ডেস্ক নিউজ:
চরম প্রতিকূলতা সত্ত্বেও নির্বাচনের মাঠেই শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে চাইছে বিএনপি। দলটির হাইকমান্ড নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ অবস্থানে থাকলেও এখনই হাল ছাড়তে নারাজ। নির্বাচন থেকে সরে আসার সিদ্ধান্তও নেবে না তারা। যেকোনো মুহূর্তে পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে পারে এমন বার্তাও দিচ্ছেন শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ। কেউ কেউ মনে করছেন, ক্ষমতাসীন দলের প্রতাপ সামলে নির্বাচনের দিন মাঠে থাকতে পারলে ভালো ফলও হতে পারে।

গণসংযোগ শুরু হওয়ার পর থেকে বিএনপির প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, মামলা ও গ্রেফতার অব্যাহত রয়েছে। ভোটের প্রচারে নেমে ধানের শীষের প্রার্থীদের মধ্যে ঢাকায় মির্জা আব্বাস, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সুব্রত চৌধুরী, আফরোজা আব্বাস, কেরানীগঞ্জে গয়েশ্বর রায়, নোয়াখালীতে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জয়নুল আবদিন ফারুক, ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, লক্ষ্মীপুরে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, নরসিংদীতে ড. আবদুল মঈন খান, ভোলায় মেজর (অব:) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, শরীয়তপুরে মিয়া নুরউদ্দিন আহমেদ অপু, কিশোরগঞ্জে শরিফুল আলম, মেজর (অব:) আক্তারুজ্জামান, শেরপুরে ডা: সানসিলা জেবরিন প্রিয়াংকা হামলার শিকার হয়েছেন। বিএনপির তথ্য মতে, তফসিল ঘোষণার পর এ পর্যন্ত সাত হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
দেশজুড়ে এ রকম সহিংস পরিস্থিতি সত্ত্বেও নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্যে থেকে ঐক্যফ্রন্টকে সাথে নিয়ে যতটুকু সম্ভব সাংগঠনিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের সাথে বৈঠক করেছে ঐক্যফ্রন্ট। ফ্রন্টের অভিযোগ আমলে না নেয়ায় ওই বৈঠক থেকে বেরিয়ে আসে তারা। সন্ধ্যার পর গুলশান কার্যালয়ে বিএনপি ও ফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা বৈঠক করেছেন। বৈঠকে মাঠে টিকে থাকার ওপরই জোর দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

বৈঠকে অংশ নেয়া ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির একজন সিনিয়র নেতা জানান, নির্বাচনের পরিবেশ না থাকায় তারা ক্ষুব্ধ। এ অবস্থায় আগামীকাল বৃহস্পতিবার শীর্ষনেতাদের বৈঠকে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবেন তারা।

ঐক্যফ্রন্ট স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বৃহস্পতিবার সবাই মিলে বসে আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত জানাব। তবে এখন পর্যন্ত আমরা নির্বাচনে আছি।
বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, নির্বাচনের শেষ দুই দিনকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তাদের আশা, ভোটের দিন ক্ষমতাসীন দলের একতরফা মাঠ দখলে নেয়ার প্রচেষ্টা রুখে দিতে পারলে, বিফল হতে হবে না। এ কারণে গ্রেফতার এড়িয়ে ভোটের দিন কেন্দ্রে পর্যাপ্তসংখ্যক নেতাকর্মী রাখার কৌশল নিয়ে এগোচ্ছেন তারা।

এরই মধ্যে রাজধানীতে সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে ঐক্যফ্রন্ট। যদিও আগামীকালের ওই সমাবেশের অনুমতি এখনো মিলেনি। সমাবেশের এক প্রস্তুতি সভায় চলমান প্রতিকূল পরিবেশেও ধৈর্যের সাথে প্রচারণা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ভোটের ফলাফল গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত যেকোনো মূল্যে কেন্দ্রে অবস্থান করতে হবে এবং কোনো কেন্দ্র এজেন্ট শূন্য রাখা যাবে না।
বিএনপির শীর্ষ এক নেতা জানান, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রভাবশালী একটি দেশ পরোক্ষভাবে নানা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। ওই নেতা বলেন, সেই চাপ মোকাবেলা করতেই নির্বাচনের দিনের আগেই মাঠ ফাঁকা করে ফেলতে চায় আওয়ামী লীগ। এ ক্ষেত্রে তারা পুলিশকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।

সিনিয়র এক নেতা বলেন, নির্বাচনের আগের দিন সার্বিক পরিস্থিতি আরো দৃশ্যমান হবে। যদি সরকার ‘যেনতেনভাবে’ একটি নির্বাচন করতে চায়, তাহলে পরিস্থিতি সাংঘর্ষিক হয়ে উঠতে পারে।
ঐক্যফন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন ইতোমধ্যে এ বিষয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচন নিরপেক্ষ না হলে মহাসঙ্কটে পড়বে দেশ। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল এক নির্বাচনী সভায় বলেছেন, ভয়ভীতি দেখিয়ে জনসাধারণের ভোটকেন্দ্রে যাওয়া সরকার রুখতে পারবে না।

জানা গেছে, মামলা-হামলা চলমান থাকলেও আজ ও আগামীকাল সারা দেশে বিএনপি-ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীদের গণসংযোগ চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে। যে কৌশলেই হোক মাঠে থাকতে বলা হয়েছে সবাইকে।