শাহেদ মিজান, সিবিএন:


বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২৩ দলীয় জোটে বিএনপি ও শরীকদলের মধ্যে আসন ভাগাভাগির বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। বিএনপির শীর্ষ শরীকদল জামায়াত ইসলামীর জন্যও যে আসনগুলোর তালিকা প্রকাশ হয়েছে তারও একই অবস্থা। এই পরিস্থিতিতে কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনে বিএনপি ও জামায়াত প্রার্থী ঘোষণা করে রেখেছে। বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন সপ্তম ও অষ্টম সংসদের নির্বাচিত সংসদ সদস্য আলমগীর ফরিদ এবং জামায়াতের মনোনয়ন পেয়েছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং নবম সংসদের নির্বাচিত সংসদ সদস্য এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ। তবে আসন ভাগাভাগির চুক্তি চূড়ান্ত না হওয়ায় জেলার তিন আসনে বিএনপি প্রার্থী চূড়ান্ত করলেও এই আসনে করেনি।

অন্যদিকে জামায়াতও ‘নাছোড়বান্দা’ হয়ে আছে। কারণ জোটের হিসাবে এই আসনটি হামিদ আযাদের পাওয়ার কথা! তবে তিনি শেষ পর্যন্ত কারামুক্ত হয়ে নির্বাচনের মাঠে আসতে পারছেন কিনা? তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। ফলে প্রার্থী নিয়ে টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে এই আসনের বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা। এই বিষয়টি এখন মহেশখালী-কুতুবদিয়ায় একমাত্র আলোচনা বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সূত্র মতে, দীর্ঘদিনের দলীয় বহিস্কারাদেশ কাটিয়ে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন আলমগীর ফরিদ। তাঁর নির্বাচনী মনোনয়নও নিশ্চিত হয়েছে। অন্যদিকে জামায়াতের কারাবন্দী এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদের মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়ায় কক্সবাজার-২ আসনে তিনিও নির্বাচনের যোগ্য হয়েছেন। তবে যে-ই প্রার্থী হোক দু’জনই ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়বেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জোটের মনোনয়ন ছিনিয়ে আনতে দু’নেতাই এখন তুমুল প্রতিযোগিতায় রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না হওয়ায় দু’শিবিরই মনোনয়ন প্রাপ্তি নিয়ে বেশ সন্দেহ ও আতঙ্কে রয়েছে।

দলীয় সূত্র মতে, আলমগীর ফরিদ দলীয় মনোনয়ন পেলেও এখনো চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত হয়নি। তাই এখনো ভোটের মাঠে সেভাবে প্রচারণায় নামতে পারেনি। তবে চূড়ান্ত মনোনয়ন ছিনিয়ে আনার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি এই জন্য তিনি সেই থেকে ঢাকায় পড়ে রয়েছেন। তিনি হামিদ আযাদের কারাবদ্ধতাকে পুঁজি করে চূড়ান্ত মনোনয়ন ছিনিয়ে আনার জোর তদবির করছেন। তিনি দলকে বোঝাতে চাচ্ছেন- কারাবদ্ধ হামিদ আযাদ কোনোভাবেই প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের জন্য ‘ফিট’ নয়। তাকে মনোনয়ন দেয়া হলে আসনটি হারাবে বিএনপি জোট।

জামায়াতের সূত্র জানিয়েছে, জেলে থাকলেও হামিদ আযাদ নির্বাচনের যোগ্য বিবেচিত হয়েছেন। তাই তারা যে কোনোভাবেই জোট থেকে এই আসনটি হামিদ আযাদের জন্য নিয়ে নেবেন। তবে তারাও কারাবদ্ধ হামিদ আযাদকে নিয়ে নির্ভার নয়। প্রতিযোগিতামূলক ভোটের লড়াইয়ে জামায়াতও হামিদ আযাদকে মাঠে নামিয়ে নির্বাচনে লড়তে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। এই জন্য যে কোনো মূল্যে তাঁকে কারাগার থেকে মুক্ত করতে মরিয়া হয়ে কাজ করছে জামায়াত। তবে তার নিশ্চয়তা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

আলমগীর ফরিদের অনুসারীরা বলছেন, ৮ ডিসেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত আসন ভাগাভাগির এই সময়ে হামিদ আযাদের জেল থেকে মুক্ত হওয়া মাত্র ২০ ভাগ সম্ভাবনা। বাকি ৮০ ভাগ অনিশ্চিত। এর মধ্যে তিনি কারামুক্ত হতে না পারলে আলমগীর ফরিদের মনোনয়ন পাওয়া নিশ্চিত হবে। তাই আলমগীর ফরিদ সেভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

এই বিষয়টি নিয়ে জামায়াতের তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও একইভাবে সন্দিহান। তাদের মধ্যেও এখন পর্যন্ত ধারণা- হামিদ আযাদ জেল থেকে বের হতে না পারলে আলমগীর ফরিদ মনোনয়ন ছিনিয়ে নেবেন। তাই তারা বড়ই হতাশ হয়ে পড়েছেন। তবে জামায়াতের শীর্ষ নেতারা বিষয়টি সেভাবে দেখছেন না। তারা পরিস্থিতি যা-ই হোক হামিদ আযাদের মনোনয়ন নিশ্চিত করার ব্যাপারে বেশ আশাবাদী। কিন্তু বিপুল টাকা খরচ করে হামিদ আযাদকে জেলে পুরে রাখার চেষ্টা করছে আলমগীর ফরিদ- এমন অভিযোগ জামায়াতের।

জোটের সূত্র মতে, কক্সবাজার-২ আসনে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়ার চূড়ান্ত নেবে আগামীকাল ৮ ডিসেম্বর। কেননা ৯ ডিসেম্বর দুইজনের একজনকে নির্বাচন কমিশনের মনোনয়ন প্রত্যাহার করতেই হবে। কারণ একজনকেই ধানের শীষ প্রতীক দেয়া হবে। তাই ৮ ডিসেম্বর রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করলেই আলমগীর ফরিদ ও হামিদ আযাদের অপেক্ষার অবসান হবে!