বিশেষ প্রতিবেদক:
উখিয়া থানার জিআর মামলা নং-২৫০/১৮। থানা মামলা নং-১৯। উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের মাদারবনিয়া চাকমা পাড়ার বাসিন্দা ধনু রাম চাকমার ছেলে নির্মল কান্তি চাকমা মামলাটির বাদি। গত ১৪ জুলাই দায়ের করা মামলাটির আসামী একই এলাকার কবির আহমদ প্রকাশ কবির হাজি (৫৭), কুলসুমা বেগম (২৫), আনোয়ারুল ইসলাম (২৮), আবুল মনসুর প্রকাশ মনসুর আলম (২৬)। মামলা অজ্ঞাতনামা আসামী হিসেবে রাখা হয়েয়ে আরো ৩/৪ জন।
মামলার এজাহার মতে, বনের জমিতে চাষাবাদের কাজ করা নিয়ে জালিয়াপালং ইউনিয়নের মাদারবনিয়া এলাকায় গত ১৪ জুলাই দুইটি পক্ষের মধ্যে ঘটনা ঘটে। ঘটনার বর্ণনা দেয়া হয়েছে ঠিক এভাবে, মামলার ২ নং আসামী কুলসুমা বেগমের দায়ের কোপে বাদি নির্মল কান্তি চাকমার বড় ভাই চাকানু চাকমার ডান হাতের কনুইয়ের নীচে হাড় কাটা জখমপ্রাপ্ত হন। ৩ নং আসামী আনোয়ারুল ইসলামের দায়ের কোপ বাদির ভাগিনা চিংঅং চাকমার ডান হাতের কব্জির উপর লেগে রক্তাক্ত কাটা জখম হন। এ সময় ১ নং আসামী কবির আহমদ প্রকাশ কবির হাজি লোহার শাবল দিয়ে তার পীঠে আঘাত করে। ৪ নং আসামী আবুল মনসুর ধারালো কুদাল দিয়ে বাদির অপর ভাগিনা অংথাইংচা চাকমাকে আঘাত করে। ইত্যাদি…।
মামলার এজাহার মতে, ১৪ জুলাই ঘটনাটি ঘটেছে বিকাল ৪টায়। উখিয়া থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয় একই দিন বিকাল সাড়ে ৫টায়। প্রশ্ন হলো- ঘটনার মাত্র দেড় ঘন্টার ব্যবধানে থানায় মামলা দায়ের কিভাবে সম্ভব হলো? একটি মামলার এজাহার লিখতেও তো ঘন্টা পার হয়ে যায়। এরপর থানায় যেতেও মেলা সময় যায়।
কেইস স্টাডিতে উঠে আরো কিছু তথ্য। উখিয়া থানা থেকে ঘটনাস্থল মনখালীর দূরতœ প্রায় ২৫ কিলোমিটার, কক্সবাজার শহরের দূরত্ন ৭০ কিলোমিটার। গ্রামীন সড়ক হয়ে এই দূরত্ন পাড়ি দিতে অন্তত দুই ঘন্টা ব্যয় হবে। জেলা সদর হাসপাতালে যেতে আসতেও অনেক সময় দরকার। মনখালী থেকে সদর হাসপাতাল, আবার হাসপাতাল থেকে উখিয়া থানায় পৌঁছতে আসা যাওয়া দুই পথ মিলে দূরত্ন প্রায় ১৪০ কিলোমিটার। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, মাত্র দেড় ঘন্টায় এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়া আদৌ সম্ভব কিনা?
এরপর আসা যাক এমসি তথা ‘মেডিকেল সনদ’ প্রসঙ্গে। উখিয়া থানার ১৯ নং মামলা মূলে জেলা সদর হাসপাতালের ১৭/০৭/২০১৮ ইং তারিখে ৪৭৩০ (৩) স্মারকে ইস্যুকৃত ‘জখমী সনদ’-এ উল্লেখ আছে, ভিকটিম সাক্কানো চাকমা, চিংঅং চাকমা, কিয়ামং চাকমা গত ১৪/০৭/২০১৮ ইং সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় হাসপাতালে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছেন। আর হাসপাতালের জরুরী বিভাগে এন্ট্রি তথা ভর্তি দেখানো হয়েছে ১৫/০৭/২০১৮ ইং। প্রশ্ন উঠে, ভর্তি না হয়ে কিভাবে তারা পরীক্ষা করলেন, চিকিৎসাসেবা নিলেন? ভর্তিবিহীন কোন রোগিকে আদৌ জরুরী বিভাগে চিকিৎসা দেয়ার নজির, নিয়ম আছে কিনা?
মামলার এজাহারে বাদি উল্লেখ করেছেন, ৩ নং আসামী আনোয়ারুল ইসলামের দায়ের কোপে বাদির ভাগিনা চিংঅং চাকমার ডান হাতের কব্জি রক্তাক্ত কাটা জখমপ্রাপ্ত হন। তদন্ত কর্মকর্তা মোঃ বিল্লাল হোসেন পেয়েছেন ভিন্ন চিত্র। তিনি চার্জশীটে উল্লেখ করেছেন আনোয়ারুল ইসলাম দা দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে চিংঅং চাকমার ডান হাতের কনিষ্ট আঙ্গুলে গুরুতর রক্তাক্ত কাটা জখম করে। এজাহার ও চার্জশীটে মারাত্নক গরমিল পাওয়া গেছে। ‘শাক দিয়ে মাছ ডাক’তে গিয়ে এমন হয়েছে বলে মন্তব্য করেন বিশ্লেষকরা।
মামলার আসামী পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ আবদুল মন্নানের কাছে জানতে চাইলে বলেন, কুলসুমা বেগমকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে বেঁধে রাখে কথিত ভিকটিমেরা। তাকে উদ্ধার করতে গিয়ে হামলার শিকার হন কুলসুমার শ্বশুর বাড়ির লোকজন। কিন্তু চিহ্নিত দুস্কৃতিকারীরা উল্টো কুলসুমাসহ তার শ্বশুরালয়ের লোকজের নামে থানায় মিথ্যা মামলা দায়ের করে। এ মামলায় আনোয়ারুল ইসলাম বিগত প্রায় দেড় মাস ধরে কারাবন্দি রয়েছেন। হয়রানীমূলক মামলা, মিথ্যা এমসি সংগ্রহে উপজাতীয় এক পুলিশ কর্মকর্তার হাত রয়েছে বলে মন্তব্য করেন এডভোকেট মোহাম্মদ আবদুল মন্নান। তিনি জানান, কথিত ভিকটিমদের বিরুদ্ধে কুলসুমা বেগম বাদি হয়ে কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে সিপি ৩৬০/১৮ এবং শ্বশুর কবির আহমদ প্রকাশ কবির হাজি বাদি হয়ে সিআর-২২৯/১৮ নং মামলা দায়ের করেন।