বিশেষ প্রতিনিধি :
কক্সবাজার শহরের কলাতলীতে গণপূর্ত বিভাগের আবাসিক এলাকার পূর্বপাশে গণপূর্তের সবুজ বেষ্টনি প্রকল্পের ৪.২২ একর জমিতে অবৈধভাবে প্রতিদিন প্রকাশ্যে দিনে-দুপুরে গড়ে উঠছে একের পর এক বহুতল ভবন। এখন সেখানে একযোগে ছোট-বড় ১৭টি স্থাপনা নির্মাণের কাজ চলছে। ইতিপূর্বে প্রায় অর্ধশত স্থাপনা গড়ে উঠেছে। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো গণপূর্ত বিভাগের সবুজ বেষ্টনি প্রকল্পের জমি হলেও এ বিষয়ে চুপ গণপূর্ত বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এছাড়া অনুমোদিত কোন নকশা ছাড়া এসব ভবন তৈরী হলেও চুপ ছিল কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও। তবে নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার সেখানে নোটিশ জারি করেছে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ রয়েছে, গণপূর্ত বিভাগ ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কয়েকজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজসে গণপূর্তের জমিতে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে এসব বহুতল ভবন গড়ে উঠছে। এমনকি স্থানীয় লোকজন উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও গণপূর্তের কর্মকর্তাদের মৌখিকভাবে এসব বিষয়ে অভিযোগ করলেও কাজের কাজ কিছুই হয় না। যার কারণে একদিকে মূল্যবান সরকারি সম্পদ বেহাত হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে অনুমোদনহীন ভবনের কারণে অপরিকল্পিত নগরায়ণে ঘিঞ্জি এলাকায় পরিণত হচ্ছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কলাতলী সড়কের গণপূর্তের আবাসিক এলাকার পূর্বপাশে ‘সবুজ বেষ্টনি প্রকল্প’র জমি দখল করে তাতে গড়ে উঠেছে সৈকতপাড়া। সেখানে বর্তমানে নুরুল আলম, কামাল উদ্দিন, আবুল কালাম, জসিম, মুজিব মিস্ত্রী, মোর্শেদ, কামরুল ইসলাম, হাশেম, ভূট্রো, কবির সওদাগর, মকবুল আহমদ, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অফিস সহকারি নুরুল আলম, সাবেক বন কর্মকর্তা নাছির উদ্দিন, আক্কাস, সেলিম সহ ১৭ জন দখলদার ১৭টি বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ করছেন। এমনকি গণপূর্তের ৮তলা বিশিষ্ট ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পের অধীনে নির্মিত ভবনের ১০ ফুট দুরত্বের মধ্যেও বেশ কিছু অবৈধ ভবন গড়ে তোলা হচ্ছে। গণপূর্তের আবাসিক এলাকার লোকজন অভিযোগ করে জানান, গণপূর্ত ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ের মাত্র ৫০০ গজের মধ্যে অবৈধভাবে একযোগে ১৭টি ভবনের নির্মান কাজ চললেও দুই কর্তৃপক্ষই এ বিষয়ে রহস্যজনক কারণে চুপ রয়েছে। এমনকি তারা এসব বিষয়ে ওই দুই সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কর্মকর্তাকে মৌখিকভাবে অবহিত করলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। এলাকাবাসী আরও জানান, সরকারি জমিতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত নকশা ছাড়া যত্রতত্র বহুতল ভবন নির্মানের ফলে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের আলোকে কক্সবাজার পৌরসভা কর্তৃক নির্মাণাধীন রাস্তা এবং ড্রেইন নির্মাণেও বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া উক্ত জমিতে পরিচিহ্নিত করা সবুজ বেস্টনি প্রকল্পসহ সরকারি অন্যান্য প্রকল্প বাস্তবায়নও বাধাগ্রস্থ হবে।

নির্মাণাধীন একটি স্থাপনার মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, অবৈধভাবে বহুতল ভবন নির্মাণের নেপথ্যে রয়েছেন কামরুল ইসলাম। তিনি নিজেও অবৈধভাবে ভবন নির্মাণ করছেন। সরকারি দপ্তরগুলোর সাথে ভাল সর্ম্পক রয়েছে উল্লেখ করে সাধারণ লোকজনকে অভয় দিয়ে ভবন নির্মাণের কাজে নামিয়ে দিয়েছেন তিনি। কাজ শুরু হওয়ার পর গণপূর্ত, কউক, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের নামে মোটা অংকের টাকা উত্তোলন করেন। এমনকি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে তার এক নিকটাত্ত্বীয় দায়িত্বে রয়েছেন বলেও প্রচার করেন।
জানতে চাইলে নির্মাণাধীন একটি স্থাপনার মালিক নুরুল আলম বলেন, ‘এসব অবৈধ তা আমরা জানি। তবে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগে টাকা-পয়সা দিয়েই আমরা কাজ করছি। সাংবাদিকদেরও আমরা কম-বেশি সম্মান করছি। আপনি কামরুল সাহেবের সাথে যোগাযোগ করুন।’

যোগাযোগ করা হলে কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এসবের সাথে জড়িত নয়, কারো কাছ থেকে টাকা-পয়সাও তুলিনি।’

সৈকতপাড়া বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি শরাফত উল্লাহ সিকদার বাবুল বলেন, ‘এসব গণপূর্তের জমি তা সত্য। এখানে অনুমোদন ব্যতিত কাউকে ভবন না করতে সমিতির পক্ষ থেকে সবাইকে বলে দেয়া আছে। কিন্তু এরপরও অনেকেই নিষেধ না মেনে স্থাপনা নির্মাণ করছে। এতে আমার করার কিছুই নেই।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গণপূর্ত বিভাগ কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমার তেমন কিছু জানা ছিল না। তবে আমি খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিব।’

দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল (অবঃ) ফোরকান আহমেদ বলেন, ‘ইতিমধ্যেই সেখানে অভিযান চালানো হয়েছে। নোটিশ জারি করা হয়েছে। কিন্তু গণপূর্তের জমিতে অবৈধভাবে স্থাপনা গড়ে উঠছে, গণপূর্ত বিভাগ এক্ষেত্রে কি করছে। তাদের দায়িত্ব কি?’
তিনি আরও বলেন, ‘খোদ জেলা প্রশাসনের একজন উচ্চমান সহকারিও সেখানে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ করছে।’ এক্ষেত্রে তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করে বলেন, ‘কক্সবাজারকে পরিকল্পিত নগরী হিসেবে সাজাতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’