“বখশিস বখরা নয়!”

প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০৬:১০ , আপডেট: ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০৬:১০

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে


আলমগীর মাহমুদ :

অদ্ভুত ‘বদলে’ আছি আমরা।এই বদলে জীবনে যাহ হিত,কল্যাণকর বলে গুরুজনেরা ছেলেবেলায় শিখিয়েছিলেন আজ কোনটিই মিলছেনাতো মিলছে না, আরো যোগ হচ্ছে নুতন একটা প্রশ্নবোধক চিহ্নের। মানুষের চিন্তার এই বদলে বাংলার বুকে পাকিস্তানী অচলমুদ্রা অচলমুদ্রা বনতে চলেছি।এখন ভাল থাকনর লায়ও কিছু খরচপাতি লাগে।

‘ভাল’ ‘খারাপ’।শব্দ দুটি একটি আর একটির বিপরীত। গুণবিচারেই হতো নির্ধারণ। “ভাল” শব্দটা ভাল গুণের অধিকারীদের কপালে জুটত।ইদানিং শব্দটা সতীত্ব হারিয়েছে।প্রয়োগ ক্ষেত্রে এসেছে বিশাল পরিবর্তন। সুবিধাই হয়ে আছে ভাল শব্দটার প্রয়োগের নিত্তি।

যে যার থেকে যতক্ষণ সুবিধা নিতে পারে সে তারে ততক্ষণ “ভাল” বলে।দিতে না পারলে ভাল বলা আদম খোলা পেট্রোলের মতো যায় বদলে।রূপ বদলের পালায় খানিকেই একই মুখে”খারাপ” শব্দটি মুখে আনতে কসুর করে না।লজ্জা,বিবেক বেওয়ারিশ লাশের মতই রয় পড়ে।

আদমসন্তানের এমন মতলবী পরিবর্তনে গা ভাসিয়ে গেলে, সূর্যরে যিনি সঠিক সময়ে উদয়, অস্ত করান।রাতের পৃথিবী পনের দিন অন্ধকার। পনের দিন আলো রাখেন।একদিন পূর্ণিমা, একদিন আমাবস্যা।সাগরে জোয়ার ভাটা করান। সাগরের মাছকে খাবার জুগিয়ে অঙ্গসৌষ্টব বড় করান।বৃষ্টি বর্ষনে সবুজ ফলান।এসব কর্মের নিয়মতান্ত্রিকতায় সিষ্টেম লসে পড়ে যার কোনদিনই পৃথিবীবাসীকে বলতে হয়নি ” SORRY “।

উনি গোসসা হবেন।আমারে বাদ দিবেন।অকৃতজ্ঞ হয়ে পড়বো ভাবনায় মতলববাজীর কারখানা থেকে হাত পা গুটিয়ে নিয়েছিলুম।ঠিক এমনি দিনে ছাত্র কমরুদ্দিন মুকুলের দরদের আবদারে পলাশ বড়ুয়ার প্রেষণায় মতলববাজীর কারখানায় ম্যানেজার বনে যাই।

ওদের বন্ধু হয়ে ট্রেনিং, ট্রোনিং এ, সময় কাটিয়ে নিজেরে নুতন মোড়কে মোড়াতে পদ্মার ওপারে গিয়েছিলাম। মা” র অছিয়ত যেখানে যাস গরীবের মনতুষ্টিতে মরিয়া থাকিস।মানুষের মনের দোয়া অসাধ্য সাধনের দুয়ার খুলে দেয়।

মা” র কথা মনে করে যারা ক’দিন ডাইনিং হলে খাবার কর্ম নির্বাহ করে তাঁদেরকে পাঁচশত টাকা বখশিশ দিয়ে ব্যাগগুছিয়ে ফিরছি হঠাৎ একদল আমার সামনে দাঁড়িয়ে বেশ বেসরিক ভঙ্গিতে “আমরাতো মানুষ ১৩জন।পাঁচশ কি তের জনের!

আমি কিছু বলার আগে ডাইনিং এ নাস্তারত অচিন ক’জন ওদের বেশ ধমকের স্বরে ” তোদের যাহ দিছে ভাগ করে নিবি, ওনারে স্যার বলে সন্মোধনে হাতের ব্যাগটা আগিয়ে দিবি।গাড়ীতে উঠার সময় ব্যাগটা উনার হাতে দিয়ে মুচকি হাসির বিনিময়ে কইবি “স্যার আবার আইসেন”। এইতো ভদ্রতা।

বেশ রাগতসুরে.. যিনি দিয়ে গেলেন তারে তোরা মিছিলে পথ আঁটকালি।যারা তোদের ধন্যবাদ ও না দিয়ে গেল তারাতো দেহি উত্তম কাজ করে গেল।আমারে লক্ষ্য করে কইল ” ভাই, যান।কিছু মনে কইরেন না।গরীবের সব সমস্যা।আগের দিনে তারা যাহ আয় তাহ নিয়ে আলহামদুলিল্লাহ কইতো।এখন তাদের ভাবনায় এসেছে বদল।

বিলাসবহুল গাড়ীতে ফিরছি উখিয়া গন্তব্যের শেষ ঠিকানা।উখিয়া স্টেশনের উত্তরে উপজেলার গেইটের পাশে আটকা পড়ি।তখনও ভোর ৫টা।গাড়ির জটলা রাস্তায়।গাড়ি থামল কেউ আর নামে না।আরো ক’কদম যে হাঁটতে হয়।ড্রাইভার নামাতে মরিয়া। কেউ আমলে নিচ্ছে না।আমি বলাতে সবাই নেমে যাচ্ছে ঠিক তবে মন খারাপ।

ড্রাইভার আমার এমন কর্মের উপহার ধন্যবাদতো দূরের কথা বেশ অধিকারের স্বরে কয় “বখশিশ দিবেন না? খানিক বিব্রত হয়ে কিছু বের করতেই ” সবাই আমার হাত থেকে মুদ্রাটা নিয়ে কইতে রয় “ওদের বখশিশের চেয়ে আমাদের নাস্তার মাইনা হলে বহুত উত্তম।
মহান কাজগুলোর সমস্যা অনেক। এসব থেকে বিরত থাকলেই লাভ স্যার!ড্রাইভারের এমন কর্মে তারা বেশ মজা লুটে।ভাবনা, স্যার এবার বুঝুক কার জন্য কি করল এইজন্যইতো আমরা নামতে চাইনি।তাদের মনের অবস্থা বুঝে আমি কইতেই রইলাম ” এই ভুল আমি আর করিব না,আজ থেকে আমি তোমাদেরই দলে।”

লেখকঃ–বিভাগীয় প্রধান। সমাজবিজ্ঞান বিভাগ।উখিয়া কলেজ,কক্সবাজার।
alamgir83cox@gmail.com