নীতিশ বড়ুয়া , রামু :

অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রামু উপজেলায় রেকর্ড সংখ্যক ভোট পেয়েছেন, আলহাজ¦ সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি। ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে আলহাজ¦ সাইমুম সরওয়ার কমল পেয়েছেন, ১ লাখ ২৬ হাজার ৪২৬ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি বিএনপি দলীয় লুৎফুর রহমান কাজল পেয়েছেন মাত্র ১৬ হাজার ৬৮৮ ভোট।

রামুতে বিপুল ভোটে বিজয়ী হওয়ার কারণ বিশ্লেষন করে নেতাকর্মীরা বলেন, বিগত ১০ বছরে বেশী সময় সার্বক্ষণিক এলাকায় অবস্থান করে মানুষের সুখে-দুখে পাশে ছিলেন এমপি কমল। কয়েকটি ভয়াবহ বন্যায় কমলের তৎপরতা এখনো মানুষের কাছে স্মরণীয় হয়ে আছে। এছাড়া যে কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ, সামাজিক সমস্যা দূরীকরণে কমলের ভুমিকা এবং যে কোন প্রাতিষ্ঠানিক-সামাজিক অনুষ্ঠানাদিতে সরব উপস্থিতির কারনে কমলের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ব্যাপক। অপরদিকে বিএনপি নেতা লুৎফুর রহমান কাজল কখনো বন্যা কবলিত মানুষের পাশে ছুটে যাননি। এমনকি কক্সবাজার-রামুবাসীর সুখে-দুখে কিংবা সামাজিক অনুষ্ঠানাদিতেও তিনি উপস্থিত থাকতেন না।

বিগত ৫ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে এমপি কমলের নেতৃত্বে রামু উপজেলা অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সরকারিকরণ করা হয়েছে রামুর একমাত্র উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রামু কলেজ এবং ঐতিহ্যবাহি খিজারী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়। শিক্ষার জন্য বিদেশগামী শিক্ষার্থীদের তিনি অর্থ সহায়তা দিয়ে আসছেন। বিগত ৫ বছরে কমলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় রামুর অনেক স্কুল, কলেজ ও মাদরাসায় নতুন ভবন নির্মিত হয়েছে। ইতিপূর্বে বিএনপি দলীয় লুৎফুর রহমান কাজল ৫ বছর সংসদ সদস্য থাকাকালে এখানকার শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে কোন ভুমিকা রাখেননি।

এছাড়া বিগত ৫ বছরে এমপি কমলের প্রচেষ্টায় রামুতে স্থায়ী সেনানিবাস স্থাপন, রেল লাইন, বিকেএসপি, বাঁকখালী নদী ড্রেজিং সহ অনেক মেঘা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। উপজেলার ১১ ইউনিয়নের বিদ্যুৎবিহীন প্রত্যন্ত এলাকায় বিদ্যুতায়ন করা হয়েছে। উপজেলার অনেক উপ-সড়ক ও গ্রামীন সড়ক পাকাকরণ করা হয়েছে। উপজেলার চাকমারকুল-রাজারকুল সংযোগ সেতু এবং রাজারকুল-মনিরঝিল সংযোগ সেতুর কাজ শুরু হয়েছে। বিএনপি নেতা লুৎফুর রহমান কাজল ৫ বছর সংসদ সদস্য থাকাকালে সড়ক-সেতু নির্মাণে কোন প্রদক্ষেপ নেননি। এনিয়ে সংসদে দাবি-দাওয়া নিয়ে কোন বক্তব্যও দেননি তিনি। তাঁর সময়কালে তিনি এমপির বরাদ্ধ থেকে ঈদগড়ে বউঘাটে নিজের রাবার বাগানে যাওয়ার জন্য একটি ব্রিজ করেছেন এবং খুনিয়াপালংয়ের নিরিবিলি নিজের মালিকানাধিন হ্যাচারিতে যাওয়ার জন্য একটি সড়ক পাকা ও সেতু তৈরী করেছেন।

রামুতে জাতীয় শোক দিবস সহ বিভিন্ন উপলক্ষ্যে বৃহৎ মেজবান আয়োজন করে গরীব-দুঃস্থ মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করেন এমপি কমল। এছাড়া তিনি কক্সবাজার-রামুতে বৃহৎ ইফতার মাহফিল আয়োজন করে ব্যাপক সাড়া জাগান। ২০১৭ সালে অসহায় রোহিঙ্গাদের জন্য ১০০ ট্রাক ত্রান-সামগ্রী নিয়ে তিনি সারাদেশে তাক লাগিয়ে দেন।

এমপি কমল বরাবরই কর্মীবান্ধব। তিনি যেখানে যান কর্মীদের সম্পৃক্ত রাখার চেষ্টা করেন। তৃনমুলের কর্মীরা এমপি কমলের সাথে সহজেই যোগাযোগ করতে পারেন। আর এসব কারনে এমপি কমলের অনেক কর্মী এখন বিভিন্ন ইউনিয়নে চেয়ারম্যান ও মেম্বার নির্বাচিত হয়ে সমাজে প্রতিনিধিত্ব করছেন। রামুর মন্ডলপাড়ার ওসমান ভবনে এমপি কমলের সাথে নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষের সাথে যোগাযোগে কোন প্রতিবন্ধকতা নেই। বাসায় থাকলেই এমপি কমলের সাথে অনাসায়ে কথা বলার সুযোগ পান সবাই। এখানে চলে আথিতেয়তা। যে কোন সাধারণ মানুষ এখানে এসে এমপি কমলে সাথে দেখা করার সুযোগ পান। এমপি কমল রিক্সা, টেক্সি, জীপ সহ সকল পরিবহন শ্রমিক এবং দিনমজুরসহ যে কোন শ্রেণিপেশার মানুষের সাথে সর্বদা মিলেমিশে থাকতে ভালোবাসেন। তাই পথিমধ্যে দেখা হলেই বুকে জড়ান সবাইকে। এমপি কমল বিগত ৫ বছরে উপজেলার প্রায় ৮ হাজার ছাত্র-যুব জনগোষ্টিকে সরকারি-বেসরকারি চাকরি দিয়েছেন।

ইতিপূর্বে বিএনপি দলীয় লুৎফুর রহমান কাজল ৫ বছর সংসদ সদস্য থাকাকালে এলাকায় কোন উন্ননয় কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করেননি। কেবল উন্নয়ন কর্মকান্ড নয়, লুৎফুর রহমান কাজল এলাকার মানুষের কোন দূঃসময়েও পাশে থাকতেন না। দলের নেতা ব্যতীত কোন কর্মীদের সাথে তাঁর সম্পৃক্ততা ছিলো না। এসব কারনেই রামুতে এবার লুৎফুর রহমান কাজলের ভরাডুবি হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনীতি সচেতন মহল।

সাইমুম সরওয়ার কমলকে বিজয়ী করতে এবারই প্রথম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগ সভাপতি রিয়াজ উল আলম, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আলী হোসেন, ১১ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ ও সহযোগি সংগঠনের সকল নেতৃবৃন্দ, ১১ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সাবেক চেয়ারম্যান, জেলা পরিষদ সদস্য, বর্তমান ও সাবেক মেম্বারের নেতৃত্বে পুরো রামুবাসী ছিলো ঐক্যবদ্ধ।

সম্প্রতি নির্বাচনকে ঘিরে ডাক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত মহা-পরিচারক আবদুল মোমেন চৌধুরীর নেতৃত্বে সাইমুম সরওয়ার আলম চৌধুরীর পারিবার গোষ্ঠিগতভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করেছে। এরমধ্যে সাংসদ কমলের দুই বড় বোন কানিজ এবং কুমুকুম নির্বাচনী প্রচারনায় সরব ভুমিকা রাখেন। এছাড়া সাংসদ কমলের সহধর্মিনী সৈয়দা সেলিনা সরওয়ার তপশীল ঘোষনার পর থেকে নির্বাচনের আগমুহুর্ত পর্যন্ত পুরো মাঠ চষে বেড়ান।

এছাড়া কমলের গোষ্ঠিগত বড় ভাই বিশিষ্ট ব্যবসায়ি মোস্তাক আহমদ সওদাগর ও ফরিদুল আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে পৃথক পৃথক দল গণসংযোগ করেন। এসব কারনে রামু উপজেলায় স্মরণকালের সবচেয়ে বেশী ভোট পেয়েছেন সাইমুম সরওয়ার কমল।