ডেস্ক নিউজ:

ব্রডব্যান্ডথ্রি-জির পরে ফোর-জি এসেছে মোবাইল ফোনে, কিন্তু এখনও তাতে ব্রডব্যান্ড (উচ্চগতি) নিশ্চিত হয়নি। এরই মধ্যে সরকার ব্রডব্যান্ডের সংজ্ঞা নতুন করে চূড়ান্ত করেছে। নতুন সংজ্ঞা অনুসারে ব্রডব্যান্ডের গতি ন্যূনতম ১০ এমবিপিএস। তবে এর নিচের গতিকে ন্যারোব্যান্ড হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সেই হিসেবে মোবাইলে ন্যারোব্যান্ডের ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হবে গ্রাহকদের। ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ও ওয়াইম্যাক্স সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো এই নতুন সংজ্ঞার আওতায় এলেও এবারও মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা এই বাইরে থেকে গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মোবাইলে ব্রডব্যান্ড পেতে হলে ফাইভ-জি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ফাইভ-জি’তেই কেবল উচ্চগতির ইন্টারনেট পাওয়া যাবে। সে সময় মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা তাদের স্মার্টফোনে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন। তবে ২০২১ সালে সরকার ফাইভ-জি চালু করতে চায়।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ইন্টারনেটের সর্বনিম্ন গতি ঠিক করে দিয়েছে। ব্রডব্যান্ডের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ডাউনলোড গতি হবে ১০ এমবিপিএস। আর আপলোডের গতি ১ এমবিপিএস। সম্প্রতি ‘এএনএস অপারেটরস কোয়ালিটি অব সার্ভিস’ বিধিমালায় এটি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, সরকার ২০০৯ সালে জাতীয় ব্রডব্যান্ড নীতিমালা করে। সেখান ব্রডব্যান্ডের সংজ্ঞায় বলা হয়েছিল, ‘যাহার ন্যূনতম গতি হবে ১২৮ কেবিপিএস। এর চেয়ে গতি কম হইলে তাকে বলা হইবে ন্যারোব্যান্ড ইন্টারনেট।’ যদিও ২০১৩ সালে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির জারি করা এক নিদের্শনায় নতুন করে ব্রডব্যান্ডের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়। নতুন সংজ্ঞায় বলা হয়, ‘যাহার ন্যূনতম ব্যান্ডউইথ ১ এমবিপিএস হইবে। ১ এমবিপিএস হইতে কম ব্যান্ডউইথকে ন্যারোব্যান্ড বলা হইবে।’ ২০১৬ সালে আবারও ব্রডব্যান্ডের সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হয়। ওই বছরে ন্যূনতম ব্যান্ডউইথ ১ মেগার পরিবর্তে ৫ মেগা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় এবং পরে তা কার্যকর করা হয়।

কমিশনের নতুন বিধিমালায় বলা হয়েছে, মোবাইল ফোনের ইন্টারনেটের ডাউনলোড গতি টু-জি’র বেলায় ৮০ কেবিপিএস, থ্রি-জি’র বেলায় ২ এমবিপিএস ও ফোর-জি’র বেলায় ৭ এমবিপিএস হতে হবে। জানা যায়, ফোর-জি লাইসেন্সের গাইডলাইনে ৭ এমবিপিএস গতির কথা বলা হয়েছিল।

জানতে চাইলে দেশে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবির সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, ‘গতি বেধে দেওয়া ভালো। এতে গ্রাহকের উপকার হবে।’ সবাই ১০ এমবিপিএস গতি দেবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তিনি। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমাদের তো কোনও মানিটরিং পদ্ধতি নেই। সরকার যদি ঠিকঠাক মনিটর করে, তাহলে এটা গ্রাহকের জন্য অনেক বড় পাওয়া হবে।’

আমিনুল হাকিম জানান, ফিক্সড ইন্টারনেটে এই সুবিধা পাওয়া গেলেও মোবাইলে এখনই তা পাওয়া যাবে না। মোবাইলে পেতে গেলে গ্রাহকদের ফাইভ-জি আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ফাইভ-জিতে ডাটা স্পিড বেশি থাকবে। ফলে গ্রাহক অনায়াসে সেসময় মোবাইলেই ব্রডব্যান্ড উপভোগ করতে পারবেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মোবাইলে ৭ এমবিপিএস এর কথা বলা হলেও কখনোই ২-৩ এমবিপিএস এর বেশি গতি পাওয়া যায় না।

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফাইভ-জি প্রযুক্তি মানুষের প্রতিদিনের জীবনযাত্রা বদলে দেবে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে চালকবিহীন গাড়ি চলবে রাস্তায়। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি আরও শক্তিশালী হবে। স্মার্ট সিটি বিনির্মাণ সহজ হবে। এর সঙ্গে যুক্ত থাকা রোবট পরিচালনা করা যাবে। বাড়বে আইওটি (ইন্টারনেট অব থিংস) প্রযুক্তির ব্যবহার। বিগডাটা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়নে ফাইভ-জি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এটি চালু হলে আমূল পরিবর্তন আসবে চিকিৎসা ও শিক্ষা খাতে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে টেলিমেডিসিন সেবার উন্নয়নের ফলে গ্রামে বা প্রত্যন্ত এলাকায় বসেও রোগীরা শহরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখাতে পারবেন। বিশ্বের খ্যাতনামা চিকিৎকের কাছ থেকেও পরামর্শ নেওয়া যাবে। দূরশিক্ষণ বা অনলাইন ক্লাসরুমের ফলে দূরগ্রাম বা প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীরা বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলের শিক্ষালাভের সুযোগ পাবে।

জানা গেছে, ২০২০ সালের মধ্যে বিশ্বে ইন্টারনেট সংযুক্ত ডিভাইসের সংখ্যা হবে ৫ হাজার কোটির বেশি। এগুলোতে আইওটি ‍সুবিধা থাকবে। ফলে এগুলো পরিচালনা করতে প্রয়োজন হবে ফাইভ-জি। ফোর-জি’র চেয়ে অন্তত ৪০ গুণ দ্রুতগতির হবে ফাইভ-জি। এই নেটওয়ার্কে থ্রিডি সিনেমা ডাউনলোড করা যাবে ৬ সেকেন্ডে, ফোর-জি’তে যা লাগতে পারে ৬ মিনিটের মতো।