ইকবাল হোসাইন! অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, এক সময় কর্মস্থল ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে। চাকুরীর সুবাদে বর্তমানে কক্সবাজারে কর্মরত আছেন। নামটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তরুণদের কাছে অনেক জনপ্রিয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তরুণদের নিকট ইকবাল হোসাইন শব্দটি তারুণ্যের বন্ধু বলে বিবেচিত হয়। ‘ইকবাল হোসাইন’ নামটি শুনলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এমন কোন এলাকার মানুষ নেই যে তাকে চেনেন না। অন্যদিকে নারীদের কাছেও যেন আশ্রয়ের শেষ স্থল হয়ে উঠেছিলেন তিনি। সাধারন মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় যেন নিজের নামটি স্বর্ণক্ষরে গেঁথে দিয়েছিলেন। চাকুরীর সুবাদে বর্তমানে তিনি কক্সবাজারের জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসাবে নিয়োজিত আছেন। সেখানে গিয়েও তাঁর কাজের ধারাবাহিকতা একই রেখেছেন। কিন্তু গ্রামের এক ছেলে হয়েও কিভাবে তিনি মানুষের হৃদয় জয় করতে পেরেছেন এত সহজে সেটাই যেন ঘুরপাক খাচ্ছে অনেকের মনে। পুলিশের এ চৌকশ কর্মকর্তাকে নিয়ে লিখেছেন … রাসেল মিয়া , ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থাকাকালীন তার ব্যতিক্রমী উদ্যেগের কারণেই তিনি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। মাদক, বাল্যবিবাহ, যৌতুক, নারী নির্যাতনের মত স্পর্শকাতর বিষয় গুলোতে তার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের কারণেই তিনি সাধারনের হৃদয়ে স্থান করে নিতে পেরেছিলেন। তরুণরা ছিল তার খুবই ভক্ত। তারুণ্য এমন করে তাকে টানত যে, যে কোন কর্মদিবসে তার কার্যালয়ের সামনে তরুণদের বিশাল লাইন দেখা যেত। অনেকটা এমন যে তরুণরা যে কোন সমস্যায় এই অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কাছে আসলেই সকল সমস্যার সমাধান। আসলেই তা ই। অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কাছে এলেই সমাধান পেত ভূক্তভূগীরা। আর এ জন্য তরুণদের ভিড় লেগে থাকতো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন অভিযোগ সেল খোলেন তিনি। সেখানে নারী ও শিশুদের অভিযোগ করলে সেবা প্রদানে তিনি ছিলেন বদ্ধ পরিকর।

একজন সৎ ও আদর্শবান পুলিশ কর্মকর্তা হওয়ার কারণে তিনি ছিলেন জনসাধারনের কাছে একজন অসাধারন ব্যাক্তি। একজন গ্রামের ছেলে হয়েও তিনি যেন সকল সমাজের মানুষের সাথে সমান তালে লড়েছেন। কর্তব্যের কাছে তিনি ছিলেন অনঢ়। শুধু তাই নয় মাদক ও বাল্যবিবাহ বিরোধী বিভিন্ন কর্মশালার আয়োজন করে বেশ প্রশংসা কামিয়েছেন। তার কর্মকান্ডে জনগন যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পেরেছেন। অনেক জটিল সমস্যা গুলোর তিনি সমাধান দিয়েছেন বিচক্ষনতার সহিত। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সকল শ্রেণীর মানুষের নয়নের মণি ইকবাল হোসাইন জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছিলেন মাদকের বিরুদ্ধে। সন্ত্রাস এবং জঙ্গীবাদ দমনেও তার ভূয়সী প্রশংসা করছেন সাধারন জনতা। তার ব্রাহ্মণবাড়িয়া ত্যাগের কথা শুনে সাধারণ মানুষের মনে বিষাদ জন্ম নিতে শুরু করেছে। গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক দিনের বিরোধিতা নিরশনে ও ইকবাল হোসাইন এর পদক্ষেপ ছিল প্রশংসনীয়। বিরোধিতা নিরশন করে পরিবার গুলোকে মিলিয়ে দিয়েছেন। বহু বছরের শত্রুতাকে বন্ধুত্বে পরিনত করতে পেরেছিলেন তিনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রতিটি থানায় যেন পুলিশিং সেবা ছিল শতভাগ।

এছাড়া বিভিন্ন কর্মদিবস গুলোতে সকাল থেকেই শত শত নারী, শিশুদের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে জমায়েত হতে দেখা যেত। বাল্যবিবাহ, যৌতক, নারী নির্যাতন বন্ধে তিনি ছিলেন নারীদের নিকট প্রাণ স্বরূপ। নারীদের অধিকার অক্ষুন্ন রাখতে তিনি ছিলেন বলিষ্ট কণ্ঠস্বর। স্কুল, কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা যেন মাদকে আকৃষ্ট না হতে পারে সেদিকে ছিল তার তীক্ষè নজর। মাদক, বাল্যবিবাহ ও জঙ্গিবাদ বন্ধে সতর্কতা মূলক নানা কার্যক্রমের মধ্যে স্কুলে স্কুলে গিয়ে বিভিন্ন কর্মশালার আয়োজন ছিল তার অন্যতম অসাধারন উদ্যেগ। বিরোধ নিরোশনে অনেকেরই সম্পর্কে ঘটেছে উন্নতি। ঝামেলায় না জড়িয়ে লোকদের মিলিয়ে দিতে পারাকেই তিনি আনন্দের বলে মনে করতেন। সৎ সাহসে ছিলেন বদ্ধ পরিকর। কোন বাঁধাই তাকে দমিয়ে রাখতে পারে নি।

কক্সবাজারে গিয়ে ও তিনি তার কাজের ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রেখে চলেছেন। মাদক, বাল্যবিয়ে, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ নিরসনে জিরোটলারেন্স নীতি গ্রহণ করে এগিয়ে যাচ্ছেন। কক্সবাজারে নিযুক্ত হয়েই তিনি বিভিন্ন সংগঠনকে নিয়ে বিভিন্ন সময় আলোচনা সভার আয়োজন করেছেন। এই সব আলোচনা সভায় তরুণদের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যণীয়। বিভিন্ন টুরিষ্ট সিগন্যাল পয়েন্টগুলিতে অসামাজিক কাজ বন্ধ করতে অভিযান পরিচালনা করছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মত সেখানেও তিনি সফলতার মুখ দেখছেন। তার কার্যক্রমকে স্বাগত জানিয়েছেন কক্সবাজারের আপামর জনসাধারণ।
কে এই তারুণ্যের বন্ধু হিসেবে বিবেচিত ইকবাল হোসাইন?
নরসিংদি জেলার মনোহরদী উপজেলার সিদিরপুর ইউনিয়নের পীরপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলী মাষ্টার এর ৫ ভাইবোন এর মধ্যে চুতুর্থ মেধাবী সন্তান ইকবাল হোসাইন। ২০০৮ সালের ২৭ তম ব্যাচ বিসিএস পাস করে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে সহকারী পুলিশ সুপার হিসাবে যোগদান করেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, জাতীসং মিশনে (মালিতে এক বছর),সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ অফিসার হয়ে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটে সততার সাথে দায়িত্ব পালন করে পুলিশ বিভাগে প্রশংসিত হন। ২০১৪-১৫ সালে মালিতে জাতিসংঘ মিশনে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে পুলিশে আলোচিত হন। তার ফলস্বরূপ জাতিসংঘ শান্তি পদকও লাভ করেন। সর্বশেষ তিনি কক্সবাজারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসাবে দায়িত্বরত আছেন।

নানা গুণে গুণান্নিত এএসপি ইকবাল হোসাইন এর তরুণদের নিয়ে আলোচনা ও বক্তৃতা দেওয়ার কন্ঠও চমৎকার। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিয়ে মাঝে মাঝে তিনি জানান দেন হাজারো ব্যস্ততার মাঝেও শিক্ষামূলক বক্তৃতা তরুণদের মনে সামনে এগিয়ে চলার প্রশান্তি যোগায় তা তিনি প্রমাণও করেছেন।