সেলিম উদ্দীন, ঈদগাঁও:
লাল রঙের সাথে কিছু পচা মরিচ শুকিয়ে দিলে ভেজাল মরিচের গুড়ায় হালকা ঝালও হয়। আর হলুদ রঙের সাথে কিছু আসল হলুদ মিশিয়ে দিলে ভেজাল মসলা হিসেবে কেউ ধরতেও পারবেনা। এক বস্তা (৫০ কেজি) মরিচ ও ১০ বস্তা ধানের কুঁড়া, সঙ্গে সাড়ে ৫ কেজি রাসায়নিক পদার্থ (অরেঞ্জ কালার) মেশিনে গুঁড়া করার পর তা হয়ে উঠছে ৫৫ কেজি গুঁড়া মরিচ। একইভাবে তৈরি করা হচ্ছে হলুদের গুঁড়া।

অক্সাইড জাতীয় এসব টেক্সটাইল রং মেশানো কিছু খেলে প্রথমে হাইএসিডিটি হবে এবং একপর্যায়ে ক্যান্সার, হেপাটাইটিস ছাড়াও কিডনি ড্যামেজসহ নানা ধরনের ভয়ংকর রোগ হতে পারে। সাধারণত মরিচের গুঁড়োর সাথে ইটের গুঁড়ো বা কাঠের গুঁড়ো মেশানো হয়। এই ভেজাল মিশ্রিত মরিচ খেলে পাকস্থলীর সমস্যা ও ক্যান্সার হতে পারে।

মরিচের গুঁড়োর ভেজাল শনাক্ত করার জন্য ১ গ্লাস পানিতে ১ চামচ মরিচের গুঁড়ো মেশান। যদি পানির রঙ পরিবর্তিত হয়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে যে এই মরিচে ভেজাল আছে।

বর্তমানে কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও বাজারে যেখানে খাঁটি মরিচের গুড়া পাওয়াই দুস্কর, সেখানে বোঁটা ছাড়া মরিচের গুড়ার কথা তো চিন্তাই করা যায়না। পাঠক হয়ত জেনে অবাক হবেন যে, বাজারের প্রচলিত মরিচের গুড়ার মধ্যে কোন ভেজাল না থাকলেও ৩০ শতাংশই থাকে মরিচের বোঁটার গুড়া, যা খাদ্যের কোন অংশ নয় এবং পরিমাণ বাড়ানো ছাড়া এর অন্য কোন ভূমিকা নেই। ফলে আমরা প্রতিনিয়তই মরিচের আসল স্বাদ, রং ও গন্ধ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি এবং মরিচের সাথে বোঁটার গুড়াও খাচ্ছি। সবুজ উদ্যোগের মরিচ যেহেতু রান্নায় পরিমানে অল্প লাগে, তাই এটি দামেও সাশ্রয়।

যেমনি করে ঈদগাঁও বাজারের বিভিন্ন হলুদ, মরিচ ও ধনিয়া ভাঙ্গানোর কারখানায় চলছে ভেজাল মসলা তৈরি। বাজারের অর্ধডজনাধিক গুড়া মিশানোর বেজাল মসলার কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় তৈরি করা হচ্ছে গরু, ছাগল ও হাঁস মূরগির খাবার ধানের কুড়া ও কাঠের কুড়ার সাথে রাসায়নিক কেমিকেল মিসিয়ে বানানো হচ্ছে হলুদ, মরিচ ও ধনিয়া। যা স্বস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ন। নিত্য প্রয়োজনীয় হলুদ, মরিচ ও ধনিয়া অগ্নিমূল্যে হওয়া তার পরিবর্তে কাঠের গুরা, কুড়া মিসানো হয় বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মিলের কর্মচারী। তারা আরো জানায় ৪০ কেজির বস্তায় ৫শ গ্রাম কেমিকেল মিশিয়ে দিলেই তৈরি হয়ে যায় একমন হলুদ বা মরিচ।

তবে বিভিন্ন মসলার মিল ঘুরে দেখা গেছে, বিএসটিআই, ট্রেড লাইন্সেস, মেডিকেল সাটিফিকেট ও রাজস্ব নবায়ন ছাড়পত্র ছাড়াই তৈরি করা হচ্ছে মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় মসলা। এর ফলে মানবদেহে গ্যাস্টিক, আলসার, পাকস্থলিতে ক্ষতবিক্ষত সিরসিস থেকে দেখা দেয় ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগ বালাই। তবে বাজারের এসব মিল থেকে এই মসলা পাইকারদের মাধ্যামে ভোক্তাদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এলাকার সর্বত্র।

মানবদেহের এসব ক্ষতিকারক মসলা তৈরির কারখানার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন করতে গেলে ভেজাল মসলা উৎপাদনকারী কারখানার জনৈক মালিক মুঠোফোনে নিউজ প্রচার হলে দেখে নেয়ার হুমকিও দেন। তবে এসব ভেজাল মসলা কারখানা বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দাবী জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

ভোক্তারা জানান, প্রশাসনের তদারকি না থাকায় যে যেভাবে খুশি তৈরি করে যাছে মানুষের মরণব্যাধী ভেজাল মসলা। এসব কারখানা মালিকরা শুধু মানুষের সাথে নয় পুরো জাতীর সাথে প্রতারণা করছে এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

এদিকে ভোক্ত অধিকার সংরক্ষন আইনে ৫০ ধারা মোতাবেক কোন পণ্যোর ভেজাল ও নকল করলে ২ লক্ষ টাকা জরিমানা ও ৩ বছরের কারাদন্ডের বিধান থাকলেও পার পেয়ে যাচ্ছে এসব মসলা মিলের প্রতারক মলিকরা। ভেজাল মসলা কারখানা বন্ধ করা না গেলে পাকস্থলিতে সিরোসিস ক্যান্সার ও হৃদরোগে আক্রন্ত হবে লাখো মানুষ এমনটাই জানালেন বিশেষঞ্জ চিকিৎসক।

কেউ সঠিক উপকরণ ব্যবহার না করে কাঠের গুড়া বা ধানের কুড়া ব্যবহার করে তাদের বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিকার আইনে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানালেন কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।