তানভিরুল মিরাজ রিপন

আমাদের অভিভাবকরা যখন আমরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে জায়গা না পাওয়ার পর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন তখনও তারা তার সন্তানের কাছে প্রশ্ন করে না যে,

কোন সাবজেক্টটা তুই পড়বি?কি ভালো লাগছে?কোনটাতে আমাদের টাকা পয়সা ছাড়াও কিছু একটা চমক দেখাতে পারবি? তুই মন থেকে কি চাস?আমাদের জন্য নয় তোর সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য তুই কি করবি?

উপরোক্ত প্রশ্নগুলো কোনো অভিভাবক করতে চাননা।২৬ লাখ বেকারের বিশেষ কয়েকটা কারন হয়ে দাড়াচ্ছে-

১)পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগুলো বছর বছর কিছু বিসিএস ক্যাডার তৈয়ার করে আর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক তরুণের স্বপ্ন খুন করে। তাদের বেকার তৈরী করে।কিন্তু জনসম্পদ তৈরী করছেনা।তখন সেসব বুদ্ধিজীবিকা ওয়ালারা দেশের শিক্ষানীতির দিকে আঙুল তোলে।কাগজে লিখে আমরা কাউকে চাকরি দিতে পারবো না।চাকরি কেউ কাউকেই দিবেন না কিন্তু তাকে তো বিসিএস ক্যাডার হওয়া থেকে একটু মুক্ত রাখতে পারেন, মুক্ত রাখতে পারছেন না বলেই সন্দিহান হয়ে হল’এ লাশ পাওয়া যাচ্ছে।অথচ তারা সাবজেক্টটা ফিল করানোর যে দ্বায়িত্বটা নিয়ে থাকে তা তারা পূরন করছেন না।পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলো বেশ কয়েক বছর থেকে মানুষ তৈরী করছে না যা করছে তা মাত্রই বিসিএস ক্যাডার।

২) আমাদের অভিভাবকরা সন্তানদের মেধার দিক অনুযায়ী বিষয় পছন্দ করতে দেননা। তারা মনে করেন লাখ টাকা দিয়ে যখন পড়াচ্ছি তাহলে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারই পড়ায়।অথচ অভিভাবকেরা এই বিষয়টা জানেনা যে এই মুহুর্তে বেকার সর্বোচ্চ জায়গাটা দখল করে আছে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারের শিক্ষার্থীরা।৩১% শতাংশ বেকার ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার।

৩) বছরের পর বছর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে।সেসকল বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে খেলার মাঠ নাই,ছোট একটু করে বসে গল্প করবে সেটা এখানের বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা ভয়ংকর স্বপ্ন৷ টাকা নিবে, এসির তাপমাত্রা বাড়াবে কমাবে,কাগজ ভর্তি নিয়ম দিবে,না মানতে পারলে বের করে দিবে।অথচ ল্যাব নাই, নতুন কিছু করার,ভাবার সময় সুযোগ কোনটাই নাই আবার এমনও হয় যে এতো ঘন ঘন পরীক্ষা নেওয়া হয় যে,মাঝে বিগত প্রশ্ন আবার হুবহু ফটোকপি করে বার করেন।অসংখ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এসবই নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। এখানে দক্ষ জনশক্তি, কর্মঠ জনসম্পদ গড়ে উঠবে?উঠা সম্ভব?

এসবই দেশের বেকারত্ব বৃদ্ধির অন্যতম কারন।

প্রতিজন অভিভাবক একবার অন্তত বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সন্তানকে পাঠানোর আগে এক সপ্তাহ শুধু তার সন্তানের পছন্দ অপছন্দ জানুন পড়ালেখা নিয়ে,পারলে আরো সময় নিন,তখন আপনার সন্তানকে আপনি বোঝতে পারবেন তার প্রকৃতি কি?সে ভালো করবে কোথায়?মাথায় রাখুন ভালো জিপিএ,ভালো সিজিপিএ কাউকে কোথাও স্থান করে দেয় না,সার্টিফিকেট মাত্রই কাগজ এটার মান হলো একটা সাক্ষ্য দেয় আপনার সন্তান অমুখ প্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশুনা করেছে।

বিষয়টা জেনে রাখুন- এ্যাকাডেমিকভাবে যে ভাল করে এবং যে পড়াশুনা করেও বিশ্ব কাপাচ্ছে সে নিজেকে ফিল করতে পারে। যে ফিল করতে পারে নিজেকে তাকে আটকে রাখা যায় না।

তানভিরুল মিরাজ রিপন
টকশো উপস্থাপক/ সিভয়েস২৪