এম. ইব্রাহিম খলিল মামুনঃ
কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে জমে উঠেছে একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন আটজন প্রার্থী। তবে এর মধ্যে হেভিওয়েট দুই প্রার্থী হলেন বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের হাসিনা আহমেদ ও আওয়ামী লীগের জাফর আলম।
এ আসনে মহাজোটের শরীক জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে লড়ছেন বর্তমান এমপি মোহাং ইলিয়াছ।
বাকি প্রার্থীদের মধ্যে দুয়েকজন প্রচারণায় থাকলেও তাদের নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই ভোটারদের মধ্যে। মূলত প্রধান দুই জোটের প্রার্থীর মধ্যেই লড়াই জমবে। ভোটারদের নজরও তাদের দিকেই।
পূর্ব পরিসংখ্যান বলছে, কক্সবাজার-১ আসনটি বিএনপির ঘাঁটি। ১৯৯১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সংসদ নির্বাচনে একবার দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে জামায়াত, পরপর তিনবার বিএনপি এবং সর্বশেষ বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হয়েছেন লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী। বিএনপির সালাহউদ্দিন আহমেদ নিখোঁজ হলে নবম সংসদ নির্বাচনে আসনটিতে ধানের শীষে প্রার্থী হন তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ। বেশ বড় ব্যবধানেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে পরাজিত করেন তিনি।
এবার একাদশ সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ ও নৌকা প্রতীকের মধ্যে বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ভারতে বন্দি স্বামীর ইমেজ ব্যবহার করে সহানুভূতি টানার চেষ্টা করছেন বিএনপির প্রার্থী হাসিনা আহমেদ। একই সঙ্গে তিনি স্বামীর সময়কার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও সামনে এনে ভোট চাইছেন।
হাসিনা আহমেদ বিভিন্ন গণসংযোগে বলছেন, আপনাদের ভালোবাসার কারণেই আমার স্বামী বারবার এ আসনে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। তার পরিবর্তে আমাকেও আপনারা বিপুল ভোটে এমপি নির্বাচিত করেছেন। আপনারা জানেন, আমার স্বামীকে সরকার গুম করে রেখেছিল। পরে তাকে ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় ফেলে দিয়ে আসে সরকারের লোকজন। সেখানে তিনি দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছেন। তাকে আপনাদের কাছে আসতে দিচ্ছে না বর্তমান সরকার। তাই আপনাদের প্রিয় সালাহউদ্দিনকে আপনাদের মাঝে ফিরে পেতে আবারো ধানের শীষ প্রতীকে আমাকে ভোট দিয়ে এমপি নির্বাচিত করুন। একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার মুক্তির পথ সুগম করতে ধানের শীষে ভোট চাচ্ছেন তিনি।
জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ইউসুপ বদরী বলেন, চকরিয়া-পেকুয়ার মানুষ তাদের অভিভাবক হিসেবে সালাহউদ্দিনকেই মনে রেখেছেন। বিশেষ করে চকরিয়ার মানুষ সালাহউদ্দিনের বেশি ভক্ত। এবারের নির্বাচনেও হাসিনা আহমেদকেই বিপুল ভোটে এমপি নির্বাচিত করবেন এ এলাকার মানুষ।
আরেক হেভিওয়েট প্রার্থী আওয়ামী লীগের জাফর আলমও নির্বাচনী মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। কনকনে ঠাণ্ডার মধ্যে প্রতিদিন সকাল থেকে নেমে পড়ছেন প্রচারণায়। প্রচারণার ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন ইউনিয়নে উদ্বোধন করছেন নির্বাচনী কার্যালয়।
জাফর আলম ভোটারদের কাছে বলছেন, দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে আমরা আওয়ামী লীগের একজন এমপি পাইনি। চকরিয়ার মানুষের ভোটে বারবার বিএনপি থেকে এমপি নির্বাচিত হওয়ায় চকরিয়ার ১৮ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নয়ন হয়নি। রাস্তাঘাটের দৃশ্যই বলে দিচ্ছে অতীতে এখানে কী কী উন্নয়ন হয়েছে। তাই উন্নয়নের স্বার্থে এবং চকরিয়া-পেকুয়ার মানুষ যাতে শান্তিতে এবং সহাবস্থানে বসবাস করতে পারে, সেজন্য দলমত নির্বিশেষে নৌকায় ভোট দিন।
চকরিয়া পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ারুল হাকিম দুলাল বলেন, চকরিয়া-পেকুয়ায় এবার সুযোগ এসেছে ৪৫ বছরের পরাজয়ের গ্লানি মোচনের। এবার আমরা একজন দক্ষ প্রার্থীও পেয়েছি। তাই চকরিয়া-পেকুয়ার মানুষ এবার আর সেই ভুল করবে না বলে মনে করি।