বিশেষ প্রতিনিধি:

৩১ ডিসেম্বর, হোপ ফাউন্ডেশনের ১৯তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। সকালে কক্সবাজারের চেন্দায় প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দ্বারা জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে দিনের কার্যক্রম শুরু করে। দুপুরে কনফারেন্স রুমে হোপ ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ কান্ট্রি ডাইরেক্টর কে এম জাহিদুজ্জামান এর সভাপতিত্বে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং এতে সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা শেষে কান্ট্রি ডাইরেক্টর সম্মিলিতভাবে হোপ ফাউন্ডেশনের ১৯তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী’র কেক কাটেন।

বিগত দেড় যুগেরও বেশী সময় ধরে হোপ ফাউন্ডেশন কক্্রবাজারের দরিদ্র ও অসহায় জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে আসছে। আমিরকায় বসবাসরত কক্্রবাজারে কৃতি সন্তান ডা: ইফতিখার মাহমুদ ১৯৯৯ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর কক্্রবাজারের বাংলাবাজার নামক স্থানে মা ও শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট ডা: ইফতিখার মাহমুদের মহৎ হৃদয় এবং দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সহায়তা সুদীর্ঘ ১৯ বছরের এই পথচলা। আর এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় হোপ ফাউন্ডেশন বিনামুল্যে এবং স্বল্পমুল্যে দরিদ্র মানুষের জন্য চিকিৎসা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে অগ্রনী ভুমিকা পালন করছে এবং চিকিৎসা সেবাকে দরিদ্র মানুষের দারগোড়ায় নিয়ে গেছে। সুযোগ-সুবিধাবঞ্চিত এলাকাসমুহে হাসপাতাল, হোপ বার্থ সেন্টার এবং হোপ ক্লিনিক স্থাপনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম চালুর মাধ্যমে অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অধিকতর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করে যাচ্ছে। বিগত ১৯ বছরে হোপ ফাউন্ডেশনের প্রাপ্তির কিছু অংশ নি¤েœ তুলে ধরা হলো:

হোপ হাসাপাতালের প্রতিষ্ঠা: কক্সবাজারের চেন্দায়, দক্ষিন মিঠাছড়িতে ৪০ শষ্যাবিশিষ্ট হোপ হাসপাতালটিতে মা ও শিশুদের স্বাস্থ্য সেবার পাশাপাশি সাধারন চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এখানে আধুনিক চিকিৎসা সেবার জন্য দুইটি অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার, ল্যাব, এক্স-রে, ইসিজি, আলট্রাসোনগ্রামসহ সকল সুবিধা বিদ্যমান। তিন জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারসহ মোট ১০ জন ডাক্তার হাসপাতালে কর্মরত আছে। প্রতিমাসে গড়ে ১৫০০ জন রোগীর চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। এই হাসপাতালে সম্পূন্ন বিনামুল্যে মহিলাদের ফিস্টুলা, ঠোঁটকাটা, তালুফাটা এবং আগুনে পোড়া রোগীদের চিকিৎসা প্রদান করা হয়ে থাকে।

হোপ মেডিক্যাল সেন্টার এবং হোপ বার্থ সেন্টার: সুযোগ-সুবিধাবঞ্চিত এলাকাসমুহে দরিদ্র ও অসহায় মানুষের দাড়গোড়ায় চিকিৎসা সেবা এবং নিরাপদ প্রসব সেবা পৌঁছানোর লক্ষ্যেই হোপ ফাউন্ডেশন প্রত্যন্ত অঞ্চলে ৪টি মেডিক্যাল সেন্টার এবং ৫টি বার্থ সেন্টার স্থাপন করেছে । ডাক্তার, মিডওয়াইফ এবং প্যারামেডিক দ্বারা এ সকল সেন্টারসমুহ পরিচালিত হচ্ছে।

হোপ ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি স্কুল: মাতৃমৃত্যু ও নবজাতকের মৃত্যুহার কমানোর এবং উন্নত মাতৃসেবা প্রদানের জন্য দক্ষ এবং প্রশিক্ষিত মিডওয়াইফ তৈরীর করার লক্ষ্যে ২০১২ সাল থেকে তিন বৎসর মেয়াদী ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াফারি কোর্স পরিচালনা করছে। এখান হতে প্রতি বছর ৩০ জন দক্ষ এবং প্রশিক্ষিত মিডওয়াইফ তৈরীর হচ্ছে।

হোপ ট্রেনিং সেন্টার: মানসম্মত চিকিৎসা সেবার প্রদানের জন্য প্রশিক্ষিত ডাক্তার, নার্স, মিডওয়াইফসহ দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে হোপ প্রতিষ্ঠা করেছে হোপ ট্রেনিং এন্ড রির্সোস সেন্টার। অভিজ্ঞ ট্রেনিং কোঅর্ডিনেটর এই সকল ট্রেনিংসমুহ আয়োজন করে থাকে।

হোপ মেটারনিটি এন্ড ফিস্টুলা সেন্টার: বাংলাদেশের একমাত্র ৭৫ শয্যাবিশিষ্ট হোপ মেটারনিটি এন্ড ফিস্টুলা সেন্টার স্থাপনের কাজ শুরু করা হয়েছে ২০১৬ সালে। ২০২০ সালে এই ৬ তলা বিশিষ্ট হাসপাতালের কাজ শেষ হবে। এখানে ৫০ শয্যা মেটারনিটি ওয়ার্ড, ১০ শয্যা নবজাতক ওয়ার্ড, ১৫ শয্যার ফিস্টুলা ওয়ার্ড, ২টি আধুনিক ল্যাব, ২টি অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার, ২টি ডেলিভারী রুম এবং ইমারজেন্সি সেন্টার থাকবে।

মায়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গা আশ্রয়প্রার্থীদের স্বাস্থ্য সেবা প্রদান: হোপ ফাউন্ডেশন বিগত ১১ই সেপ্টেম্বর ২০১৭ সাল থেকে বাস্তচ্যুত রোহিঙ্গা আশ্রয়প্রার্থীদের মাঝে স্বাস্থ্য সেবায় কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে ৯টি স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রসমুহ এবং একটি ৫০ শষ্যাবিশিষ্ট হোপ ফিল্ড হসপিটাল ফর উইমেন স্থাপন করে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান কওে যাচ্ছে। দেশী এনজিও হিসাবে হোপ ফাউন্ডেশনই একমাত্র প্রতিষ্ঠান যারা কিনা এত বৃহৎ পরিসরে রোহিঙ্গা আশ্রয়প্রার্থীদের মাঝে কাজ করছে অর্থাৎ হোপ ফাউন্ডেশনই একমাত্র প্রতিষ্ঠান যারা মধুরছড়া নামক স্থানে (ক্যাম্প-৪) একটি ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন করেছে। এই হাসপাতালের মাধ্যমে কমপক্ষে ২.৫ লক্ষ রোহিঙ্গা আশ্রয়প্রার্থীদের স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করবে।

এছাড়াও হোপ ফাউন্ডেশন নি¤েœ উল্লেখিত প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করছে:

সেইফ মাদারহুড প্রকল্পের মাধ্যমে মাতৃস্বাস্থ্য সেবা প্রদান;
ফিস্টুলা ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ফিস্টুলা রোগীদের ফ্রি চিকিৎসা/অপারেশন;
বেসিক নিডস্ এর মায়েদের প্রলেপ্স অপারেশন;
স্মাইল ট্রেইনের মাধ্যমে ঠোঁটকাটা এবং তালুফাটা অপারেশন;
রিসার্জ ইন্টারনেশন্যালের মাধ্যমে আগুনে পোড়া রোগীদের সার্জারী করা।
হোপ ফাউন্ডেশনের প্রত্যাশা:

মাতৃমৃৃত্যু, নবজাতক ও শিশু মৃত্যুহার কমানো এবং কক্সবাজার জেলাকে মায়েদের প্রসবজনিত ফিস্টুলা থেকে মুক্ত করাই হচ্ছে হোপ ফাউন্ডেশনের মুল লক্ষ্য। আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে কক্্রবাজার জেলায় মাতৃমৃৃত্যু, নবজাতক ও শিশু মৃত্যুহার সর্বনি¤œ পর্যায়ে এনে বাংলাদেশের একটি মডেল প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করা, পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের মাতৃমৃৃত্যু, নবজাতক ও শিশু মৃত্যুহার ২০৩০ সালের মধ্যে লক্ষিত মাত্রায় কমিয়ে ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা’ অর্জনে সহায়তা করার জন্যই হোপ ফাউন্ডেশন কাজ করে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকবে- আর এটাই হোক ১৯তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে হোপ ফাউন্ডেশনের অঙ্গীকার।