বলরাম দাশ অনুপম, কক্সবাজার॥

আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা এখনো শুরু না হলেও জমে উঠেছে মাঠে ভোটের লড়াই। দেশের অন্যান্য স্থানে ন্যায় কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ ও বিএনপির মনোনীত প্রার্থী বিভিন্ন এলাকায় মানুষের সাথে কুশল বিনিময় আর দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় করে যাচ্ছে। এই আসনে বিজয়ী হতে আওয়ামীলীগ উন্নয়নকে আর বিএনপির দলীয় ধানের শীষকে পুঁজি করতে পারে বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ। এরই মধ্যে এই আসনে আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী সাবেক সাংসদ লুৎফুর রহমান কাজলের মনোনয়নপত্র গ্রহণের বিষয়ে নানা বক্তব্যে দিয়ে ভোটের মাঠ সরগরম করে তুলেছেন। জানা যায়-কক্সবাজার সদর উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন এবং রামু উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনটি। এই আসনে বর্তমান মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ১৪ হাজার ৩৬ জন। এরমধ্যে সদর উপজেলার ১০৮টি ভোট কেন্দ্রে ভোটার ১ লাখ ৩৫ হাজার ১৪ জন পুরুষ ও ১ লাখ ২১ হাজার ৪ জন মহিলা। অন্যদিকে রামু উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ৬১ ভোট কেন্দ্রে ৮১ হাজার ৪১০ জন পুরুষ ও ৭৬ হাজার ৬০৮ মহিলা ভোটার রয়েছে। ১৯৮৬ সালের পর জেলার সংসদীয় আসন ৪টিতে বিভক্ত হওয়ার পর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত এই আসনে বিএনপি ৩, আওয়ামী লীগ ২ এবং জাতীয় পার্টি ১ বার বিজয়ী হয়। সর্বশেষ ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে থাকার পরও আওয়ামীলীগের প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমলকে ৩৯ হাজার ৯৪২ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে সদর-রামু আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিএনপির লুৎফুর রহমান কাজল। এ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী লুৎফুর রহমান কাজল ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পেয়েছিলেন ১ লক্ষ ২৬ হাজার ৪৭৮ ভোট আর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামীলীগের সাইমুম সরওয়ার কমল নৌকা প্রতীক নিয়ে পেয়েছিলেন ৮৬ হাজার ৫৩৬ ভোট। এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন আওয়ামীলীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল। ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও যাচাই-বাছাইকালে বাতিল করা হয় নজিবুল ইসলামের মনোনয়নপত্রটি। ফলে বর্তমানে ভোটের লড়াইয়ে রয়েছে ৫ প্রার্থী। এরা হলেন-ইসলামী শাসনতন্ত্রের মোহাম্মদ আমীন, বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের লুৎফুর রহমান কাজল, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী মফিজুর রহমান, আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ হাছন। তবে বরাবরের মতই গুরুত্বপূর্ণ এই আসনটিতে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি’র প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশ্লেষক ও সাধারণ ভোটারেরা। ক্ষমতাসীন দল চাচ্ছে, সরকারের চলমান উন্নয়নকে পুঁজি করে আগামী নির্বাচনেও আসনটি নিজেদের দখলে নিতে অন্যদিকে বিএনপির দাবি, নিরপেক্ষ ভোট হলে তাদের বিজয় সু-নিশ্চিত। তবে সবমিলিয়ে যেন এই আসনে হওয়ায় দুই দলের ভাবনার যেন শেষ নেই। তাই ভোটাররা চাচ্ছেন একাদশ জাতীয় নির্বাচনে এমন একজন প্রার্থীকে বেছে নিতে যিনি এলাকার উন্নয়ন ও জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করবেন। খুরুশকুলের ডেইল পাড়ার বৃদ্ধ ভোটার মোহাম্মদ কাশেম বলেন-দেশের উন্নয়নের স্বার্থে যে প্রার্থীই কাজ করবে তাকে বিজয়ী করে আগামী সংসদে পাঠানো উচিত। রামুর কলঘর এলাকার নতুন ভোটার আব্দুল খালেক বলেন-যে দেশের উন্নয়নে কাজ করতে পারবেন, সেরকম একজন যোগ্য প্রার্থীকে বেঁচে নিবে তরুন ভোটাররা। এছাড়া যে প্রার্থী তরুণদের অগ্রাধিকার দিবে, আমরা তাকেই নির্বাচনে বিজয়ী করবো। অন্যদিকে পিএমখালীর তুতুকখালীর নাজমা বেগম নামের এক মহিলা ভোটার বলেন-আমরা চাই আমাদের নিজেদের ভোটটি সুষ্ঠু ভাবে প্রয়োগ করতে। যদি ভোটের সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশ পাওয়া যায় তাহলেই যোগ্য প্রার্থী বেঁছে নিয়ে তাকেই ভোট দিব। তবে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির উপজেলা পর্যায়ের নেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। কক্সবাজার সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল করিম মাদু বলেন, বর্তমান আওয়ামীলীগের সরকারের আমলে যত উন্নয়ন হয়েছে। স্বাধীনতা পর থেকে সদর-রামুতে এত উন্নয়ন হয়নি। আর সেই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতেই নির্বাচনে সাধারণ মানুষ নৌকা প্রতীকে ভোট দিবে। অন্যদিকে কক্সবাজার সদর ও রামু উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে উল্লেখ করে সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন জিকু বলেন-সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে এই আসনে বিএনপির প্রার্থীই বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন। এতে কোন সন্দেহ নেই। তবে সাধারণ ভোটার কিংবা আওয়ামীলীগ-বিএনপির নেতারা যে বলুক না কেন তার ফল পেতে অপেক্ষা করতে হবে আগামী ৩০ ডিসেম্বর ভোটের ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত।