ডেস্ক নিউজ:
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে নতুন নির্বাচনের দাবি জানালেও খুব শিগগিরই আন্দোলনে নামছে না বিএনপি। দলটির সিনিয়র নেতারা মনে করছেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে নির্বাচনে ‘ভোট ডাকাতি’র অভিযোগে কর্মসূচি দিলেও সক্রিয়ভাবে রাজপথে নামা সঠিক হবে না। এক্ষেত্রে তারা মনে করছেন, আগামী অন্তত তিন থেকে চার মাস নেতাকর্মীদের বিশ্রাম দেওয়া উচিত এবং আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক আচরণ ও কৌশল পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। এরপরই নতুন নির্বাচনের দাবি নিয়ে সামনে আসতে চাইছেন বিএনপি নেতারা।

সোমবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকালে প্রায় দুই ঘণ্টার বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা এসব বিষয়ে একমত হন। একইসঙ্গে নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা আবারও আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন বলে জানা গেছে।

গতকাল রবিবার অনুষ্ঠিত একাদশ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। এ নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ অনুসন্ধানসহ ক্ষমতাসীনদের ‘ভোট ডাকাতি’র বিষয়ে আলোচনাসহ পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে স্থায়ী কমিটি সোমবার বৈঠকে বসে।

নির্বাচনপরবর্তী প্রথম এ বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা একে অপরের খোঁজখবর নেন। মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও মঈন খান নির্বাচনি প্রচারণায় মারামারি শিকার হওয়ায় বাকি সদস্যরা তাদের সহমর্মিতা জানান।

স্থায়ী কমিটির দুই সদস্যের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, খুব শিগগিরই পরবর্তী রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে না। সারাদেশে অন্তত ২১ হাজার নেতাকর্মী গ্রেফতার থাকায় তাদের মুক্তি নিশ্চিত হওয়ার পরই পরবর্তী করণীয় সামনে আনবে বিএনপি।

স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, অন্তত কয়েক হাজার নেতাকর্মী আছে, যাদের গ্রেফতার দেখানো হয়নি, কিন্তু তাদের আটক রাখা হয়েছে। এই নেতাদের জীবন বিপন্ন হয়ে যাবে যদি ভুল কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে আপাতত নীরবেই থাকবে বিএনপি।

স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলা ট্রিবউনকে বলেন, ‘আমরা পুরো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবো। এরপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

বৈঠকসূত্র জানায়, আজকের বৈঠকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির দলীয় প্রার্থীদের শপথ না গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। এতে প্রত্যেক সদস্য একমত হন। দ্বিতীয়ত, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের পরবর্তী করণীয় কী হবে, এ নিয়েও আলোচনা হয়। এক্ষেত্রে ঐক্যফ্রন্টের শরিকরা চাইলে ফ্রন্ট থাকবে, না হলে থাকবে না। তবে ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক গণফোরামের দুই সদস্য সুলতান মো. মনসুর ও মোকাব্বির খান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় তাদের ওপর নজর রাখবে বিএনপি। তারা সংসদে যেতে চাইলেও বাধা দেওয়া হবে না বলে জানান এক সদস্য। তৃতীয়ত, নির্বাচনের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমকে অবহিত করবে বিএনপি।

জানা গেছে, আগামীকাল মঙ্গলবার (১ জানুয়ারি) বিদেশি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য।

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য জানান, আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে। তারা সরকার গঠন করবে। এই সরকারের নীতি কী হয়, আচরণ কী— এসব দেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আগামীতে যেকোনও ধরনের কর্মসূচি দেওয়ার আগে নেতাকর্মীদের শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নেওয়া হবে। তাদের যে পরিমাণ হয়রানি করা হয়েছে তাতে বিশ্রাম প্রয়োজন। এরপর সংগঠন পুনর্গঠনে মনোযোগ দিতে হবে। এরপর আসবে পরবর্তী নির্বাচনের প্রশ্ন।

স্থায়ী কমিটির প্রবীণ এক সদস্য বলেন, ‘আমি তো মনে করি নেতৃত্বের পুনর্গঠন হওয়া দরকার।’ আরেক সদস্য বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের এখন কাজ হবে দেশে যারা কাজ করছেন তাদের ওপর বিশ্বাস রাখা এবং পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে স্থায়ী কমিটির বর্তমান সদস্যদের ওপর ভরসা করা।’

এদিকে, সোমবার রাতে পৌনে সাতটার দিকে ২০ দলীয় জোটের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। নজরুল ইসলাম খান সভাপতিত্বে হওয়া এ বৈঠকে গতকাল রবিবার অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন পর্যালোচনা করা হয়। বৈঠকে জোটের শরিক দলের নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এতে দুটি বিষয়ে প্রস্তাব আসে। প্রথমত, সারাদেশের ৩০০ আসনে বিএনপি, ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের প্রার্থীদের ঢাকায় ডেকে আনা এবং তাদের স্ব স্ব এলাকার বিবরণ নেওয়া। সেই বিবরণ সংগৃহীত হলে তাদের গণমাধ্যমের মুখোমুখি করা। বিশ্ব গণমাধ্যমকে জানানো যে, নির্বাচনের দিন ও তার আগে কী কী ধরনের সমস্যা তৈরি করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আলোচনা করার পর আবারও ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। এরপর নতুন কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বিএনপি।

প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী জোটের বৈঠকে জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য আবদুল হালিম, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ, কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমান, জমিয়তের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মহিউদ্দিন ইকরাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।