শিক্ষার পাশাপাশি অত্র কলেজে সংস্কৃতি চর্চার একটি প্লাটর্ফম তৈরি করেছেন। এই কলেজের আধুনিক পরিবেশ এবং যোগ্য শিক্ষক/শিক্ষিকার পাঠদানে প্রতিবছর এইচ.এস.সি ও অনার্স এবং মাস্টার্সের অভাবনীয় রেজাল্ট কক্সবাজারবাসীকে উপহার দিয়ে থাকে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচিত ১৫টি মডেল কলেজে মধ্যে কক্সবাজার সিটি কলেজ অন্যতম স্থান দখলে রেখেছেন। যা সম্ভব হয়েছে অধ্যাপিকা এথিন রাখাইন এর সুদক্ষ নেতৃত্ব এবং সুপরিকল্পিত পরিচালনার মাধ্যমে। কক্সবাজারবাসী তথা দক্ষিণ চট্টলার জন্য এটি একটি বিরাট প্রাপ্তি।

অধ্যাপিকা এথিন রাখাইন সাহিত্যিকা পল্লীর বেলে ও দোআঁশ মাটির ধুলাবালির এই ক্যাম্পাসকে এখন একটি আধুনিক এবং দর্শনীয় স্থান হিসেবে রুপান্তর করেছেন। সূর্যডুবে যাওয়ার সাথে সাথে এই কলেজে বিভিন্ন রঙ্গের সোডিয়াম লাইটের আলোতে ফুটে উঠে অন্যরকম একটি মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। যা পর্যটন নগরী কক্সবাজারে “শিক্ষা পর্যটন” খাতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

পর্যটন জেলা কক্সবাজারে বসবাসরত নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর সংঘবদ্ধ হওয়ার নেতৃত্ব দেন অধ্যাপিকা এথিন রাখাইন।
যার প্রমাণ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মিলেছে। কক্সবাজারে জেলার সদর, রামু, হারবাং, পেকুয়া, টেকনাফ ও উখিয়া এবং মহেশখালীতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে স্বাধীনতার স্বপক্ষে তথা নৌকার পক্ষে একক শক্তি হিসেবে গড়ে তুলায় অধ্যাপিকা এথিন রাখাইনে ভূমিকা অনস্বীকার্য।
রামু ট্রাজেডি পরবর্তি সময়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার্তে অধ্যাপিকা এথিন রাখাইনের অন্যতম ভূমিকা কক্সবাজারবাসীর কাছে চিরস্বরণীয়।

শিক্ষায় দেশের মেরুদন্ড। একটি শিক্ষিত জাতিই পারে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাফল্যের স্বর্ণশিখরে আর সেই জাতির নেতৃত্ব যেন হয় শিক্ষিত ব্যক্তিদের হাতে।
অশিক্ষিতদের কাছে কাদামাটি শুধু ময়লা কিন্তু শিক্ষিত ব্যক্তি জানে কাদামাটি দিয়ে কিভাবে সুন্দর শিল্প কর্ম তৈরী করা যায়।
মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার স্বপক্ষে এবং মুজিব আদর্শে গড়া শিক্ষকদের সামাজিক সংগঠন ডিঙি ফাউন্ডেশনের দাবী অধ্যাপিকা এথিন রাখাইনকে কক্সবাজারে সংরক্ষিত মহিলা আসনে মনোনীত করে কক্সবাজার তথা দেশের অন্যতম আকর্ষণ সমুদ্র সৈকতের মত, আমাদের কক্সবাজারের উন্নতি সাধনে কক্সবাজার জেলাকে বাংলাদেশ সহ সমগ্র বিশ্বের কাছে একটি মডেল শহর হিসেবে তৈরী করার সুযোগ দেওয়া হউক। কারন—
শিক্ষক যদি জাতি গড়ার কারিগর হয়, তবে সেই শিক্ষিত মানুষই দেশের কাদামাটিকে শিল্প কর্মে ফুটিয়ে তুলতে পারবে- ইনশাআল্লাহ্।

-ডিঙি ফাউন্ডেশন