প্রেস বিজ্ঞপ্তি:

রবিবার ৬ জানুয়ারী বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ টেলিভিশন বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে সম্প্রচার হবে মাতামুহুরী নদী নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান। নদী নিরাপত্তার ধারাবাহিক প্রামাণ্যচিত্র নোঙর নদীর কাছে গিয়ে নদীর কথা বলে। একে একে ৬৮তম নদীর খবর নিতে নিতে এবার তুলে ধরবে মাতামুহূরী নদীর কথা। সবুজে ঘেরা অঞ্চলের নদী এটি। সময়ের সূত্রমতে এই নদীর অনেক কথা আছে। মাতামুহুরী নদী বাংলাদেশের পূর্ব-পাহাড়ি অঞ্চলের বান্দরবন ও কক্সবাজার জেলার একটি অন্যতম নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ১৪৬ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ১৫৪ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার।
নোঙরের অনুসন্ধান বলে, নদী বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। কুতুবদিয়া চ্যানেল পাড় হয়ে প্রবল স্রোতের সাথে সাথে মহমহ সমুদ্রগামী জেলেরা মাছ শিকার করছেন। তবে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত নয়। মধ্য সাগরে জেলেদের সবকিছু লুঠ করে নিয়ে যায় জলদস্যুরা। কখনো জলদস্যুদের হাতে প্রাণ হারায় অনেক জেলে। আবার মগনামা ঘাটের জেটি থেকে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ কুতুবদিয়া যাতায়াত করেন স্থানীয় গান বোটে। এখানেও লাইফজ্যাকেট ছাড়া যাত্রী পারাপারের নিরাপত্তা নিশ্চিত নয়। লামার মাইভার পর্বতে মাতামুহুরী নদীর উৎপত্তি মগ ভাষায় এই নদীটির নাম মামুরি। এই নদীটি কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার পশ্চিম পাশ ঘেষে বঙ্গোপসাগর-এ পতিত হয়েছে ৷ এর দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮৭ কি.মি.৷ বঙ্গোপসাগরে মাতামুহুরীর মোহনায় যে বদ্বীপের সৃষ্টি হয়েছে তা ভোলাখাল থেকে খুটাখালি পর্যন্ত বিস্তৃত। সাগরের বিভিন্ন ধরণের মাছ রোদে শুকিয়ে শুটকি তৈরী করেন এ অঞ্চলের অনেকেই।

আবার মাতামুহুরী নদীর সুরক্ষার কথা বলতে বলতে কক্সবাজার জেলার অনেক তরুণদের সাথে কথা হয় তাদের মধ্যে সাংস্কৃতিক কর্র্মী এফ এম সুমন বলেন, এই নদী অনেক প্রাচীন নদী। একসময় এই নদী ছিল এ অঞ্চলের মানুষের যাতায়তের অন্যতম পথ। নদী পথে মানুষ চলাচল করতো নির্বিগ্নে। কিন্ত মাতামুহুরী নদী ও অন্যান্য নদীর মতো কিছু অসাধু নদী খেকোদের পেটে চলে যাচ্ছে। চারিদিকে চর দখলের মহাউৎসব চলছে প্রতিনয়িত।

তিনি অঅরো বলেন এই নদী উদ্ধারে স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গ ও সরকারের আরো সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে। জানা যায় চট্টগ্রাম থেকে আরাকানকে বিভক্তকারী পর্বতমালালায় উদ্ভূত একটি নদীর নাম মাতামুহুরী। এর উৎসস্থান সাঙ্গু নদীর উৎস থেকে পূর্বে অবস্থিত। মগ ভাষায় নদীটির নাম মামুরি, যার বাংলা সংস্করণ হলো মাতামুহুরী। তবে স্থানীয়দের কাছে লোকবচন রয়েছে। সাঙ্গুর মতো মাতামুহুরীও পার্বত্য চট্টগ্রামের উত্তর-পশ্চিম দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পূর্ব দিক দিয়ে কক্সবাজার জেলায় প্রবেশ করেছে এবং বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে মাতামুহুরীর মোহনায় যে চওড়া বদ্বীপের সৃষ্টি হয়েছে তা ভোলাখাল থেকে খুটাখালি পর্যন্ত বিস্তৃত। এই বদ্বীপটি সুন্দরবনের বৈশিষ্ট্যধারী এবং জালের মতো ছড়ানো আর গরান বনের আচ্ছাদনসহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপ নিয়ে গঠিত। এখানে বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে সমগ্র এলাকা চাষাবাদের অধীনে আনা হয়েছে। এই নদী সংলগ্ন প্রধান উপজেলা হচ্ছে চকরিয়া। নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮৭ কিমি। জোয়ারের সময় ঘেরে জলের ফটক খুলে দিলে পৃথিবীর অনন্ত নিঃসঙ্গতার আকাশ জুড়ে জলের প্রবেশ মনে হয় ঘোড়া দৌড় । কত কাল ধরে, হাজার হাজার ঘোড়া দৌড়ে এসে ঝাঁকে ঝাঁকে নদী হতে ভূমিতে ঢুকে পড়ছে । সে কি তুমুল হাওয়ায় টং ঘর কেঁপে কেঁপে ওঠে তুমুল ভাবে, পাগলের মত নদীর ভেতরে ছুটে মাছের ট্রলার । একটা ঘন্টা বাজতে বাজতে বহুদূর হারিয়ে যায় বলে একসময় শুধু শোনা যায় পৃথিবীর শূন্যতা, হাওয়া । সে কি হাওয়া মাতামুহুরী নদীর বুকে, টলমল । তাইতো গায়কের কন্ঠে সুর ওঠে মাতামুরি তুইতো মোরে পাগল বানাইলি…

জানা যায়, আশির দশকে এ নদীর গভীরতা ছিল ৫০ থেকে ৬০ ফুট, প্রশস্ত ৫০০ থেকে ৭০০ মিটার, আয়তন প্রায় ১৮০০ একর। তবে নদীর সংযোকারী বিভিন্ন ছোট-বড় ঝিড়িতে পাহাড়ের পাদদেশ খোদাই করে নির্বিচারে পাথর আহরনের কারনে পানির উৎসগুলো শুকিয়ে গেছে। পাহাড়ের বালি আর পলিমাটি জমে নদীটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে গভীরতা ১৫ থেকে ২০ মিটারে চলে এসছে। বর্ষা থামতেই না থামতেই মাতামুহুরী নদীর উজানে চম্পাতলী, লামারমুখ, আলীকদম বাজার, পোয়া মুহুরী এলাকায় একাধিক ছোট বড় চর জেগে উঠে ।

অভিযোগ রয়েছে নির্বিচারে বৃক্ষনিধন, পাহাড় খুদে পাথর উত্তোলন, জুম চাষের নামে পাহাড়ে আগুন দিয়ে সবুজ বৃক্ষ ধ্বংস, অপরিকল্পিত জুম চাষ, ঝিরি, ছড়া ভরাট, নদীর দু’পাড়ে অপরিকল্পিত তামাক চাষ ও তামাক প্রক্রিয়াজাত করণের জ্বলানীর জন্য সবুজবনানী নিধন, নদীর দুপাড় অবৈধ দখল মাতামুহুরীর নাব্যতা হারানোর জন্য দায়ী করেছেন এলাকাবাসী ও পরিবেশ সচেতন মহল। ভাটির অঞ্চলে রাবার ড্যাম যত গভীরে থাকার কথা টিক ততটুকু না হওয়া, যত্র তত্র নদীর গতি প্রবাহে বাধ নির্মাণ করে অনুমোদিত বা অনুমোদিত ভাবে চিংড়ি চাষকেও অভিজ্ঞমহল এই সমস্যা সৃষ্টিতে ক্রীড়ানক মনে করেন। ‘নোঙর’ সুমন শামস এর পরিকল্পনা, পরিচালনা, গবেষণা ও উপস্থাপনা এবং মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনের প্রযোজনায় বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বিটিভি ওর্য়াল্ড প্রতি মাসের প্রথম রবিবার ও তৃতীয় রবিবার বেলা ৩:৩০ মিনিট একযোগে সম্প্রচার করছে নদী গবেষনা মুলক এই অনুষ্ঠান । এবারের পর্বে থাকছে মাতামুহুরী পর্ব।