|| মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী ||

কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনে ২৩ দলীয় ঐক্যজোট তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী, জামায়াত ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ.এইচ.এম হামিদুর রহমান আযাদকে ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ নাদেয়ার বিরুদ্ধে কক্সবাজারের রিটার্নিং অফিসারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে ১১ ডিসেম্বর মঙ্গলবার হাইকোর্টে দায়েরকৃত আপীলটি শুনানীর জন্য উত্থাপিত হয়নি মর্মে বিচারপতি নটপ্রেস করে দিয়েছেন। ফলে ১২ ডিসেম্বর বুধবার থেকে আদালত খোলাথাকাকালীন সময়ে পর পর ক’দিন সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগে ধানের শীষ প্রতীক পাওয়ার জন্য আরো আইনী লড়াই করা হবে। বিষয়টি মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে ১১ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিশ্চিত করেছেন-কক্সবাজার জেলা জামায়াত ইসলামী’র আমীর মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান।

বাংলাদেশের ৩০০ টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৯৮ টি আসনে বিএনপি, ২৩ দলীয় ঐক্যজোট, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একক প্রার্থীরা ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। জোট ও ফ্রন্টের অনেক শরীকদলের নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন ও নিদিষ্ট প্রতীক থাকলেও সকল শরীক দলের প্রার্থীরা ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করছেন-নির্বাচনী কৌশল হিসাবে। ২৩ দলীয় জোটের শরীক সংগঠন এলডিপি’র চেয়ারম্যান কর্নেল (অব:) ডঃ অলি আহমদ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ আসনে তাঁর নিজ দলের প্রতীক ছাতা নিয়ে নির্বাচন করছেন। এবিষয়ে অলি আহমদের আগ্রহকে গুরুত্ব দিয়ে অনেক আগে থেকেই জোটের শীর্ষ পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেয়া ছিলো। কিন্ত এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন এবং দখিলকৃত মনোনয়নপত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রতীক চেয়েছিলেন। কিন্তু নয় ডিসেম্বর কক্সবাজার-২ আসনে এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদকে ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার জন্য কক্সবাজারের রিটার্নিং অফিসারকে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত অনুরোধপত্র দেয়া হয়। এবারের সংসদ নির্বাচনের আইনানুযায়ী স্বতন্ত্র মনোনয়নপত্র দাখিলকারীকে রাজনৈতিদলের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া সম্ভব নাহওয়ায় রিটার্নিং অফিসার এএইচএম হামিদুর আযাদকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রতীক “আপেল” বরাদ্দ দিয়েছেন। এই আপেল প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার মধ্য দিয়ে কারাবন্দী ও একই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ ৫ টি ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। প্রথমটি হলো-রাজনৈতিক জোটের প্রার্থী হয়েও স্বতন্ত্র প্রতীক আপেল নিয়ে তাঁকে নির্বাচন করতে হচ্ছে। দ্বিতীয়টি হলো-এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ ধানের শীষের পরিবর্তে আপেল প্রতীক পাওয়ার কারণে কক্সবাজার-২ আসনে ধানের শীষ প্রতীকের আর কোন প্রার্থী নেই। তৃতীয়টি হলো-সারা দেশের ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৩ দলীয় ঐক্যজোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ২৯৮ জন প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। আর শুধুমাত্র কর্নেল (অবঃ) অলি আহমদ তাঁর দলীয় প্রতীক ছাতা নিয়ে এবং এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ কক্সবাজার-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রতীক আপেল নিয়ে নির্বাচন করছেন। চতুর্থটি হলো-এবারের নির্বাচনে জামায়াতের মোট ২২ জন সংসদ সদস্য প্রার্থীর মধ্যে ২১ জন জামায়াত প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। আর এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ স্বতন্ত্র প্রতীক আপেল নিয়ে কক্সবাজার-২ আসনে নির্বাচন করছেন। পন্ঞ্চমটি হলো-২৩ দলীয় জোটের চুড়ান্তভাবে মনোনীত একক প্রার্থী হিসাবে এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদের আপেল প্রতীকের পোস্টার ও অন্যান্য সব প্রচারপত্রে শহীদ জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার ছবি থাকবে। যা কখনো আগে অন্য কারো ক্ষেত্রে ছিলনা বা হয়নি।

এদিকে, কক্সবাজার জেলা আমীরে জামায়াত মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমানকে এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ কখন কারামুক্ত হচ্ছেন, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন-বর ছাড়া যেমন কোন বিয়ের অনুষ্ঠান মূল্যহীন, ঠিক তেমনি প্রার্থী ছাড়া সে নির্বাচনও জমে উঠেনা। তাই আইনী লড়াই করে অন্তত নির্বাচনের কিছুদিন আগে হলেও তাঁকে কারামুক্ত করার জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করছি।
কক্সবাজার-২ আসনের অন্যতম উপজেলা হচ্ছে-মহেশখালী। যেখানে পুরো আসনের মোট সংখ্যার ৭০% ভাগ ভোটার মহেশখালীতে। মহেশখালী উপজেলায় প্রায় দুই লক্ষ ১২ হাজার ভোটার। আর কুতুবদিয়া উপজেলায় মাত্র ৮৪ হাজার ভোটার। মহেশখালী উপজেলা বিএনপি’র আহবায়ক ও মহেশখালী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবুবকর সিদ্দিক এখন কারাবন্দী। মহেশখালী উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি, কক্সবাজার জেলা বিএনপি’র বর্তমান সহ সভাপতি, সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট নুরুল আলম বলেছেন-২৩ দলীয় ঐক্যজোটের প্রার্থী।এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদের মূল সংগঠন হচ্ছে, জামায়াত ইসলামী। নির্বাচনী প্রচারনার সময় ইতিমধ্যে দু’দিন অতিবাহিত হলেও সেই জামায়াত ইসলামী’র পক্ষ থেকে মহেশখালী বিএনপি’র নেতাকর্মীদের সাথে নির্বাচনের ব্যাপারে এখনো কোনরকম যোগাযোগ করা হয়নি। তাই সেখানকার বিএনপি সহ সকল শরীক সংগঠনের নেতাকর্মী-সমর্থকেরা হতাশ হয়ে ঝিমিয়ে পড়ে রয়েছে। এ আসনের প্রার্থী ধানের শীষ পাবেন-নাকি শেষপর্যন্ত আপেল প্রতীক নিয়েই তাঁকে নির্বাচন করতে হবে-এই টানাটানিতে এখনো পোস্টার, ব্যানার, লিফলেট, হ্যান্ডবিল, ফস্টুন, মাইকিং, নির্বাচনী অফিস সহ কোন কিছুই করা হয়নি। বরং এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদের ফেসবুক পেজসহ সামাজিক গণমাধ্যমে তাঁর প্রতীক ধানের শীষ হিসাবে এখনো প্রচারিত হচ্ছে। আবার-আপেল প্রতীকের পোস্টার ও অন্যান্য প্রচারপত্রে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ছবি দেয়া হলে-সেটাকে বিএনপি ও অংগ সংগঠনের নেতাকর্মী-সমর্থক-ভক্ত-অনুসারীরা কিভাবে নেবেন-সেটাও এখন একটা বড় জটিল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কক্সবাজার-২ আসনের মহেশখালী-কুতুবদিয়া উপজেলা বিএনপি ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসীদের চারণভূমি হওয়া সত্বেও এ আসনটিতে এরকম অগোছালো ও নাজুক অবস্থা কেন? সারাদেশের ২৯৯ টি আসনে অত্যন্ত গোছালো ও যোক্তিকভাবে যথাসময়ে যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন দিলেও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও ইসলাম অনুরাগীদের উর্বরভূমি কক্সবাজার-২ আসনে বিএনপি সহ ২৩ দলীয় ঐক্যজোট, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মী-সমর্থক-ভক্ত-অনুসারীদের রাজনৈতিক এতিম বানানো হলো কেন? বিএনপি, ২৩ দলীয় ঐক্যজোট, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীর জন্য বিজয় হওয়া প্রায় নিশ্চিত এই আসনটি হাতছাড়া হওয়ার যে আশংকা দেখা দিয়েছে তার জন্য দায়দায়িত্ব কে নেবে? নেতাকর্মী-সমর্থকদের মধ্যে কে আস্থা ফিরিয়ে আনবে? শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বিলম্বিত সিদ্ধান্তের কারণে এই উর্বর আসনটি মহাজোটের প্রার্থীকে প্রায় ওয়াকওভার দেয়া হচ্ছে কেন? এসব প্রশ্ন এখন সেখানকার হতাশাগ্রস্থ সর্বস্থরের নেতাকর্মীদের মুখে মুখে। অথচ এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ, আলমগীর মুহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ্ ফরিদ, এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী, আবুবকর সিদ্দিক, এডভোকেট নুরুল আলম, ডাঃ শফিকুল হক সহ আরো অনেক যোগ্য ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বসম্পন্ন প্রার্থী এ আসনে থাকা সত্বেও কক্সবাজার-২ আসনে প্রার্থী মনোনয়ন দিতে এত বিলম্ব ও তালবাহনা করা হলো কেন? কে দেবে ত্যাগী, আদর্শিক তৃণমূলের নেতাকর্মীদের এসব যৌক্তিক প্রশ্নের সঠিক জবাব? তবে অভিজ্ঞজনদের ধারণা-সময় বলে দেবে, এ আসনের জিয়ার আদর্শের সৈনিক, ইসলাম প্রিয় মানুষের এ করুন দুর্দশার জন্য কে বা কারা নেপথ্য ও প্রকাশ্যে দায়ী? তবে ততক্ষণে আম-চালা দুটোই যাবে।