শাহেদ মিজান, সিবিএন:
সংসদ নির্বাচন শেষ হওয়ার সাথে সাথে উপজেলা নির্বাচনের ঢামাডোল শুরু হয়ে গেছে। নির্বাচন কমিশন আগামী ফেব্রুয়ারিতে তফসীল ঘোষণার কথা জানিয়েছেন। সে ঘোষণার পর থেকে উপজেলা নির্বাচনে আগ্রহী প্রার্থীদের মধ্যে তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। তবে এই তোড়জোড় আপাতত সরকারি দল আওয়ামী লীগে মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে! চেয়ারম্যান ও ভাইসচেয়ারম্যান উভয় পদেই অনেক আগ্রহী দেখা যাচ্ছে। বিএনপি বা অন্য কোনো দলের প্রার্থীদের আগ্রহ এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি।

জানা গেছে, আগামী ফেব্রুয়ারিতে সম্ভাব্য তফসীল ঘোষণার পর থেকে কক্সবাজার জেলার প্রতিটি উপজেলায় উপজেলা নির্বাচনের হাওয়া লেগেছে। তবে তা আপাতত আওয়ামী লীগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে জেলার এক উপজেলায় চেয়ারম্যান ও ভাইসচেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের নেতা ব্যানারে ১০জনের বেশি নির্বাচন করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এতে রয়েছে ডাকসাইটে নেতা ও নবীন অনেকে। এসব আওয়াম লীগ নেতারা সবাই দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করার কথা বলছেন। ইতিমধ্যে অনেকে দলীয় মনোনয়ন পেতে লবিংও শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজারের আট উপজেলায় উপজেলা নির্বাচন নিয়ে সরব হয়ে উঠেছেন আওয়ামী লীগের আগ্রহীরা। এর মধ্যে চকরিয়া উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এটিএম জিয়াউদ্দিন চৌধুরী জিয়া, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সাবেক ছাত্রনেতা আমিনুর রশিদ দুলাল, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ফাঁসিয়াখালীর চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও কক্সবাজার জেলা ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি শ্রমিক নেতা আলহাজ ফজলুল করিম সাঈদী, মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি পশ্চিম বড়ভেওলার চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলা, মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাহারবিল ইউপি চেয়ারম্যান মহসিন বাবুল, চকরিয়া উপজেলা আওয়াম লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের তিনবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম, চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কক্সবাজার জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম লিটু এবং আওয়ামী লীগ নেতা নুরে হাবিব তছলিম।

পেকুয়ায় প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পদাক আবুল কাশেম, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এড. কামাল হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. হোসাইন বি.এ, আরেক সদস্য এস.এম গিয়াস উদ্দীন, শীলখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ওয়াহিদুর রহমান ওয়ারেচী, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম।

মহেশখালীতে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শরীফ বাদশা, উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক মোস্তফা আনোয়ার, মালয়েশিয়া প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা মার্শাল পাভেল, কালারমারছড়া ইউপি চেয়ারম্যান তারেক শরীফ, ধলঘাটা ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল হাসানসহ আরো অন্তত ১০জন।

কক্সবাজার সদরে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন- গতবারের আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল তালেব, কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল আবছার, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক কায়সারুল হক জুয়েল, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল করিম মাদুসহ আরো কয়েকজন।

রামু উপজেলায় প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজল, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজুল আলম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নূরুল হক চৌধুরী, খুনিয়াপালং ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মাবুদ, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সরওয়ার কামাল সোহেলসহ আরো কয়েকজন।

উখিয়া উপজেলায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হামিদুল হক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী ছাড়াও আরো কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে। টেকনাফ উপজেলায় প্রার্থী হতে পারেন সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদ, সাবেক ভাইসচেয়ারম্যান ইউনুছ বাঙ্গালী, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি নূরুল আলম। কুতুবদিয়ায় প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগে সভাপতি আওরঙ্গজেব মাতব্বর।

এদিকে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগে তোড়জোড় চললেও বিএনপি বা অন্য কোনো দলের প্রার্থীদের কোনো আগ্রহই দেখা যাচ্ছে না। এর কারণে হিসেবে তারা বিএনপিসহ অন্যান্য দলের নীতি-নির্ধারকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনেও জালিয়াতি করে বিজয় ছিনিয়ে নেবে। তাই বিএনপি বা অন্য কোনো দলের নেতাদেও প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ নেই।

এই প্রসঙ্গে কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা বলতে কিছু নেই। আওয়ামী লীগ একাদশ সংসদ নির্বাচনে তা চূড়ান্তভাবে প্রমাণ করেছেন। উপজেলা নির্বাচনেও এই নির্লজ্জ পদ্ধতির নির্বাচন হবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই বিএনপির কোনো নেতা এখন নির্বাচন করতে আগ্রহী নয়। তারপরও পরিস্থিতি পাল্টালে কি হয় দেখা যাক।’

উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. সিরাজুল মোস্তফা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ উন্নয়নের রাজনীতি দিয়ে দেশের মানুুষের প্রবল আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এখন চারিদিকে আওয়ামী লীগের জয়জয়কার। এতে দলের নেতারাও বেশ চাঙ্গা। সেই প্রেক্ষাপটে দলের মনোনয়ন পেতে একাধিক আগ্রহী নেতা রয়েছেন। কিন্তু সবাইকেতো মনোনয়ন দেয়া যাবে না। যোগ্যতার বিচারে যে-ই সবার চেয়ে যোগ্য তাকেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হবে।’