বিশেষ প্রতিবেদক:
জুমার নামাজে মাদকের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়ায় টেকনাফে এক মসজিদের ইমাম ও খতীবের উপর স্বশস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটেছে। খতীবকে প্রকাশ্যে মারধর ও লাঞ্ছিত করেছে চিহ্নিত মাদক কারবারীরা। ৩০ নভেম্বর টেকনাফের হ্নীলা মরিচ্যাঘোনা এলাকায় ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি ঘটে। আহত হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম (৩৪) স্থানীয় হায়দর মাতাব্বর জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও খতীব। একই এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারী মুহাম্মদ হোসাইন, ফয়সাল করিম ও নুর হোসেন ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী লোকজন জানিয়েছে। এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। স্থানীয়রা ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেছে। হামলার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভিকটিম হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ২৮ নভেম্বর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক সভায় মাদক ব্যবসা ও সেবনের কুফল সম্পর্কে জুমার নামাজে সচেতনতামূলক বক্তব্য দিতে আলেমদের অনুরোধ করেন টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রবিউল হাসান। প্রশাসনের নির্দেশনা মতে মাদক ব্যবসা ও সেবনের বিরুদ্ধে আলোচনা করেন খতীব মাওলানা মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম। তাতে ক্ষিপ্ত মাদক ব্যবসায়ীরা খতীবের উপর স্বশস্ত্র হামলা করে। মুসল্লি ও সাধারণ মানুষের সামনে একজন আলেমকে চরম অপমানিত করে। তাতে পুরো এলাকায় ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় উঠে।
ভিকটিম হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম জানান, মাদকের কারণে এলাকার করুণ অবস্থা। ছোট বড় সব বয়সের মানুষ ভয়ানক পেশায় জড়িয়ে পড়ছে। এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। তাই প্রতি জুমা ও বিভিন্ন আলোচনায় মাদকের কুফল তুলে ধরেন মাওলানা মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম। তাতে মাদক কারবারীরা নাখোশ। মাদকের বিরুদ্ধে বক্তব্য না দিতে বিভিন্ন সময় হুমকি দেয়। অবশেষে ৩০ নভেম্বর এশার নামাজের অযুরত অবস্থায় হামলে পড়ে মাদক ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, কক্সবাজার শহরে অভিযুক্ত মাদক কারবারীদের ৪টি হোটেল, ২টি বিলাস বহুল বাড়ি রয়েছে। সেখান থেকে তারা মাদকের কারবার নিয়ন্ত্রণ করে। এলাকায় রয়েছে তাদের সিন্ডিকেটের কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী। বিনা বাঁধায় দীর্ঘদিন ধরে চলছে তাদের মাদক ব্যবসা।
টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রবিউল হাসান জানান, সরকারের নির্দেশনা মেনে মাদকের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়ায় একজন আলেমের উপর হামলার ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। এতে জড়িতদের বিরুদ্ধে জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে থানার ওসিকে বলা হয়েছে।
হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের ১ নং ওয়ার্ডের সদস্য বশির আহমদ জানিয়েছেন, জুমার নামাজে মাদক ব্যবসায়ীর নাম উল্লেখ না করেই আলোচনা করেন মাওলানা মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম। তারপরও মাদক ব্যবসায়ীরা হামলার ঘটনাটি ঘটায়। জনসমক্ষে লাঞ্ছিত করে খতীবকে। এ ঘটনায় পুলিশ অভিযুক্তদের বাড়ীতে অভিযান চালায়।
তবে তিনি দুঃখ করে জানান, মাদক কারবারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাছে অনেকবার অভিযোগ দেয়া হয়েছে। মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে পুলিশের গোপন সখ্যতা রয়েছে। তাই কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়না বলে মন্তব্য করেন বশির আহমদ।