||মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী||
নাটকের পর নাটক। একটা নাটক শেষ হতে-নাহতেই আরেকটা নাটক শুরু হয়। এভাবেই একের পর এক নাটকীয় সব ঘটছে কক্সবাজার-২ আসনে।
দেশের সর্বোচ্চ আদালতে আইনী লড়াই করে কক্সবাজার-২ আসনে আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ্ ফরিদ তাঁর প্রার্থীতা ফেরত ও ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন। কক্সবাজারের রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বুধবার রাত সাড়ে ৭ টায় আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদের প্রার্থীতা পুনর্বহাল ও তাঁকে ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ দেন। এ নাটক মন্ঞ্চায়নের খবর বিজলীর গতিতে মহেশখালী-কুতুবদিয়ার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। পাল্টে যায়-এ আসনের নির্বাচনের পূর্বের সব হিসাব-নিকাশ। আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদের নীরব থাকা সমস্ত নেতাকর্মী-সমর্থক-ভক্ত-অনুসারীরা উৎসাহে গর্জে উঠেন। সামান্য থমকে যায়-একই আসনের নৌকা ও আপেল প্রতীকের প্রচারনা। চিন্তায় পড়ে যান-এসব প্রতীকের কুশীলবেরা। এরমাঝে আরেকটি নাটক মন্ঞ্চায়ন হলো বৃহস্পতিবার রাত্রে। অধ্যাপক আনসারুল করিম নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে নৌকা প্রতীকের আশেকউল্লাহ রফিককে সমর্থন জানিয়েছেন। এতে আরো কঠিন হয়ে পড়েছে, এখানকার নির্বাচনী সমীকরণ।
এখন সবচেয়ে বেশী আলোচিত হচ্ছে-২৩ দলীয় ঐক্যজোট মনোনীত আপেল প্রতীকের প্রার্থী এ.এইচ.এম হামিদুর রহমান আযাদ এ অবস্থায় কি করবেন? কারণ তিনি ২৩ দলীয় ঐক্যজোটের মনোনীত প্রার্থী হয়েও স্বতন্ত্র মনোনয়ন দাখিল করার কারণে স্বতন্ত্র প্রতীক আপেল নিয়েই তাঁকে নির্বাচন করতে হচ্ছে। আবার এ.এইচ.এম হামিদুর রহমান আযাদ বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। বৃহস্পতিবার এবিষয়ে মুঠোফোনে কুতুবদিয়া উপজেলা জামায়াতের আমীর আনোয়ার হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন-কক্সবাজার-২ আসনে ২৩ দলীয় ঐক্যজোট থেকে এ.এইচ.এম হামিদুর রহমান আযাদকেই চুড়ান্ত মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। সুতরাং এখানে প্রতীক কোন সমস্যা নয়, প্রতীক যেটাই হোক, এ.এইচ.এম হামিদুর রহমান আযাদ ২৩ দলীয় ঐক্যজোটের চুড়ান্ত প্রার্থী। সুতরাং তিনি আপেল প্রতীক নিয়েই ২৩ দলীয় ঐক্যজোটের প্রার্থী হিসাবে অবশ্যই নির্বাচন করে যাবেন। একইকথা একইদিন মুঠোফোনে বলেছেন-জামায়াতের মহেশখালী (উত্তর) সাংগঠনিক উপজেলার আমীর আবদুশ শুক্কুর। এ বিষয়ে জানার জন্য কক্সবাজার জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমানকে তাঁর মুঠোফোনে কল করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। এদিকে, বৃহস্পতিবার কক্সবাজার জেলা বিএনপি’র সভাপতি শাহজাহান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কক্সবাজার জেলা ২৩ দলীয় ঐক্যজোটের শীর্ষ নেতাদের এক বৈঠকে কক্সবাজার জেলার ৪ টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ১,৩ ও ৪ নম্বর আসনে ধানের শীষ প্রতীককে এবং ২ নং আসনে ২৩ দলীয় ঐক্যজোটের প্রার্থী এ.এইচ.এম হামিদুর রহমান আযাদের আপেল প্রতীককে বিজয়ী করার লক্ষ্যে ২৩ দলীয় ঐক্যজোটের নেতাকর্মীদের নির্বাচনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহবান জানিয়েছেন। এ বিষয়ে ২৩ দলীয় ঐক্যজোটের পক্ষে কক্সবাজার জেলা বিএনপি’র দপ্তর সম্পাদক ইউসুফ বদরী স্বাক্ষরিত অনুরূপ আহবান জানিয়ে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিও গণমাধ্যমে বৃহস্পতিবার প্রেরণ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে কক্সবাজারের রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচন সংক্রান্ত আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ.এইচ.এম হামিদুর রহমান আযাদের পক্ষে এডভোকেট জাফরুল্লাহ্ ইসলামাবাদী প্রতিনিধিত্বও করেছেন। অন্যদিকে-বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় কক্সবাজার শহরের হাসপাতাল সড়কস্থ একটি প্রাইভেট হাসপাতালে আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ মহেশখালী ও কুতুবদিয়ার বেশ ক’জন শীর্ষ ও দায়িত্বশীল জামায়াত নেতাদের সাথে তাঁর নির্বাচনে সহযোগিতা চেয়ে বৈঠক করেছেন। এটিও ছিল আরেকটি হিট করা নাটক। বৈঠকে উপস্থিত জামায়াত নেতারা আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদের পক্ষে আরো ৪/৫ দিন পরে এলাকায় তাঁরা কাজ শুরু করবেন বলে তাঁকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন-এরকম উভয়পক্ষের নেতৃবৃন্দ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বৈঠকে জামায়াতের নেতৃবৃন্দের মধ্যে কক্সবাজার-২ আসনে জামায়াত মনোনীত সাবেক সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মাওলানা শফিউল্লাহ কুতুবী, জামায়াতের মহেশখালী উপজেলার একটানা ১০ বছরের সাবেক আমীর ও কালারমারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাবের আহমদ চৌধুরী, জামায়াতের মহেশখালী উপজেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র সদস্য এডভোকেট ইব্রাহীম খলিল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন বলে এই নাটকের সাথে জড়িতদের কাছ থেকে জানা গেছে।
এদিকে, আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ গত ১০ ডিসেম্বর থেকে দীর্ঘ ১০ দিন আইনীযুদ্ধ করে প্রার্থীতা ও ধানের শীষের প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে ২০ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার কক্সবাজার থেকে সড়ক পথে চকরিয়া বদরখালী ব্রীজের পশ্চিম পাড়ে মহেশখালী সীমানায় কালারমারছড়া চাইল্যাতলী নামক স্থানে বিকেল ৩ টার দিকে পৌঁছালে আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ্ ফরিদকে হাজার হাজার নারী-পুরূষ তাঁদের প্রিয় নেতাকে কাছে পেয়ে স্বাগত জানিয়ে উল্লাসে ফেটে পড়ে। সেখানে সৃষ্টি হয় এক অভাবনীয় দৃশ্য। দীর্ঘদিনের পিপাষিত মানুষগুলো পিপাষা মেঠানোর জন্য যেন হাতের কাছে সুপেয় পানি পেয়েছে। সেখানে হাজার হাজার জনতা তাদের প্রিয় মানুষ আলমগীর মোহাম্মাদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদকে গাড়ি থেকে নামিয়ে নিয়ে সাথে করে হাঁটছে আর হাঁটছে। আর শ্লোগান, নির্বাচনী গান-বাজনায় মুখরিত করে তোলে পুরো এলাকা। এভাবে চলতে চলতে মহেশখালীর চাইল্যাতলী, কালারমারছড়া, হোয়ানক হয়ে গণমানুষের স্রোতে ভেসে দীর্ঘ প্রায় ১২ কিঃমিঃ পথ হেটে বড় মহেশখালী নতুন বাজার আসতে কখন যে রাত ৯ টা বেজে গেছে-তা কেউ বুঝে উঠতে পারেননি। এসময় উজ্জীবিত নেতাকর্মী-সমর্থকদের উল্লাসে প্রকম্পিত হয় বড় মহেশখালীর নতুন বাজার এলাকা। জানান দিয়েছে-আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদের অনুসারী-সমর্থকেরা সংসদ নির্বাচনে তাঁর সাফল্য এনে দিতে এখনো ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। এভাবেই টালমাটাল করছে-কক্সবাজার-২ আসনের নির্বাচনী ময়দান। আসার পথে দুর্বৃত্তরা বেশ ক’বার বাঁধা দিতে চেষ্টা করেও মানুষের ঢল দেখে ব্যর্থ হয়েছে হয়েছে বলে আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ ফরিদের আইনজীবী এডভোকেট ফারুক ইকবাল জানিয়েছেন। এদিকে, আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ্ ফরিদের বৃহস্পতিবারের বিশাল শোডাউন নিয়ে সেখানকার নির্বাচনী বোদ্ধাদের অভিমত হলো-এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে কক্সবাজার-২ আসনে আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ্ ফরিদের ধানের শীষ ও আশেকউল্লাহ্ রফিকের নৌকা প্রতীকের সাথে মূলত
দ্বিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারনা করছেন। কারণ প্রতীক জটিলতা, কারাবন্দী, জোটের শীর্ষ সংগঠন বিএনপি’র স্থানীয় আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ অনুসারী নেতাকর্মী-সমর্থকেরা উচ্চ আদালতের আদেশের দোহায় দিয়ে ধানের শীষে প্রতীকের পক্ষে কাজ করায় এ.এইচ.এম হামিদুর রহমান আযাদ ২৩ দলীয় ঐক্যজোটের প্রার্থী হয়েও এসব জটিলতার কারণে নির্বাচনী মাঠে হয়ত অনেকটা কোনঠাসা হয়ে পড়বেন। আবার গণফ্রন্টের মাছ প্রতীকের প্রার্থী অধ্যাপক আনসারুল করিম বৃহস্পতিবার রাত্রে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর খবরে মহাজোটের প্রার্থী আশেকউল্লাহ রফিকের নৌকা প্রতীকের পাল্লাও একটু ভারী হয়েছে।তাই শেষপর্যন্ত চাচা আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ্ ফরিদের ধানের শীষ প্রতীকের সাথে ভ্রাতুষ্পুত্র আশেক উল্লাহ রফিকের নৌকা প্রতীকের দ্বিমুখী মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে উঠার সম্ভাবনায় বেশী। তবে এরমধ্যে ধানের শীষ ও আপেল প্রতীকের মধ্যে যে প্রতীকের পাল্লা বেশী ভারী হবে-সে পাল্লার অনুকূলে অন্তত আরো একটি নাটক আগামী ৪/৫ দিনের মধ্যে মন্ঞ্চায়ন হতে পারে বলে এখানকার নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন। তারপরও সবকিছু মিলে এ আসনের নির্বাচনী সমীকরণ নিয়ে নিশ্চিত কিছু বলার জন্য আরো ক’দিন অপেক্ষা করতে হবে।
(লেখক: এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, ঢাকা।)