শাহেদ মিজান, সিবিএন:
বহু প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে কক্সবাজার-২ আসনে অবশেষে ধানের শীষ প্রতীক পেয়ে প্রার্থীতা ফিরে পেয়েছেন বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আলমগীর ফরিদ। উচ্চ আদালতের নির্দেশ মতে বুধবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন তাকে প্রার্থীতা ফিরিয়ে দেন। একই সাথে তাকে ধানের শীষের প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছেন। আলমগীর ফরিদ প্রার্থীতা ফিরে পাওয়ার খবরেই মহেশখালী-কুতুবদিয়া ভোটের রাজনীতিতে নতুন হাওয়া লেগেছে। হঠাৎ করে পাল্টে গেছে সব দৃশ্যপট। ভেস্তে গেছে অন্য প্রার্থীদের সব হিসাব! এবার আলমগীর ফরিদকে নিয়েই কষছে নতুন হিসাব। সব মিলে এই আসনটির ভোটের যুদ্ধ হবে দেশজুড়ে তাক লাগানো মতো। এখানকার সাধারণ ভোটাররা তাই মনে করছেন।

ভোটাররা মনে করছেন, মহেশখালী-কুতুবদিয়ার দু’বারের সাবেক সংসদ সদস্য আলমগীর ফরিদ বিহীন ভোটের যুদ্ধ এতদিন একদম জমেনি। আরো তিনজন হেভিওয়েট প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে চষে বেড়ালেও কোন দিকে যেন অপূর্ণতা জেঁকে ছিলো। আলমগীর ফরিদের বিষয়টি ঝুলন্ত থাকায় ভোটাররা ঘাপটি মেরে ছিলো- দেখছিল পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে! আলমগীর ফরিদের কর্মী সমর্থকেরা ছিলেন অধীর অপেক্ষায়। শেষ পর্যন্ত তিনি নির্বাচনী মাঠে নামতে পারায় পুরো দৃশ্যপটে নতুন হাওয়া লেগেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় মূল বিএনপির সাথে নেই আলমগীরপন্থী বিএনপির ধারাটি। তারপরও অন্তত ৮০ ভাগ বিএনপি নেতাকর্মী তাঁর সাথে রয়েছেন- এমনটি মনে করা হয়। তাই এই আসনে আলমগীর ফরিদের পক্ষে গণজোয়ার রয়েছে। গত ১০ বছর তিনি ক্ষমতার বাইরে থাকলেও বিএনপির এসব নেতাকর্মী তাঁর সাথেই ছিলেন। তবে সবাই ছিলেন পদ বঞ্চিত। এসব নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন আলমগী ফরিদ। নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরুতে তিনি প্রার্থীতার জন্য সব প্রস্তুতি রেখেছিলেন।

সূত্র মতে, সব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে দলের বহিস্কারাদেশ কাটাতে সক্ষম হয়েছেন আলমগীর ফরিদ। পেয়েছিলেন দলের প্রাথমিক মনোনয়নও। কিন্তু বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২৩ দলীয় জোট থেকে জামায়াত নেতা হামিদুর রহমান আযাদকে মনোনয়ন দেয়া হয়। ফলে দলের চূড়ান্ত মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছিলেন আলমগীর ফরিদ। তাই নির্বাচন কমিশনের কাছে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার সুপারিশ জমা দিতে পারেনি তিনি। তাই নির্বাচনী বিধি মতে, আপনাআপনিই তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া শেষ মুহূর্তে হামিদ আযাদও ধানের প্রতীক পাননি।

আলমগীর ফরিদের আইনজীবি ফারুক ইকবাল জানান, নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে প্রার্থীতা ও প্রতীক ফিরে পেতে উচ্চ আদালতে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেছিলেন আলমগীর ফরিদ। ওই পিটিশন আমলে নিয়ে আলমগীর ফরিদের প্রার্থীতা ফিরিয়ে দিয়ে তাঁকে ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। কিন্তু ওই আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টে আপীল করেন নির্বাচন কমিশন। ১৮ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ নির্বাচন কমিশনের আপীল আবেদন নাকচ করে দিয়ে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন আপীল বিভাগ। যার ফলে আলমগীর ফরিদের প্রার্থীতা ফিরিয়ে পেতে এবং ধানের শীষ প্রতীক পেতে সব প্রতিবন্ধকতা দূর হয়ে। এই সংক্রান্ত সব ধরনের কাগজপত্র বুধবার সকালে রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেনে কাছে জমা দেন আলমীর ফরিদের আইনজীবিরা।

স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আলমগীর ফরিদ বুধবার সন্ধ্যায় ধানের শীষের প্রতীকসহ মনোনয়ন ফিরে পাওয়ার খবর মুহূর্তের মধ্যে মহেশখালী-কুতুবদিয়ায় ছড়িয়ে যায়। খবর পেয়ে তার অনুসারী কর্মী-সমর্থকেরা হুমড়ি খেয়ে নেমে পড়ে রাস্তায়। মিছিল-শ্লোগানে মুখর হয়ে উঠে পুরো মহেশখালী-কুতুবদিয়া। এতদিন চুপ থাকা এত বিপুল ভোটার আলমগীর ফরিদের পক্ষে রাস্তায় নেমে পড়ায় অন্য প্রার্থীরা বড় ধাক্কা খেয়েছেন। কেননা আলমগীর ফরিদের তুমুল জনপ্রিয়তা এখন তাদেরকে গ্রাস করে ফেলেছে বলে মনে করেন সচেতন মহল। ক্ষমতায় থাকাকালে আলমগীর ফরিদের বিরুদ্ধে গন্ডগোল লাগিয়ে দেয়াসহ কিছু বদনাম ছিলো। কিন্তু তারপরও তাঁর জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। এই কারণে অন্য প্রার্থীদের সব হিসাব ভেস্তে গেছে বলে মনে করেন সচেতন মহল।

এ ব্যাপারে আলগীর ফরিদ বলেন, ‘আমাকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে রাখতে অনেক ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। কিন্তু আল্লাহর অসীম রহমত এবং আমার জনগণের দোয়ায় আমাকে ঠেকিয়ে রাখা যায়নি। আমি নির্বাচনী মাঠে ফিরে আসলাম। আমি শতভাগ আশাবাদী জনগণের ভোটের আমি জয়ী হবো।’