জাগোনিউজ : কমিশন বৈঠকে অনেকবার নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) দিয়ে আলোচনায় আশা মাহবুব তালুকদার সদ্য শেষ হওয়া সংসদ নির্বাচন নিয়ে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। নির্বাচন কমিশনে কাজ করার সুযোগকে তিনি জীবনে গৌরব গাথা হিসেবেও আখ্যা দেন। নিজেকে ভাগ্যবান বলে অভিহিত করেন।

তিনি বলেন, আগের নির্বাচন অংশীদারিত্বমূলক হয়নি। এই প্রথম একটা অংশীদারিত্বমূলক, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আমরা জাতিকে উপহার দিতে পেরেছি। আমি মনে করি, এ নির্বাচন বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে একটা ঐতিহ্য সৃষ্টি করবে। এ নির্বাচন ধরেই পরবর্তী ইতিহাসে যে নির্বাচনের ধারা সেটা পরবর্তী সময়ে হয়তো ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ থাকবে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে নির্বাচন ভবনে ফুয়ারা চত্বরে ‘সফল’ নির্বাচন উপলক্ষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন ও নতুন বছরবরণ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।

এ সময় নির্বাচন কমিশনের সব কর্মকর্তার-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। মাহবুব তালুকদার বক্তব্য শুরুর আগে অনেকে বলাবলি করছিলেন শেষ হওয়া নির্বাচন নিয়ে তিনি হয়তো অপ্রীতিকার কোনো কথা বলবেন। কিন্তু তা হয়নি।

বক্তব্যের শুরুতে তিনি বলেন, মনোরম পরিবেশে আপনাদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। আমি খুব ভাগ্যবান, নিজে নিজেই বললাম। তার কারণ হলো, আমি আমার জীবন প্রারম্ভে যখন সরকারের চাকরিতে আসি, তখন বঙ্গব ভবনে আমি পাঁচ বছর সময় কাটিয়েছিলাম। চারজন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আমার সরাসরি কাজ করার সুযোগ হয়েছে। সেটা ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত। জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে মাননীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ চারজন নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে আমার আবার কাজ করার সুযোগ হয়েছে। সম্ভবত পাঁচ বছরব্যাপী। সেজন্য আমি মনে করি, জীবনের প্রথম আমলা হিসেবে কাজ করা এবং জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এগুলো আমার জীবনে গৌরব গাথা হয়ে থাকবে।

তিনি বলেন, আপনারা জানেন, আমাদের নির্বাচনের কোনো ধারাবাহিকতা নেই কিংবা ছিল না। আমরা কখনও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করেছি, কখনও সেনা সমর্থিত সরকারের অধীনে করেছি। কখনও নির্বাচন করেছি দলীয় সরকারের অধীনে। কিন্তু তা অংশীদারিত্বমূলক হয়নি। এই প্রথম একটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আমরা জাতিকে উপহার দিতে পেরেছি। আমি মনে করি এ নির্বাচন বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে একটা ঐতিহ্য সৃষ্টি করবে। এ নির্বাচন ধরেই পরবর্তী ইতিহাসে যে নির্বাচনের ধারা সেটা পরবর্তী সময়ে হয়তো ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ থাকবে।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন যে এতো বিশাল কর্মযজ্ঞ, এ বিষয়ে সত্যি আমার ধারণা ছিল না। কারণ নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কাজ করার কোনো সুযোগ কিংবা নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কাজ করার কোনো সুযোগ আমার আমলা জীবনে কখনও হয়নি।

এখানে এসে এই বিশাল কর্মকাণ্ড দেখে আমার জীবনের একটা বিশাল অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পেরেছি। কী নিরলস প্রচেষ্টায় আপনারা এই নির্বাচনটা সফলদায়ক করেছেন, সর্বাঙ্গীনভাবে সফল করেছেন, এটা আমি যদি প্রত্যক্ষভাবে না থাকতাম, তাহলে দেখতে পারতাম না। বুঝতে পারতাম না। বিশেষ করে আমি লক্ষ্য করেছি এই বিশাল কর্মযজ্ঞের যিনি কেন্দ্রবিন্দু, আমাদের নির্বাচন কমিশনের সচিব মহোদয় এবং তার সঙ্গে এখানে যারা পরবর্তী নির্বাচন সৈনিক ছিলেন, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, উপ-সচিব এবং অন্যান্য যারা ছিলেন, তারা কী নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই নির্বাচনকে সফল করেছেন, এ অভিজ্ঞাতাও আমার জন্য অনেক বিশাল এক অভিজ্ঞতা সঞ্চার হয়ে থাকবে।

মাহবুব তালুকদার বলেন, আমি বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই মাননীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং যোদ্ধার মতই এই বিশাল কর্মযজ্ঞে সবাইকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার যাদের সঙ্গে আমার প্রতিদিন দেখা হয় এবং এটা একটা আমি বলবো অপরিসীম অনুগ্রহ আমি যাদের সঙ্গে দুই বছরের কাছাকাছি সময় অতিবাহিত করেছি, আরও তিন বছর অতিবাহিত করতে পারবো আশা করি এবং তাদের সঙ্গে আমার যে সম্পর্ক, এ সম্পর্ক এতো নিবিড়, এটি কর্মক্ষেত্রে কখনও হয়নি। হওয়া সম্ভব না।

এজন্য কর্মক্ষেত্রে এ সুদীর্ঘ সময়ে কখনও কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠার সুযোগ থাকে না। কিন্তু আমি মনে করি এটা আমরা পরম সৌভাগ্য যে তাদের সঙ্গে সঙ্গে অত্যন্ত আপনজনের মতো আমার একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। সেই সম্পর্ক কেবল নির্বাচন কমিশনাররা না মাননীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গেও আমার একটা অত্যন্ত মধুর সম্পর্ক রয়েছে। যেটার জন্য আমি আনন্দিত এবং গর্বিত।

আপনাদের সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন এবং আমি একটা জিনিস সবার কাছে প্রত্যাশা করি আমি মনে করি আমার মতো বয়স্ক আর কেউ এখানে নেই। আপনাদের সবার দোয়া কামনা করি। অন্তরের অন্তস্থল থেকে আপনাদের সবাইকে দোয়া করি।

প্রসঙ্গত, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে ইলেট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার না করা, প্রশাসনকে ইসির অধীনে নিয়ে আসাসহ বেশকিছু দাবিতে কমিশন বৈঠকে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে সভা বর্জন করেছিলেন মাহবুব তালুকদার। তিনি কমিশন বৈঠকে দুইবার নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে বৈঠক বর্জন করেন। এছাড়া ভোটের কয়েক দিন পূর্বে গণমাধ্যমে বলেন, নির্বাচনে লেভেলে প্লেয়িং ফিল্ড বলতে কিছু নেই।

তার বক্তব্যের পর সিইসি গণমাধ্যমে মাহবুব তালুকদার অসত্য কথা বলেছেন মন্তব্য করে জ্যেষ্ঠ এ নির্বাচন কমিশনার গণমাধ্যমেকে তার কক্ষে ডেকে নিয়ে লিখিত আকারে জানান, সিইসির এই বক্তব্যের কঠোর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। কারণ এ কথা বলে তিনি একজন নির্বাচন কমিশনারের অস্তিত্বে আঘাত করেছেন। একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, সিইসিসহ সব নির্বাচন কমিশনার সমান।

গত ১২ ডিসেম্বর লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনে ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও সন্ত্রাসের ঘটনায় আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

সর্বশেষ ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিনও ভোটকেন্দ্র পর্যবেক্ষণের পর গণমাধ্যমে বলেছেন-বিরোধী দলগুলোর প্রার্থীর এজেন্টকে ভোটকেন্দ্রে দেখতে পাননি। এভাবে বারবার নিজেকে টক অব দ্যা কান্ট্রিতে পরিণত এই কমিশনার পুরোই উল্টো কথা বললেন ভোটের পাঁচদিনের মাথায়।