ডেস্ক নিউজ:

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন বণ্টন নিয়ে শেষ সময়ে ‘চাপা অসন্তোষ’ বিরাজ করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটে। প্রত্যাশীত আসন না পাওয়ায় এ অসন্তোষ দেখা দিয়েছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন শরীকদলগুলোর নেতারা।

জোট নেতাদের ভাষ্য, সম্প্রতি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শরীকদলকে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ দিয়ে চিঠি হস্তান্তর করা হয়। এরপর থেকেই চাপা অসন্তোষ বিরাজ করছে শরীকদের মাঝে। জোটের চূড়ান্ত আসন বণ্টন অনুযায়ী ওয়ার্কার্স পার্টিকে পাঁটি, জাসদ (ইনু) তিনটি, জাসদ (আম্বিয়া) একটি, তরীকত ফেডারেশন দুইটি এবং যুক্তফ্রন্টকে তিনটিসহ মোট ১৬টি আসন দেয়া হয়। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির জন্য ৪০ থেকে ৪২টি আসন রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ক্ষমতাসীন মহাজোটের বিভিন্ন দল আসনের এমন ভাগাভাগি নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারেনি শরিকরা। বিশেষ করে জাতীয় পার্টি, যুক্তফ্রন্ট ও জাসদ (আম্বিয়া) নেতারা আওয়ামী লীগের এ আসন ভাগাভাগি মেনে নিতে পারছে না। কাঙ্ক্ষিত আসন না পাওয়ায় নিজ নিজ দল ও জোটের মধ্যে চাপের মুখে পড়েছেন তারা।

তারা বলছেন, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মাঝে বিস্তর ফারাক দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে এইচ এম এরশাদের জাতীয় পার্টির জন্য ছেড়ে দেয়া আসন সংখ্যা নিয়েও দেখা দিয়েছে ধোঁয়াশা। পাশাপাশি মহাজোটের পরিসর বৃদ্ধিতে যুক্ত হওয়া সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টও পায়নি প্রত্যাশীত আসন। তবে এ বিষয়ে অনমনীয় মহাজোটের প্রধান শরীক আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগ ও জোট শরীক দলগুলোর বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী জাতীয় পার্টির জন্য ৩৬টি আসন ছেড়ে দেয়ার কথা বলা হয়েছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। তবে শেষ পর্যন্ত এ সংখ্যা ২৫টিতেও নেমে আসতে পারে। ২৫ আসনের ঊর্ধ্বে বাকি আসনে জাতীয় পার্টিকে অন্যান্য দলের পাশাপাশি লড়াই করতে হতে পারে খোদ আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গেই। এমনটা দেখা দিতে পারে ঢাকা-১৭ আসনে। সেখানে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী নায়ক ফারুক।

জাতীয় পার্টি (জাপা) মহাজোটের কাছ থেকে ঠিক কতগুলো আসন পেয়েছে এ বিষয়ে দলের শীর্ষ নেতারা মন্তব্য করতে রাজি হননি। জাপার একাধিক নেতার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও রহস্যজনকভাবে এড়িয়ে গেছেন তারা।

আসন বণ্টন নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোটের দ্বিতীয় বৃহত্তম শরীক জাতীয় পার্টির অসন্তোষ বিরাজ করছে। দলটির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, আমরা আশা করেছিলাম কমপক্ষে ৫০-৫৫টি আসন দেয়া হবে, কিন্তু তা পাইনি।

এ ছাড়া প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তি মেলাতে পারছেন না যুক্তফ্রন্টের নেতারাও। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নানকে লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে, যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি. চৌধুরীকে মুন্সিগঞ্জ-১ আসনে এবং এম এম শাহীনকে মৌলভীবাজার-৩ আসন দেয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান বলেন, তারা তো আমাদের আসনগুলো দিল না। আমাদের নেতাকর্মীরা খুবই ক্ষুব্ধ। আমরা জোট ধরে রাখতে পারছি না। আমাদের দাবি ছিল ২৬টা। এর মধ্যে ১৫টা পাব বলে মনে করেছিলাম। কিন্তু আমাদের যুক্তফ্রন্টের অন্য দলের একটিকেও দেয়া হয়নি।

তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে, আশা করছি, যে সব আসনে আমাদের জয়ী প্রার্থী রয়েছে সেগুলো আমরা পাব।

যুক্তফ্রন্টের সমন্বয়ক গোলাম সারওয়ার মিলন জাগো নিউজকে বলেন, আমরা প্রত্যাশীত আসন না পাওয়ায় কিছুটা ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তবে আশা করছি, মহাজোট নেতা শেখ হাসিনার সঙ্গে যুক্তফ্রন্ট নেতা অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর আলোচনার মাধ্যমে প্রত্যাশীত আসনগুলো পাব।

যুক্তফ্রন্টের দাবি অনুযায়ী সুনামগঞ্জ-১, সাতক্ষীরা-৪, মানিকগঞ্জ-২, সিলেট-৬, নীলফামারী-১ এবং চট্টগ্রাম-২ আসন দাবি করা হচ্ছে।

এদিকে বাংলাদেশ ন্যাশনাল পার্টির মহাসচিব গোলাম মোস্তফা জাগো নিউজকে বলেন, আমরা নির্বাচনে আছি। প্রত্যাশা করেছিলাম মহাজোট আমাদেরকে সমর্থন করবে। যদি নাও করে, তাতেও আমরা নির্বাচনের মাঠে ভোটের লড়াইয়ে অংশ নেব।

আওয়ামী লীগের একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, বিকল্পধারার চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টকে তিনটির বেশি আসন ছাড়তে নারাজ তাদের হাইকমান্ড। পাশাপাশি গণভবনের একটি সূত্র দাবি করেছে, শনিবার রাতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তবে ওই সাক্ষাৎ সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।