-এরফান হোছাইন, কক্সবাজার।

২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারর সরকারের নির্মম নির্যাতনের মুখে এখন পর্যন্ত প্রায় ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ উপজেলায় আশ্রয় নেয়। রোহিঙ্গারা আসার কারনে উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার স্থানীয় জনগন অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও খাদ্য সহ সকল ক্ষেত্রে ক্ষতির মুখে পড়ে।
কিন্তু সাম্প্রতিক স্থানীয়দের কোন কারণ ছাড়াই ছাঁটাই ও নতুন জবে স্থানীয়দের অগ্রাধিকার না দিয়ে অদক্ষ ও অযোগ্য কক্সবাজার জেলার বাইরের লোকবল নিয়ে এনজিও কার্যক্রম পরিচালনা করছে । যাতে প্রতিনিয়ত মানুষের কিছু প্রশ্ন থেকে যায় যদিও উত্তরগুলো আমরা খুজে পেলেও প্রকাশ করতে পারি না, কেননা প্রতিটা স্থানীয়রা এখন বাইরের ডিস্ট্রিকের মানুষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত । তাই স্থানীয়দের অধিকার আদায়ে নিমোক্ত প্রশ্ন এর উত্তরসহ ও দাবিগুলো ধাপে ধাপে উপস্থাপন করা হলোঃ

কিভাবে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা প্রজেক্টে কর্মরত এনজিও/ আইএনজিওতে স্থানীয় শিক্ষিত যুবসমাজর চাকুরির অধিকার বাস্তবায়ন করা যায়?

প্রত্যেক দেশী /বিদেশী এনজিওতে এডমিনের অফিসার পদে ও বড় বড় পোষ্টে কক্সবাজার জেলার স্থানীয়রা দায়িত্ব পালন করবে। তারপর বুঝা যাবে কেন স্থায়ী লোকেরা চাকরি হারায় বা নতুন চাকুরীতে তারা যথাযথ পরীক্ষা/ভাইভা দেওয়ার পরেও নিয়োগপ্রাপ্ত হয় না।

কেন এনজিওতে কক্সবাজারের স্থানীয়রা বৈষম্যের শিকার হয়?

কেও বলবেন স্থানীয়দের পড়ালেখা নেই, কমিউনিকেশনে স্কীল নাই, কম্পিউটা পরিচালনায় দক্ষ নয় হেন টেন অনেক কিছু।
এসব আসলে কিছু না মূল কারণ হচ্ছে স্থানীয়রা যেভাবে জাতীয় স্বার্থ রক্ষার্থে ও উখিয়া-টেকনাফ সহ কক্সবাজার জেলাকে বিপদের সম্মুখীন না হতে যেভাবে দেশপ্রেমিকের ভূমিকা পালন করে কিন্তু অন্যরা টাকা ইঙ্কামের ক্ষণস্থায়ী পদ মনে করে ক্ষতিকর ভূমিকা পালন করে যা সম্পূর্ণ অমানবিক।

পড়াশুনার দিক দিয়ে কক্সবাজারের বাইরের মানুষগুলো এগিয়ে ?

এসব পুরাই মিথ্যে প্রচারণা কেননা পুরো বাংলাদেশের মন্ত্রীপরিষদের সচিব শফিউল আলম আমাদের কক্সবাজার তথা উখিয়ার কৃতি সন্তান এর থেকে আরও কোন উদাহরণ লাগবে!

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রীপ্রাপ্ত সংখ্যা কক্সবাজার জেলায় নাই বললেই চলে ?

এটি কিছু কুচক্রী মহলের কথা যারা প্রতিনিয়ত এসব বানোয়াট কথা বলে। আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক মহেশখালী-কুতুবদিয়া ফোরামের উপদেষ্টা হিসেবে আমার কাছে যতটুকু তথ্য আছে তাতে চবিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা প্রায় ৩০০/৪০০ জনের কাছাকাছি এমনকি পুরো কক্সবাজার জেলায় চবিতে রানিং শিক্ষার্থী প্রায় ২৫০০ এর অধিক থাকে।
এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বুয়েট, চুয়েট, মেডিকেলে ইত্যাদিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কক্সবাজার জেলার সন্তানরা কোন অংশে কম নয়।

কেন অবৈধ বিদেশীদের দৌরাত্ব কোন অংশে কমে না?

শত শত বিদেশী কর্মচারী বিভিন্ন এনজিওতে কর্মরত তারা টুরিস্ট ভিসায় ১০/১৫/২০/৪০ লাখ বেতনের চাকুরীতে বাংলাদেশ মিশনে এসে একদিকে যেমন সরকারের রাজস্ব আয়ের বারোটা বাজাচ্ছে ঠিক দেশের সার্বভৌমত্ব দিন দিন হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে।
এসব অবৈধ কার্যাকলাপ স্থানীয়রা জানলে অনেকেই প্রকাশ করে দিবে ভেবে অনেক আইএনজিও স্থানীয়দেরকে চাকুরীচ্যুতসহ ও নতুন কোন চাকুরীতে নিতে চায়না।

ওয়ার্কপারমিট ভিসাহীন টুরিস্ট ভিসায় বিদেশীরা এখানে এসে মাসের পর মাস ও বছরের বছরের পর লাখ লাখ বেতনের চাকুরী করছে ও সরকারের ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে পাছার করছে বিদেশে লাখ লাখ ডলার ।

বিদেশীদের থেকে আমাদের বাংলাদেশী অনেক অদক্ষ নাকি !
বাংলাদেশীরা সবসময় কর্মদক্ষতায় অনেকাংশে এগিয়ে থাকে কিন্তু জাতি হিসেবে আমরা বঞ্ঝিত কেননা অল্প শিক্ষিত ও অদক্ষ বিদেশীরা সাদা চামড়ার অধিকারী হলে তারা যেখানে ১০/২০ লাখ টাকার বেতনে চাকুরী করে সেখানে আমাদের দেশের লোকালদের এনজিওতে দক্ষতা ও মাস্টার্স ডিগ্রী থাকা সত্বেও ৪০ / ৮০ হাজার টাকা বেতনের চাকুরী পেতে মাসের পর মাস , সিভির পর সিভি পাঠিয়েও একটা চাকুরীতে ইন্টারভিও দেওয়ার সন্ধানও মিলে না।

আপনি কিসের ভিত্তিতে বিদেশীদের অবৈধ বলছেন ও আপনার কি কোন এ বিষয় প্রমাণ আছে যে ” টুরিস্ট ভিসায় এনজিওতে কর্মরত এখনোও কোন বিদেশী আছে ?”

অবশ্যই আছে, প্রমাণ দিতে ব্যার্থ হলে আমাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করতে পারেন। আর যদি চ্যালেঞ্জ করেন তাহলে আমি সবকিছু প্রমাণ দিতে পারবো।

রোহিঙ্গা ইস্যু ও চাকুরীচ্যুত স্থানীয়দের আন্দোলনের বর্তমান অধিকার আদায়ের দাবিগুলি কি ?

ক্যাম্পে ভলান্টিয়ার পোস্টে অল্প শিক্ষিত স্থানীয়দের ৮০% চাকুরী নিশ্চিত করতে হবে। আর যেসব এনজিও ১০০% রোহিঙ্গা ভলান্টিয়ার নিয়ে প্রজেক্ট চালিয়ে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
NGO ও INGO তে চাকুরীর ক্ষেত্রে যোগ্যতা সম্পন্ন ৭০% স্থানীয়দের অগ্রাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে দাতা সংস্থাগুলোর প্রকল্প বাজেট বাস্তবায়নে ১০০ ভাগ সচ্ছতা রাখার ক্ষেত্রে সরকারী ও এনজিও প্রতিনিধিদলের মাঠ পর্যায়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভুমিকা পালনে মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে।
স্থানীয়দের এনজিও ও আইএনজিও কর্তৃক চাকরী থেকে ছাটাই বন্ধ করতে হবে ও চাকুরীচ্যুতদের পুনরায় চাকুরীতে বহাল রাখার ব্যবস্তা করতে হবে।
বিদেশী এনজিও কর্মীদের উস্কানীমূলক কর্মকান্ড নিরসনসহ ওয়ার্ক পার্মিট ভিসাহীন টুরিস্ট ভিসায় কর্মরত তাদেরকে ছাটাই করতে হবে ও সরকারের ইঙ্কাম ট্যাক্স ফাকিবাজ বিদেশীদের উপর কঠোর শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
আই এনজিওর বড় বড় পোস্টে বিদেশীদের নিয়োগ বন্ধ করে তাদের স্থলাভিষক্ত যোগ্য স্থানীয়দের চাকুরীতে নিয়োগ দিতে হবে।
এনজিওর বরাদ্ধকৃত ২৫% টাকা হোস্ট কমিউনিটির ক্ষতিগ্রস্থদের নিকট প্রদান করতে হবে।
রোহিংগাদের পাহাড় নিধন কর্মসূচি বন্ধ করে তার বিকল্প হিসেবে এনজিওদের বৃক্ষরোপণ অভিযান প্রজেক্ট চালু করতে হবে।
রোহিঙ্গা প্রজেক্টে কর্মরত প্রায় ১৩০০+ বিদেশীদের যেখানে প্রতিদিন ১৬,০০০ টাকা এলাউন্স দেওয়া কিন্তু বঞ্জিত হচ্ছে স্থানীয়রা। তাই অনতিবিলম্বে এরকম আকাশ-পাতাল বৈষম্য নীতি বন্ধ করতে হবে।
বাংলাদেশ সরকারের ঘোষনা অনুযায়ী যেখানে প্রতি শ্রমিকের মজুরী ১০০ ডলার কিন্তু তার বিপরীতে মাথাপিছু রোহিংগার পেছনে ৬৮২ ডলার খরচ দেখানো হচ্ছে যা বাংলাদেশী টাকায় ৫৪৫৬০ টাকা এতেই প্রতিয়মান হয় যে এটি শুভংকরের ফাঁকি। তাই এই বৈষ্যম্য অনতিবিলম্বে অবসান করতে হবে।
বিদেশীদের ব্যবহৃত প্রায় ৬০০ টি গাড়ি চলাচলে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ দারূন ক্ষতি হয়েছে , তাই সড়কটি সংষ্কারে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
রোহিঙ্গাদের জন্যে স্থানীয় সমাধান হিসেবে মিয়ানমার ফেরত পাঠানোর ব্যবস্তা করতে হবে।

নোটঃ একজন এনজিও কর্মী হিসেবে আমার অভিজ্ঞতা থেকে যা দেখেছিলাম ও দেখছি তার উপর ভিত্তি করেই লেখা । কিন্তু এখানে কক্সবাজারের বাইরের জেলার কাওকে বিন্দু পরিমাণ হিংসা বা নেগেটিভভাবে কিছু বুঝাতে চায়নি শুধুমাত্র ক্ষতিগ্রস্থ উখিয়া-টেকনাফ সহ কক্সবাজার জেলাবাসীর অধিকার নিয়ে কথা বলছি কিন্তু কোন অবৈধ দাবি নিয়ে বলছি না।
কেও যদি দাবি মনে করেন তাহলে ভূল ধারণা , মনে ও প্রাণে বিশ্বাস রাখুন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৭০ শতাংশ বড় ও ছোট পজিশনে কক্সবাজার জেলাবাসীর প্রাপ্য অধিকার যদিও এটা কখনোও কোন দাবি আদায় নয়।

মোঃ এরফান হোছাইন ,আইটি উদ্যোক্তা ও এনজিও কর্মী