বিশেষ প্রতিবেদকঃ
আগামী ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন নিয়ে জেলা পর্যায়ে প্রথম অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীরা একে অপরকে দুষলেন।
কেউ বললেন-আমি এবং আমার কর্মীরা নির্বাচনী প্রচারণায় নামতে পারছি না। আমাদের দেখলেই ধাওয়া দেয়। একজন প্রার্থীর পক্ষে বলা হয়েছে-তিনি প্রতিপক্ষের আক্রমণের ভয়ে প্রচারণায় বের হতে পারছেন না। এমনকি আক্রমণের ভয়ে জেলা শহরে এই মতবিনিময় সভায়ও পর্যন্ত যোগ দিতে পারেননি।
তবে তারা সবাই বললেন-আমরা একটি নিরাপদ এবং নির্বাচনের সুষ্টু পরিবেশ চাই। যেখানে কোন হানাহানি হবে না। কারও জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না হানাহানির পরিবেশ। প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীদের এসব অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগের জবাবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলেছেন-‘আপনারা নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধি মেনে চলুন। দেখবেন কোন সমস্যাই হচ্ছে না। আচরণবিধি করা হয়েছে পরিবেশ শান্ত রাখার জন্য।’
বৃহষ্পতিবার বিকালে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এমপি প্রার্থী, প্রার্থীদের প্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলগুলোর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সাথে অনুষ্টিত মতবিনিময় সভায় এরকম অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে।
রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে প্রার্থীদের মতবিনিময় সভায় কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে বিএনপির প্রার্থী শাহাজাহান চৌধুরী বলেন-‘টেকনাফের ওসি প্রদীপ কুমার দাসের নেতৃত্বে পুলিশ আমার দলীয় কর্মীদের নির্যাতন করা হচ্ছে। সেখানে আমার কোন কর্মীকে ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে দেয়া হচ্ছে না।’
তিনি বলেন-আমি এর আগেও অনেকগুলো নির্বাচনের প্রার্থী ছিলাম। কিন্তু এরকম দশায় আর কোন সময় পড়িনি। এবারেন নির্বাচনী কর্মকান্ড শুরু আগেই স্থানীয় এমপি আমাকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে।
এসব বিষয়গুলো তিনি রিটার্নিং অফিসারের কাছে এর আগে লিখিতভাবে জানানোর কথাও ব্যক্ত করেন।
বিএনপি এমপি পদপ্রার্থী শাহজাহান চৌধুরীর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে একই আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত এমপি প্রার্থী শাহীন আকতারের স্বামী এবং বর্তমান এমপি আবদুর রহমান বদি অভিযোগ করেন-‘ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকরা আমার এলাকায় এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।’
এমপি বদি বলেন, গত ৩০ নভেম্বর ধানের শীষ প্রতীকের লোকজন তার গাড়ীতে গুলি চালিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। তিনি সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরীর ছোট ভাই উখিয়ার শাহজালাল চৌধুরীর বিরুদ্ধে গত ক’দিন ধরে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির অভিযোগ করেন।
কক্সবাজার-৩ (রামু-কক্সবাজার সদর) আসনের বিএনপির প্রার্থী লুৎফুর রহমান কাজল অভিযোগ করে বলেন, রামু উপজেলায় আমার কোন প্রচারণা অফিস স্থাপন করতে দেয়া হচ্ছে না। সেখানে আমার নেতাকর্মীদের আটক করা হচ্ছে। হামলা মামলা চালাচ্ছে। নির্বাচনী প্রচার চালাতে গিয়ে প্রতি পদে পদে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে।
তিনি অভিযোগ করেন, আমাদের সভা শুরুর আগেই সব ভাঙচুর করে দিয়ে চলে যাচ্ছে সরকার দলীয় লোকজন। নিজেরা ঘটনা করে আমাদের উপর দোষ চাপাচ্ছে।
এমপি প্রার্থী কাজল দুঃখের সাথে বলেন-‘ বিষয়টা এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে, যেন আমাকে হাত-পা বেঁধেই সাঁতার কাটতে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। এরকম হলে কি সাঁতার কাটানো যায় ?’
একই আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন-ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকরা আমার নৌকা প্রতীকের ২টি নির্বাচন অফিস পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ফেসবুকে আমার বিরুদ্ধে ধানের শীষের সমর্থকরা অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। এমপি কমল অভিযোগ করেন, বিএনপি নেতা-কর্মীরা জাল ব্যালট নিয়ে এখন থেকেই ভোটের কেলেংকারির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের মুসলিম লীগের প্রার্থী শহীদুল্লাহ অভিযোগ করেন-‘আমার এলাকায় আমার পোষ্টারগুলো নিচে নামিয়ে দিয়ে উপরে পোষ্টার লাগানো দেয়া হচ্ছে। এলাকার ছাত্রলীগ কর্মীরা এরকম ঘটনা ঘটাচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। একই আসনের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী জসিম উদ্দিন নদভী এলাকা নিয়ে একই রকমের অভিযোগ তুলেছেন।
কক্সবাজার-১ (পেকুয়া-চকরিয়া) আসনের বিএনপি প্রার্থী মিসেস হাসিনা আহমদের প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে কক্সবাজার জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট শামীম আরা বেগম স্বপ্না অভিযোগ করেন-সেখানে ধানের শীষ প্রতীকধারী মিসেস হাসিনা আহমদকে নির্বাচনী প্রচারণায় নামতেই দেয়া হচ্ছেনা। ধানের শীষ প্রতীক ধারী প্রার্থী হাসিনা আহমদকে গত কয়েক দিন ধরে সেখানে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর লোকজন ধাওয়া দিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করে বলেন-হাসিনা আহমদ আজকের এই মতবিনিময় সভায়ও আসতে পারেননি নিরাপত্তাজনিত কারনে।
এরকম অভিযোগের জবাবে কক্সবাজার- ২ আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাফর আলমের পক্ষে চকরিয়ার আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল আবছার পাল্টা অভিযোগ তুলে বলেন- ধানের শীষ প্রতীকধারী প্রার্থীর সমর্থকরা নৌকা প্রতীকের অফিস ভাংচুর করে চলেছে। এমনকি অফিস আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে। গত ক’দিনে নৌকা প্রতীকের প্রচারণায় জড়িত টমটম গাড়ীও আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি হাসিনা আহমদের পক্ষে অভিযোগের তীব্র আপত্তি জানান।
মতবিনিময় সভায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মাসুদুর রহমান মোল্লা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ আশরাফুল আফসার, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বশির আহমদ, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ, আনসারসহ নির্বাচনী কাজে জড়িত অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।