শাহীন মাহমুদ রাসেল:
দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন সড়কে নির্মিত সাংকেতিক চিহ্ন বিহীন ও অ প্রয়োজনীয় স্পীড ব্রেকার বা গতিরোধকগুলির কারনে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। সড়কের বিভিন্ন স্থানে অপ্রয়োজনীভাবে নির্মিত এসব স্পীড বেকার নিয়েও রয়েছে সমালোচনা। স্পীড ব্রেকার গুলিতে কোন সাংকেতি চিহ্ন না থাকায় এবং রাস্তার ওপর অস্থায়ী স্পীড ব্রেকারগুলির কারনে মাঝে মধ্যে প্রায় দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে। স্পীড ব্রেকারে দুর্ঘটনায় গত ৩/৪ বছরে কক্সবাজারে অন্তত দুইজনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছেন একাধিক পথচারী।
খোঁজখবর নিয়ে জানাগেছে, কক্সবাজার সড়ক বিভাগ, এলজিইডি ও পৌরসভার অধীনে বিভিন্ন সড়কে শতাধিক স্পীড বেকার রয়েছে। এসব স্পীড ব্রেকারের অধিকাংশরই কোন সাংকেতিক চিহ্ন নেই এবং অনেকগুলি স্পীড ব্রেকার অপ্রয়োজনীয়ভাবে নির্মাণ করা হয়েছে।
জানাগেছে, কক্সবাজার জানারঘোনা এলাকায় নতুন মেডিকেল কলেজ বাসা-বাড়ির সামনে দুটি স্পীডবেকার রয়েছে। এর আশেপাশে কোন গুরুত্বপূর্ণ অফিস বা স্থাপনা নেই। ওই স্পীড ব্রেকারগুলোতে কোন চিহ্ন না থাকায় প্রতিনিয়ত মোটর সাইকেল, ইজিবাইক সহ বিভিন্ন যানবাহন দ্রুত গতিতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। ওই স্পীড ব্রেকার থেকে ১০০ গজ পূর্বদিকে কক্সবাজার সরকারি কলেজের সামনে আরও দুটি স্পীড ব্রেকার রয়েছে। ওই স্পীড ব্রেকারের পাশে মূলত কলেজ এবং দোকান ছাড়া আর কোন স্থাপনা নেই। এই দুটি স্পীড ব্রেকারের মাঝখানে ঘটছে না দুর্ঘটনা।
এছাড়া মসজিদ, বাজার, হাসপাতাল, মাদ্রাসা, জেলা শিশু একাডেমি, প্রাইমারি স্কুল এবং কলেজ ও বিদ্যা নিকেতনসহ একাধিক স্থানে স্পীড ব্রেকার থাকলেও সেখানে কোন সাংকেতিক চিহ্ন নেই। অপর দিকে রামু চা বাগান এলাকায় রামু এবং মেরুল্লাহ সড়কের মাথায় আরো দুটি অপ্রয়োজনীয় স্পীড ব্রেকার রয়েছে মহাসড়কে। এই স্পীড ব্রেকার দুটি কি কারনে নির্মাণ করা হয়েছে তা কারও জানা নেই। এলজিইডির কোন অনুমোদন নেই। এসব স্পীড ব্রেকারগুলি দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। এছাড়া পৌরসভার বিভিন্ন সড়কে গুরুত্বহীণ একাধিক পয়েন্টে স্পীড ব্রেকার নির্মাণ করা হলেও সেগুলিতে কোন চিহ্ন না থাকায় দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে দুর্ঘটনা বেড়েছে।
শহরের বিডিআর ক্যাম্প এলাকায় রাস্তার ওপর সড়ক বিভাগ কর্তৃক বড় করে ৩টি স্পীড ব্রেকার নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে গুরুত্বপূর্ণ কোন অফিস নেই। ৫০ গজের মধ্যে ৩টি স্পীড ব্রেকার নির্মাণ হওয়ায় মাঝে মধ্যে পথচারীদের সমালোচনা শোনা যায়। একই অবস্থা সিটি কলেজ এলাকায় গোলজার ফ্যামিলি কোয়ার্টারের সামনে একটি স্পীড ব্রেকার নির্মাণ করা হলেও সমালোচনা মুখে পরে অবশ্য স্পীড ব্রেকারটি তুলে ফেলা হয়।
এছাড়া চট্রগ্রাম-কক্সবাজার, টেকনাফ-কক্সবাজার, রামুর বিভিন্ন সড়কসহ একাধিক সড়কে সড়ক বিভাগ ও এলজিইডির সড়কে অসংখ্য স্পীড ব্রেকার রয়েছে। এসব স্পীড ব্রেকারের মধ্যে অনেকস্থানে প্রয়োজনীয়ভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। আর গুরুত্বপুর্ণ স্থানে স্পীড ব্রেকার নির্মাণ করা হলেও সেখানে চিহ্ন না থাকায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। এছাড়া বিভিন্ন পুকুরে ও নিচু জমিতে বালু ভরাটের জন্য শহর সহ বিভিন্ন স্থানে উচুভাবে অস্থায়ীভাবে স্পীড ব্রেকার নির্মাণ করায় দুর্ঘটনা ঘটেই চলে। এসব স্পীড ব্রেকার উচু হওয়ায় বোঝাই ভ্যান ও বাহন চলাচলে চরম ভোগান্তির শিকার হয়। এমনকি দুর্ঘটনায়ও মারা যায়।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এসব অস্থায়ী স্পীড ব্রেকার ও চিহ্ন না থাকায় স্পীড ব্রেকারের সাথে দুর্ঘটনায় গত ৩/৪ বছরে অন্তত দুইজন নিহত এবং অনেকেই আহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের সেবিকা মঞ্জুরানী।
তিনি ৩/৪ বছর আগে সদর হাসপাতাল থেকে তার স্বামীর মোটর সাইকেলে যাবার পথে রামুর মেরুল্লাহ এলাকায় অস্থায়ী স্পীডবেকার পার হওয়ার সময় মোটর সাইকেল থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এছাড়া সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নের মোহসনিয়া পাড়া গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী ফরাজ আহমেদ বাড়িতে এসে মোটর সাইকেল নিয়ে স্পীড ব্রেকারের সাথে দুর্ঘটনায় নিহত হন।
খরুলিয়ার নোহা চালক জসিমউদ্দিন পুতু জানান, কক্সবাজার থেকে চট্রগ্রাম পর্যন্ত যেতে সড়কে ৬৫টি স্পীড বেকার রয়েছে। এছাড়া কক্সবাজারে বিভিন্ন সড়কের অপ্রয়োজনীয় একাধিক স্পীড ব্রেকার রয়েছে। এর কোনটিতেই রঙ বা চিহ্ন নেই। যার কারনে স্বাভাবিক গতিতে গাড়ি চালিয়েও চিহ্ন বিহীন এসব স্পীডব্রেকারে দুর্ঘটনা ঘটে। শুধু দুর্ঘনা সীমাবদ্ধ নয় রেন্ট-এ কার একটি সেবামুলক প্রতিষ্ঠান। জনসাধারণের জরুরী কাজে বিভিন্ন স্থানে গমনের জন্য বা অফিশিয়াল কাজের জন্য যাতায়াতের সময় স্পীড ব্রেকারের কারনে অনেক সময় রাস্তায় নষ্ট হয়ে পড়ে থাকে। স্পীড ব্রেকারের পাশাপাশি রাস্তাগুলির বেহাল দশার কারনেও দুর্ঘটনা ঘটছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের আন্তরিকতা প্রয়োজন।
কক্সবাজার জেলা নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের সভাপতি আমিরুল ইসলাম দুলু বলেন, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অধীনে বিভিন্ন সড়কে স্পীড ব্রেকারগুলিতে রঙ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষকে বার বার অনুরোধ করা হলেও গুরুত্ব দেয়া হয়নি। আর মাঝে মধ্যে রঙ করলেও তা বেশিদিন স্থায়ী হয় না। স্পীড ব্রেকারের কাছে সাংকেতিক কোন চিহ্ন দেওয়া থাকে না। যার কারনে দুর্ঘটনা প্রতিরোধের চেয়ে দুর্ঘটনা বেড়ে গেছে।
সরকার এই বছর থেকে ২২ অক্টোবরকে নিরাপদ সড়ক দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছেন। আমরা আশা করবো সড়ক ও জনপথ অধিপ্তর সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের নির্মিত স্পীড ব্রেকারগুলিতে চিহ্ন দিয়ে রাখবেন এবং অপ্রয়োজনীয় স্পীড ব্রেকারগুলি তুলে ফেলবেন। কক্সবাজার পৌরসভার প্যানেল মেয়র পাখি বলেন, পৌরসভার সড়কগুলিতে স্পীড ব্রেকারের কোন হিসাব নেই। কোন অনুমোদনও নেই। রাস্তার কাজ করার সময় হয়তো স্থানীয় লোকজন স্পীড বেকার নির্মাণ করে নিয়েছে। তবে কোথায় কোথায় এধরণের স্পীড বেকার আছে তা আমাদের জানা নেই।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর কক্সবাজার উপ-সহকারী প্রকৌশলী হাসান আলী জানান, সড়ক বিভাগের অধীনে বিভিন্ন সড়কে ৪২টি স্পীড ব্রেকার আছে। পথচারীদের সুবিধার্থে এবং দুর্ঘটনা কমাতে রঙ দিয়ে চিহ্ন দেওয়া থাকে। নতুন করে আবারও রঙ করা হচ্ছে। বৃষ্টির জন্য কাজ করা সম্ভব হয়নি। তবে পুনরায় স্পীড ব্রেকারগুলিতে রঙ করা হবে।