শাহেদ মিজান, সিবিএন:
৩০ ডিসেম্বর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর থেকে মন্ত্রীত্ব নিয়ে কক্সবাজারে বেশ আলোচনা চলছে। কারণ স্বাধীনতার পর কক্সবাজারবাসী কোনো মন্ত্রী পায়নি। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে সালাহ উদ্দীন আহমদকে প্রতিমন্ত্রী করেছিলেন। দীর্ঘ সময়ে মন্ত্রীত্ব না পাওয়ায় কক্সবাজারে এতদিন আশানুরূপ উন্নয়ন হয়নি। তবে দশম নির্বাচনে ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা কক্সবাজারের জন্য মেগা প্রকল্পসহ বেশ উন্নয়ন প্রকল্প বরাদ্দ দিয়েছেন। এসব উন্নয়ন প্রকল্প সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এবার একজন পূর্ণমন্ত্রীর দাবি করছেন কক্সবাজারের মানুষ।

সূত্র মতে, একাদশ সংসদের নির্বাচিত সদস্যদের শপথ গ্রহণ সম্পন্ন হওয়া পর এবার মন্ত্রীসভা গঠনের তোড়জোড় চলছে। আগামীকাল ৬ জানুয়ারি মন্ত্রীসভার শপথ হবে। তাই একাদশ সংসদের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী কারা হচ্ছে- তা আজকের মধ্যে চূড়ান্ত হবে। কক্সবাজারের মানুষ আশা করছেন- এবার মন্ত্রী সভায় কক্সবাজার থেকে একজন মন্ত্রীত্ব পাবেন।

মন্ত্রী সভা গঠনকে সামনে রেখে কক্সবাজার জেলাজুড়ে এখন আলোচনায়- কক্সবাজার থেকে মন্ত্রী করা হচ্ছে কিনা। রাজনৈতিক মহলেও বেশ আলোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের মধ্যে আলোচনা বেশি হচ্ছে। এই নিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কেন্দ্রে লবিংও করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
কক্সবাজারের সাধারণ মানুষ বলছেন, দেশের সবচেয়ে বড় মেগাপ্রকল্প মাতারবাড়ি কয়লাবিদ্যু প্রকল্প, মহেশখালীতে পাঁচ হাজার একরের আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল পদ্ধতির কয়লা বিদ্যুত প্রকল্প, প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্র বন্দর, এলএমজি টার্মিনাল, রেললাইন, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সাবরাং এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্টজোনসহ আরো কয়েকটি বড় উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। এসব উন্নয়ন প্রকল্পগুলো সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য এবার কক্সবাজার থেকে একজন একজন পূর্ণ মন্ত্রী অবশ্যই দরকার। কেননা শেখ হাসিনা কক্সবাজারকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়ন করছে। এসব উন্নয়ন প্রকল্পগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়নের জন্যই একজন মন্ত্রী দরকার।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার সোসাইটির সভাপতি কমরেড গিয়াস উদ্দীন বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখেন এটা সত্য। তিনি কক্সাবাজারকে অনেক কিছু দিয়েছেন। তবে এসব উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর সুফল শুধু কক্সবাজারাবাসী ভোগ করবে না। এর সুফল ভোগ করবে সারাদেশের মানুষ। এসব প্রকল্পগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে। কক্সবাজার থেকে একজন যোগ্য ব্যক্তিকে সে ভার দেয়া যায়।’

তিনি বলেন, ‘একাদশ সংসদে নির্বাচিত সাংসদদের মধ্যেও মন্ত্রীর যোগ্য ব্যক্তি রয়েছেন। তাদের থেকে একজন মন্ত্রী করা হয়। তা না হলে পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করার মতো আরো অনেক লোক কক্সবাজারে রয়েছে। তাদের মধ্য থেকে যেন একজন টেকনোক্রেট কোটায় মন্ত্রী করা হয়।’

এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মুজিবর রহমান বলেন, ‘কক্সবাজারকে অনেক উন্নয়ন প্রকল্প দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আরো উন্নয়ন প্রকল্প দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাই এসব উন্নয়ন প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য আমরা ওনার কাছে একজন মন্ত্রী দেয়ার দাবি করেছি। ইতিমধ্যে আমরা তা জানিয়েছি। আশা করছি- তিনি কক্সবাজার থেকে একজন মন্ত্রী দেবেন।’

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. সিরাজুল মোস্তফা বলেন, ‘কক্সবাজার এখন আর বিএনপি-জামায়াতের ঘাঁটি নেই। শেখ হাসিনার উন্নয়ন দিয়ে কক্সবাজারকে ভরিয়ে দিয়েছেন। কক্সবাজারবাসীও দুহাত ভরে নৌকায় ভোট দিয়ে জেলার চারটি আসনই শেখ হাসিনাকে উপহার দিয়েছেন। এই উপহারের প্রতিদান হিসেবে আমরা একজন মন্ত্রী চাইতে পারি। সে মোতাবেক মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা দাবি রেখেছি। তিনি আমাদের দাবি রক্ষা করবেন বলে প্রত্যাশা রাখি।’

আন্তর্জাতিক পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. আনসারুল করিম বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত গঠিত সরকারের মন্ত্রীসভায় কক্সবাজার অঞ্চল থেকে একজন প্রতিমন্ত্রীর পদ ছাড়া বার বার অবহেলিত রয়ে গেছে। আসন্ন সরকারের মন্ত্রীসভায় এবার অন্তত একজন পূর্ণমন্ত্রী কক্সবাজার থেকে অন্তর্ভূক্ত করে সরকারের প্রস্তাবিত ৬ লাখ কোটি কোটি টাকার মেগা প্রকল্প গুলো সুন্দর ও সুচারুরুপে বাস্তবায়ন করা হোক। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী বিবেচনায় রাখবেন এ আশাবাদ ব্যক্ত করি।’