সিবিএন ডেস্ক:
আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, এবারের নির্বাচন আত্মমর্যাদা সমুন্নত রাখার নির্বাচন। বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর নির্বাচন। সুতরাং প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন করে আমরা কিছুতেই আমাদের সম্ভ্রম খোয়াতে পারি না।

সোমবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবনে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণে তিনি একথা বলেন। আজ ১৩টি জেলার ৪০৮ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘নির্বাচনের মূল দায়িত্বপালন করেন প্রিজাইডিং অফিসাররা। তারাই কেন্দ্রের সঞ্চালক। তাই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নতুন সঞ্চালক তৈরির কারিগর আপনারা। এজন্য সংবিধান পাঠ, সেখান থেকে প্রয়োজনীয় জ্ঞান, নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা ছাড়াও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের ভূমিকা, প্রক্রিয়া বিষয়ে সচিতন থাকবেন।’

তিনি নির্ভয়ে, সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্বপালনের আহ্বান জানান। সতর্ক করে বলেন, ‘আপনারা ব্যর্থ হলে নির্বাচনও ব্যর্থ হবে। আপনারা সফল হলে, সমগ্র জাতি সাফল্যে উদ্ভাসিত হবে।’

এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আগে এদেশে নির্বাচনের ধারাবাহিকতার রীতি গড়ে ওঠেনি। তত্ত্বাবধায়ক, সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক ও দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছে। এবারই প্রথম একটি পূর্ণাঙ্গ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা ধারাবাহিকতার ঐতিহ্য সৃষ্টি করতে যাচ্ছি। এজন্য আমরা এই নির্বাচনকে আমরা ভিন্নভাবে প্রবাহিত হতে দিতে পারি না।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী কর্মকর্তাদের কাছে জনগণের চাওয়া খুবই সামান্য, ভোট কেন্দ্রে ইচ্ছেমত পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়া। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তাদের এই সামান্য চাওয়াই এখন বিশাল কর্মযজ্ঞে রুপান্তরিত হয়েছে। তাদের প্রত্যাশা পূরণে আপনারা সচেষ্ট থাকবেন। প্রায় ১০-১২ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত। ভোটকেন্দ্রের সকল অনিয়ম রোধ, শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগের ক্ষমতা আপনাদের দেয়া হয়েছে। আপনাদের দায়িত্বপালনে কোনো শিথীলতা বরদাস্ত করা হবে না। মনে রাখবেন, যুদ্ধক্ষেত্রে সৈনিকের মতো আপনাদের সম্মুখ সমরেও সাফল্যের কোনো বিকল্প নেই।’

মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘নির্বাচনের পূর্বশর্ত হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষতা। আইনানুগভাবে কর্তব্য পালনে আপনারা দৃঢ় ভূমিকা রাখবেন। মনে রাখবেন, আইন যদি নিজস্ব গতিতে না চলে। তাহলে কোনো কার্যক্রমই আইনানুগ হতে পারে না। সবার জন্য সমভাবে আইনের প্রয়োগ করা না হলে সেই আইন, আইন নয়, আইনের অপলাপ মাত্র। তাই আইন সিদ্ধ না হলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠবে। প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন করে আমরা নিজেদের কলঙ্কিত করতে চাই না। আমি জানি, আপনাদের কেউ-ই এর ভাগিদার হতে চাইবেন না।’

তিনি বলেন, ‘আগামী ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মানুষ ইতিহাসের এক সোনালী অধ্যায় রচনা করবে। সেই সোনালী অধ্যায়ের রূপকার আপনারা। জাতির এই ক্রান্তি লগ্নে আপনারা এক মহান দায়িত্ব লাভ করেছেন। একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে আপনাদের অবদান জাতির ইতিহাসে গৌরবগাঁথা হয়ে থাকবে। আমরা শুধু দেশবাসী নয়, বিশ্ববাসীর নজরদারির সামনে। আমাদের প্রতিটি কার্যকলাপ, প্রতিটি পদক্ষেপ সবাই প্রত্যক্ষভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।’

মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘এই নির্বাচন আমাদের আত্মমর্যাদা সমুন্নত রাখার নির্বাচন। একটি মর্যাদাবান জাতি হিসেবে বিশ্বসভায় আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই। আমরা কিছুতেই আমাদের সম্ভ্রম খোয়াতে পারি না।’