আহমদ গিয়াস:

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) বহি:ক্যাম্পাস কক্সবাজারে আর হচ্ছে না। কক্সবাজারের পরিবর্তে সেটি স্থাপন করা হচ্ছে চট্টগ্রাম শহরতলীর হাটহাজারীতে। ফিশারীজসহ কয়েকটি বিষয়ে সিভাসু’র বহি:ক্যাম্পাস স্থাপনের জন্য প্রায় সাড়ে ৩ বছর আগে কক্সবাজার শহরতলীর দরিয়ানগরে ৫ একর জমি বরাদ্দ নেয়া হলেও সেখানে এখন হচ্ছে গবেষণা কেন্দ্র। ‘কোস্টাল বায়ো ডাইভারসিটি, মেরিন ফিশারিজ এন্ড ওয়াইল্ড লাইফ গবেষণা কেন্দ্র’ নামে গত কয়েকদিন আগে এখানে নতুন ফলকও লাগানো হয়েছে। তবে আগের কয়েকটি বিলবোর্ডও রয়ে গেছে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ২০১৫ সালের ২২ নভেম্বর বিকালে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কক্সবাজার শহরতলীর দরিয়ানগরে ‘সিভাসু’র প্রথম বহি:ক্যাম্পাস ‘ইন্সটিটিউট অব কোস্টাল বায়ো ডাইভারসিটি, মেরিন ফিশারিজ এন্ড ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন’ এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। মন্ত্রী কক্সবাজারে ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বহি:ক্যাম্পাসের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের দিনটিকে দেশের ইতিহাসে এক ‘ঐতিহাসিক দিন’ বলে আখ্যায়িত করেন।

এসময় মন্ত্রী বলেন- নতুন প্রজন্মকে আধুনিক বাংলাদেশের নির্মাতা হিসাবে গড়ে তোলার জন্য বিশ্বমানের শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে কক্সবাজার সাগরপাড়ে এ বহি:ক্যাম্পাস স্থাপন করা হচ্ছে। এসময় স্থানীয় সাংসদ, প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাসহ কক্সবাজারের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। এসময় সিভাসু উপাচার্য প্রফেসর ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ বলেন, ২৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এই ক্যাম্পাসটি নির্মাণ করা হচ্ছে। আগামী ৩ বছরের মধ্যে কক্সবাজার ক্যাম্পাসটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হবে। এই ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবন, শিক্ষক আবাস এবং ছাত্র ও ছাত্রীদের হোস্টেল নির্মাণের জন্য সরকার প্রাথমিক পর্যায়ে ৮০ কোটি টাকার বরাদ্দও দিয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকী অর্থও ছাড় দেয়া হবে।

ওই সময় তিনি আরো জানান যে, প্রাথমিকভাবে এই ক্যাম্পাসে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রতি সেশনে ৭০ জন করে শিক্ষার্থীকে ভর্তি করানো হবে। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরো বাড়ানো হবে এবং আরো নতুন নতুন বিষয়ে পড়ালেখার সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। কিন্তু ৩ বছরেরও বেশি সময় পর গত ১৫ ডিসেম্বর একটি সংযোগ সড়কের উদ্বোধন ও ভেটকি হ্যাচারির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে প্রতিষ্ঠানটির নাম ‘কোস্টাল বায়ো ডাইভারসিটি, মেরিন ফিশারিজ এন্ড ওয়াইল্ড লাইফ গবেষণা কেন্দ্র’ নামে ফলক লাগানো হয়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিভাসু উপাচার্য প্রফেসর ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ গত সোমবার বলেন, সিভাসু’র কোন ইন্সটিটিউট এখন আর কক্সবাজারে হচ্ছে না। হচ্ছে গবেষণা কেন্দ্র। এই গবেষণা কেন্দ্রের জন্য ইতোমধ্যে একটি ৫ তলা বিশিষ্ট ডরমিটরি নির্মাণাধীন রয়েছে।

এছাড়া গত শনিবার (১৫ ডিসেম্বর) ভেটকি হ্যাচারির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়েছে। এখানে এ পর্যন্ত প্রায় ৪ কোটি টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান তিনি। কক্সবাজারে সিভাসু’র কোন ইন্সটিটিউট হচ্ছে না নিশ্চিত করে উপাচার্য আরো বলেন, ক্যাম্পাসটি এখন চট্টগ্রাম শহরতলীর হাটহাজারীতে প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। সেখানে এখন অবকাঠামোগত নির্মাণ কাজও চলছে। কক্সবাজার ক্যাম্পাস স্থাপনের ব্যাপারে উর্ধতন মহলের অনুমতি না পাওয়ায় তা করা সম্ভব হয়নি বলে তিনি জানান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গবেষণা কেন্দ্র নামে এখানে ফলক লাগানো হলেও বাস্তবে কোন গবেষণা কার্যক্রম এখান চালানো হয় না। তবে এখানে স্থানীয় ৬ জনসহ মোট ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারি নিয়োজিত রয়েছে, যাদের কাজ মূলত পাহারা দেয়া। অবশ্য স্থানীয়রা ‘রাতের আঁধারে পাহাড়কাটা’ তদারকির জন্যই উক্ত কর্মচারিদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। তবে অভিযোগের কথা সংশ্লিষ্টরা অস্বীকার করেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কোন পাবলিক (সরকারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসের বাইরে বহিরাঙ্গণ স্থাপনের কোন অনুমতি ছিল না। কিন্তু ২০১০ সালের বিশ্ববিদ্যালয় আইনে যে সংশোধনী আনা হয়, সেখানে দেশের কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বহি:ক্যাম্পাস কক্সবাজারে স্থাপনের ব্যাপারে বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়।

মূলত: বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধনকালে আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও কক্সবাজারের সন্তান মোহাম্মদ হোসেন (সাবেক এমপি লুৎফুর রহমান কাজলের চাচা) কৌশলে কক্সবাজারের কথা উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এই আইনী বাধ্যবাধকতার ফাঁদে ফেলেন। আর এ বাধ্যবাধকতার কারণে কক্সবাজারে কথিত ক্যাম্পাস স্থাপনের তোড়জোড় চালানো হয়। কিন্তু কক্সবাজারে পূর্ণাঙ্গ ক্যাম্পাস স্থাপন না করেই অন্যত্র ক্যাম্পাস স্থাপন কতটুকু আইনসিদ্ধ তা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা প্রশ্ন তুলেন। তবে এ বিষয়ে সিভাসু রেজিস্ট্রার মীর্জা ফারুক ইমামের কাছ থেকে জানতে চাইলে তিনি গণসংযোগ বিভাগে আবেদন করে তথ্য জেনে নিতে পরামর্শ দেন।

এবিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন যুগ্ম সচিব (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ হোসেন বলেন, সিভাসুর প্রথম ক্যাম্পাস কক্সবাজারে স্থাপনে আইনী বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কক্সবাজারে ক্যাম্পাস স্থাপন না করে দেশের অন্য কোথাও তারা ক্যাম্পাস স্থাপন করতে পারবে না।