ডেস্ক নিউজ:

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউটস অব হেলথের (এনআইএইচ) তথ্যমতে, যেসব মানুষের গায়ের চামড়া পুরু ও রঙ তামাটে তাদের চামড়া ভেদ করে সূর্যরশ্মি ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না। এ কারণে লিভারে জমে থাকা ভিটামিন ডি বার্ন হয়ে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে না। এর ফলে তামাটে রঙের মানুষের শরীরে ভিটামিন ডি’র অভাব প্রকট হয়। বাংলাদেশিদের চামড়া পুরু ও রঙ তামাটে হওয়ায় প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে ভিটামিন ডি সংযোজন করতে নীতিমালা তৈরির কথা বলছেন চিকিৎসকেরা। একইসঙ্গে সূর্যের আলোতে থেকে ভিটামিন ডি গ্রহণের পরামর্শ তাদের।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অধ্যাপক ডা. মো. তছলিম উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের সরকার যদি কিছু সরকারি প্রোজেক্ট হাতে নেয়, কিছু খাবারের মধ্যে ভিটামিন ডি, ভিটামিন এ দিয়ে দিতে পারে তাহলে আমরা ভিটামিন ডি পাবো। যেমন আটা, চাল ও তেল।’
তিনি জানান, বাংলাদেশের মানুষের চামড়ার রঙ মেটে (ব্রাউন) হওয়ায় সূর্যরশ্মি চামড়া ভেদ করে শরীরে ঢুকতে পারে না। ভিটামিন ডি-৩-এর হাইড্রোক্সিক্যালসিফ্যারল অ্যাকটিভ ফর্ম। হাইড্রোক্সিক্যালসিফ্যারল চামড়ার নিচে ইনঅ্যাকটিভ ফর্মে থাকে। এটা সূর্যরশ্মি চামড়ার পড়ার ফলে অ্যাকটিভ হয়। কিন্তু আসলে ভিটামিন ডি তৈরি হয় লিভারে। এটা লিভারে তৈরি হয়ে চামড়ায় এসে সূর্যকিরণের ফলে অ্যাকটিভ হয়। সূর্যরশ্মি পড়ার ফলে অ্যাকটিভ না হলে এটি শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাজ করবে না।
এনআইএইচ’র তথ্যমতে, ভিটামিন ডি’র প্রধান উৎস সূর্যরশ্মি। এ ছাড়া ভিটামিন ডি পাওয়া যায় সামুদ্রিক মাছ স্যামন, টুনা, এবং ম্যাকারেলে। মাছের লিভারের তেলে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। এছাড়া গরুর মাংসের কলিজা, চিজ এবং ডিমের কুসুমে ভিটামিন ডি সামান্য পরিমাণে থাকে। মাশরুম থেকে ভিটামিন ডি-২ উৎপন্ন হয়। যুক্তরাষ্ট্রে এবং কানাডায় দুধে নির্দিষ্ট পরিমাণ ভিটামিন ডি সংযোজন করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের রিকোমেন্ডেড ডায়েটারি অ্যালায়েন্সেস (আরডিএস) অনুযায়ী, ০-১২ মাসের শিশুদের মধ্যে ১০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ডির প্রয়োজন হয়। ১-১৩ বয়সীদের জন্য ১৫ মাইক্রোগ্রাম, ১৪-১৮ বয়সীদের জন্য ১৫ মাইক্রোগ্রাম এবং ১৯-৫০ বয়সীদের জন্য ১৫ মাইক্রোগ্রাম, ৫১-৭০ বয়সীদের ১৫ মাইক্রোগ্রাম এবং ৭০ বছরের বেশি বয়সীদের ২০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ডি শরীরে প্রয়োজন হয়। গর্ভবতী এবং দুগ্ধদানকারী মায়েদের শরীরে ১৫ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ডি প্রয়োজন হয়।
বাংলাদেশের মানুষের শরীরে ভিটামিন ডি’র ঘাটতি প্রসঙ্গে অধ্যাপক ডা. তছলিম উদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যেটা হয়, বিশেষ করে নারীরা বেশ রেখেঢেকে চলেন। এ কারণে তাদের দেহে সূর্যরশ্মি পড়ে না। এর চেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমরা সবাই ব্রাউন কালার। এ জন্য রক্ত পরীক্ষা করলে প্রায় সবারই ক্ষেত্রে দেখা যায়, তারা ভিটামিন ডি ডেফিসিয়েন্সি রোগে ভুগছে।’ তিনি জানান, ভিটামিন ডি পাওয়ার জন্যই বিদেশে সমুদ্র সৈকতে নারী-পুরুষ শুয়ে থাকে। তারা ‘সান বাথ’ করে ভিটামিন ডি গ্রহণ করেন।
বিএসএমএমইউর কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. হারিসুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উঁচু ভবন, উঠান না থাকা, গ্রামের চিত্র বদলে যাওয়া এবং মানুষের জীবনযাপনের ধারা বদলে যাওয়ায় এদেশের মানুষ এখন ভিটামিন ডি’র ঘাটতিতে ভুগছে।’
বিএসএমএমইউর ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মশিউর রহমান খসরু বলেন, ‘শরীরের গঠনে ভিটামিন ডি’র খুব ভালো ভূমিকা রয়েছে। ভিটামিন ডি কমে গেলে হাড় ও মাংসের দুর্বলতা তৈরি হতে পারে। অস্টিওপোরেসিস রোগ হতে পারে। গর্ভবতী মায়ের শরীরে ভিটামিন ডি কম থাকলে ঝুঁকি বাড়ে। এ কারণে চিকিৎসকেরা ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট বেশি দিতে বলেন। ক্যালসিয়াম শরীরে ঢোকার সহজ উপায় হচ্ছে ভিটামিন ডি।’
চিকিৎসকেরা বলছেন, ভিটামিন ডি পাওয়ার জন্য সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টার মধ্যে সূর্যরশ্মি শরীরে লাগাতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে সানস্ক্রিন মেখে ১৫ মিনিট শুধু মুখমণ্ডলে, হাতের কনুই পর্যন্ত এবং পায়ের পাতায় এই সূর্যরশ্মি নিতে পারেন। এটি সপ্তাহে চারদিন ১৫ মিনিট করে নিতে হবে। সাতদিন মোট এক ঘণ্টা সূর্যরশ্মি নিতে পারলেই হবে।
এর পাশাপাশি খাবারে ভিটামিন ডি পাবার ব্যাপারে ডা. তছলিম উদ্দিন বলেন, সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি সরকারকে বলতে হবে। সামাজিক ফোরামে এগুলো আলোচনা করতে হবে। সরকারের দিক থেকেও স্বাস্থ্য সচেতনতার প্রোগ্রামও আসতে পারে।
বাংলাদেশ হেলথ রাইটস মুভমেন্টের প্রেসিডেন্ট ডা. রশীদ-ই-মাহবুব ডা. রশীদ-ই-মাহবুব বলেন, পাবলিক হেলথ, গবেষক, বায়োকেমিস্ট, চিকিৎসক সবাইকে যুক্ত করে এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে হবে।