আবুল কালাম,চট্টগ্রাম :

সদ্য সমাপ্ত একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবিতে হতাশায় দলটির প্রধান অঙ্গসংগঠন ছাত্রদল। তাই গত ১ লা জানুয়ারী মঙ্গলবার তাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী থাকলেও কোন ধরনের কর্মসূচি দেয়নি সংগঠনটি।
এমনকি কেন্দ্রীয় ছাত্রদলও কোন কর্মসূচি গ্রহণ করেনি।

এদিকে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর-দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের ব্যানারেও কোন কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায় নি নেতাকর্মীদের। ছাত্রদলের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, একাদশ সংসদ নির্বাচনে পরজয়ের হতাশা কাজ করছে তাদের মাঝে। তাছাড়া সংগঠনের অধিকাংশ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রয়েছে মামলা। ফলে ইচ্ছে থাকলেও গ্রেপ্তার এড়াতে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি পালন করেনি তারা।

প্রসঙ্গত, ১৯৭৯ সালের ১ জানুয়ারি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ছাত্রদল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। প্রতিবছর এই দিনে কেন্দ্রসহ সারাদেশের ছাত্রদলের কর্মীরা নানা কর্মসূচি পালন করতো। এর মধ্যে র‌্যালি, কেক কাটা, দলটির প্রতিষ্ঠাতার মাজারে পুস্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভাসহ ছিল উল্লেখযোগ্য কর্মসূচি। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির সিনিয়র নেতারাও যোগ দিতেন। তবে এবার তেমনটি দেখা যায় নি।

এদিকে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের তৃণমূল কর্মীদের অভিযোগ, গত প্রায় এক মাস ধরেই আত্মগোপনে আছেন নগর ছাত্রদলের সভাপতি গাজী সিরাজ। কারাবন্দি নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদত হোসেনের ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত এ ছাত্রদল নেতাকে মাঠের কর্মীরা পান না। কেবল মাঝেমধ্যে ফেসবুকে পোস্ট করেই জানান দেন গ্রেপ্তার হননি তিনি। তাছাড়া গত বছর নগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক হওয়ার থেকে ছাত্রদলের কার্যক্রমে প্রায় নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন তিনি। এছাড়া নগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলুকে করা হয়েছে নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক। ফলে তিনিও ছাত্রদলের কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয়।

প্রসঙ্গত, নগর ছাত্রদলের কমিটি গঠন করা হয়েছিল ২০১৩ সালের ১১ জুলাই। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে কোন ধরনের কর্মসূচি পালন না করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু বলেন, আমি তো এখন স্বেচ্ছাসেবক দলে আছি। ছাত্রদলের নতুন কমিটি হবে। নতুন নেতৃত্ব আসবে। তাছাড়া কেন্দ্রীয় কোন কর্মসূচি ছিল না। অনেকে বিক্ষিপ্তভাবে পালন করেছে। জুনিয়রদের অনেকে বিপ্লব উদ্যানে ফুল দিতে চেয়েছিল এবং পার্টি অফিসে কেক কাটতে চেয়েছিল। কিন্তু অনুমতির কারণে পারে নি। তাছাড়া নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা আছে। সেজন্যও একটু সংযত। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির পরাজয়ে হতাশ নন বলেও দাবি করেন তিনি। এ বিষয়ে জানার জন্য একাধিকবার যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি নগর ছাত্রদলের সভাপতি গাজী সিরাজকে। তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

জানতে চাইলে নগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু বলেন, ‘তার (গাজী সিরাজ) সঙ্গে আমারও যোগাযোগ নাই। মোবাইল বন্ধ থাকে।’

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রদলের কমিটি গঠন করা হয়েছিল ২০১৬ সালের ১৬ অক্টোবর। বর্তমান কমিটির ব্যানারে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কর্মসূচি পালন না করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি জাহিদুল আফসার জুয়েল বলেন, কেন্দ্রীয় কোন কর্মসূচি ছিল না। আবার আমাদের পালন করতেও মানা করেনি। কিন্তু একটা নির্বাচন গেল, আবার ম্যাডামও (বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া) জেলে। তাই আমরা পালন করিনি। কারণ, গতবার আমরা পালন করেছিলাম। সেবার কিন্তু ম্যাাডম জেলের বাইরে ছিলেন।

‘নির্বাচনে পরাজয়ের হতাশা থেকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি পালন করেন নি? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘হতাশ হবো কেন? রাজনীতি তো কোন প্রকল্প না। প্রকল্প শেষ, লাভ-ক্ষতি দেখে গুটিয়ে নিলাম’।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের বিদ্যমান কমিটি গঠন করা হয়েছিল ২০১৭ সালের ৩ আগস্ট। এ কমিটির সভাপতি শহীদুল আলম শহীদ বলেন, ‘প্রহসনের নির্বাচনের প্রতিবাদে কোন কর্মসূচি পালন করিনি। কেন্দ্রীয়ভাবেও কোন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়নি। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সাধারণত কেক কাটা হয়। মানে একধরনের উৎসব থাকে। দুইদিন আগে যে নির্বাচন হয়েছে তা বর্জন করেছে ঐক্যফ্রন্ট। কারণ, এটা ছিল এক ধরনের ধোঁকা দেয়া। তাছাড়া দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের অনেক নেতাকর্মী মিথ্যা মামলায় জেলে আছেন।’ এদিকে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কর্মসূচি পালন করা হয়েছে দাবি করে গণমাধ্যমে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, গতকাল বাদে যোহর হযরত মিসকিন শাহ মাজারে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। নিজেদের ছাত্রদল নেতা পরিচয় দিয়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কামরুল হাসান তালুকদার, জাফরুল হাসান রানা, বশিরুল ইসলাম, জসিম উদ্দিন হিমেল, জি এম সালাউদ্দিন কাদের আসাদ, মোহাম্মদ এসকান্দর, কাজী সালাউদ্দিন, তারেকুল ইসলাম, মোসাদ্দেক হাসান, বোরহান উদ্দিন, মাইনুর রহমান হৃদয়, আরিফুল ইসলাম রিয়াদ, রাফসান আহমেদ প্রমুখ সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে জসিম উদ্দিন হিমেল বলেন, নগর কমিটি নামে আছে। কাজে নাই। আমরা মনের টানে পালন করেছি। দায়বদ্ধতা থেকে করেছি। মিলাদ মাহফিলে আমাদের চেয়ারপার্সন এবং নগর বিএনপির সভাপতি ডা: শাহাদাত হোসেন সহ কারাবন্দী নেতৃবৃন্দের সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু এবং দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এদিকে গতকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে একটি পোস্ট দেন সংগঠনটির নগর কমিটির সাবেক নেতা শাহেদ আকবর। এতে তিনি বর্তমান ছাত্রদলের পুরনো নেতৃত্বকে বাদ দিয়ে ৩২ বছর বয়স নির্ধারণ করে দেশের ৭৭টি ইউনিট থানা কেন্দ্রিয় কমিটি গঠন করার প্রস্তাব করেন।