ইমাম খাইর, সিবিএন:
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে কক্সবাজারের চারটি সংসদীয় আসনে ৩৪ প্রার্থীর মধ্য থেকে জাতীয় পার্টির একজনসহ ৪ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষিত হয়েছে। হলফনামায় মিথ্যা তথ্য, কর ফাঁকি, স্বাক্ষর জালিয়াতি, সম্পদের পূর্ণাঙ্গ বিবরণী না দেয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
সবচেয়ে বেশি অভিযোগ কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ মোহিবুল্লাহর বিরুদ্ধে। তিনি নিজের টিআইএন থাকা সত্ত্বেও আয়কর বিবরণী দাখিল করেননি। অংশীদারী ফার্ম ডক্টরস চেম্বারের টিআইএন ব্যবহার করেছেন। বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তোলেন সহকারী কর কমিশনার নিপু চন্দ্র দে।
রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় সুত্র মতে, আয়কর ফাঁকি ও সম্পদের বিবরণী জমা না দেয়ায় কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ মোহিবুল্লাহ, ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরে জালিয়াতির অভিযোগে মহেশখালী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু বক্কর সিদ্দিক, অসম্পূর্ণ আবেদনের কারণে কক্সবাজার-৩ (সদর- রামু) আসনে কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নজিবুল ইসলামের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়।
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রের সাথে সংসদীয় এলাকার মোট ভোটার সংখ্যার ১% ভোটারের সম্মতিসূচক স্বাক্ষর নিয়ে মনোনয়নপত্রের সাথে দাখিল করতে হয়। কিন্তু কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী মনোনয়নপত্রে ভোটারদের এরকম কোন স্বাক্ষর নেননি। সে কারণে মনোনয়নপত্রটি রিটার্নিং অফিসার মোঃ কামাল হোসেন সরাসরি বাতিল ঘোষণা করেন।  তবে, এ সময় কোন প্রার্থীই উপস্থিত ছিলেন না।
রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেনের নেতৃত্বে মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাইয়ে ছিলেন- অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মাসুদুর রহমান মোল্লা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আশরাফুল আবসার, জেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ বশির আহমদ, সদর নির্বাচন অফিসার শিমুল শর্মা। এছাড়া সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতিনিধি, কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
রোববার (২ ডিসেম্বর) সকাল ১০ টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত কক্সবাজার হিল ডাউন সার্কিট হাউজ-এর সম্মেলন কক্ষে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া চলে।
তবে, কক্সবাজার সদর আসনে বিএনপির প্রার্থী লুৎফুর রহমান কাজলসহ চারজনের মনোনয়নপত্র সন্ধ্যায় আলাদা শুনানী করে বৈধতা দেন রিটার্নিং অফিসার। বিষয়টি নিয়ে পুরো দিন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের মাঝে বেশ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা গেছে।
জানা গেছে, কক্সবাজার-৩ আসনে বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী লুৎফুর রহমান কাজলের দাখিলকৃত মনোনয়নপত্রের বৈধতার ব্যাপারে একই আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমল ও তার লিগ্যাল এডভাইজার এডভোকেট ফরিদুল আলম মনোনয়নপত্র বাছাই চলাকালে লুৎফুর রহমান কাজলের আয়কর প্রদান সংক্রান্ত একটি অভিযোগ উঠান। তখন রিটার্নিং অফিসার মো. কামাল হোসেন বিএনপি’র প্রার্থী লুৎফুর রহমান কাজলের মনোনয়নপত্রের বৈধতার বিষয়ে আরও যাচাই-বাছাই করে বিকেলের দিকে সিদ্বান্ত দেওয়া হয়।

এদিকে, লুৎফুর রহমান কাজলের মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমলের সমর্থিত লোকজন রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় প্রাঙ্গনে ব্যাপক বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
কাজলের মনোনয়ন ফরম বাতিল করতে রিটার্নিং অফিসার, নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীরা নানা শ্লোগান তুলে। যদিওবা এই কর্মসূচিকে ভালোভাবে নেয়নি রাজনৈতিক বোদ্ধারা।
এ সময় অনেককে বলতে শুনা গেছে, এটি প্রশাসনকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলার চক্রান্তের অংশ বিশেষ।
নির্বাচন কমিশনের আদেশ মতে, বাছাইয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার পরও কেউ প্রার্থীতা প্রত্যাহার করতে চাইলে আগামী ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে পারবেন। এ পর্বের পর ১০ ডিসেম্বর প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রতীক বরাদ্দের পরই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থীরা প্রচার চালাতে পারবেন। গত ৮ নভেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ২৮ নভেম্বর মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন ছিল। সব ঠিকঠাক থাকলে ভোটগ্রহণ হবে ৩০ ডিসেম্বর।
কক্সবাজার জেলার ৪টি পৌরসভা ও ৭১ ইউনিয়নের ৫১২ ভোটকেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ২০৪ জন। সেখানে ৭ লাখ ৭ হাজার ৮৩১ জন পুরুষ এবং ৬ লাখ ৫৭ হাজার ৩৭৩ জন মহিলা। ভোট কক্ষের সংখ্যা ২ হাজার ৭৩৮টি।
কক্সবাজার-১ আসনে (চকরিয়া-পেকুয়া) ৮ জন, কক্সবাজার-২ (কুতুবদিয়া-মহেশখালী) আসনে ১২ জন, কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনে ৬ জন এবং কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে ৮জন প্রার্থী মনোনয়ন পত্র জমা দেন।
নির্বাচন কমিশনের তাঙানো বৈধ প্রার্থীরা হলেন
কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) :
এডভোকেট হাসিনা আহমেদ (বিএনপি), জাফর আলম (আওয়ামী লীগ), আলী আজগর (ইসলামী শাসনতন্ত্র), মুহাম্মদ ফয়সাল (এনডিএম), আবু মোহাম্মদ বশিরুল আলম (বাংলাদেশ ওয়ার্কাস পার্টি), বদিউল আলম (স্বতন্ত্র), তানিয়া আফরিন (স্বতন্ত্র) মৌলভী মো: ইলিয়াছ (জাতীয়পার্টি)।
চকরিয়া উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৮টি ইউনিয়ন এবং পেকুয়া উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন নিয়েই কক্সবাজার-১ আসনটি গঠিত।
এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৯০ হাজার ৬৮১ জন। ভোটকেন্দ্র সংখ্যা ১৩৯টি।
চকরিয়া উপজেলায় ১৮টি ইউনিয়নের ৯৯টি ভোট কেন্দ্রের বিপরীতে এক লাখ ৪৮ হাজার ৮০৫ জন পুরুষ ও এক লাখ ৩৫ হাজার ৬০৬ জন নারী মিলিয়ে ভোটার রয়েছে দুই লাখ ৮৪ হাজার ৪১১ জন।
পেকুয়া উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ৪০ ভোট কেন্দ্রের বিপরীতে ৫৫ হাজার ৬২০ জন পুরুষ ও ৫০ হাজার ৬৫০ নারীসহ ভোটার সংখ্যা এক লাখ ৬ হাজার ২৭০ জন।
কক্সবাজার-২ (কুতুবদিয়া-মহেশখালী) :
আশেক উল্লাহ রফিক (আওয়ামী লীগ), এএইচএম হামিদুর রহমান আজাদ (জামায়াত), জসীম উদ্দিন (ইসলামী শাসনতন্ত্র), আবু ইউসুফ মো: মনজুর আহমদ (ইসলামি ঐক্যফ্রন্ট), আলমগীর মো: মাহফুজ উল্লাহ (বিএনপি), শাহেদ সরওয়ার (বিকল্পধারা বাংলাদেশ), মো: শহিদুল্লাহ (এনডিএম), আনসারুল করিম, মো: জিয়াউর রহমান, এ এম মাসুদুল ইসলাম মাসুদ।
কুতুবদিয়া উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন এবং মহেশখালী উপজেলার একটি পৌরসভার ৮টি ইউনিয়ন নিয়েই কক্সবাজার-২ আসনটি গঠিত।
এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৯৬ হাজার ৮১ জন। ভোটকেন্দ্র সংখ্যা ১০৫টি।
কুতুবদিয়া উপজেলায় ৬ ইউনিয়নের ৩৭টি ভোট কেন্দ্রের বিপরীতে ৪৪ হাজার ২৩ জন পুরুষ ও ৪০হাজার ৪৪২ জন নারী মিলিয়ে ভোটার রয়েছে দুই লাখ ৮৪ হাজার ৪৬৫ জন।
মহেশখালী উপজেলার একটি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়নে ৬৮ ভোট কেন্দ্রের বিপরীতে ১ লাখ ৯ হাজার ৯৪৯ জন পুরুষ ও ১ লাখ ১ হাজার ৬৬৭ নারীসহ ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ১১ হাজার ৬১৬ জন।
কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) :
সাইমুম সরওয়ার কমল (আওয়ামীলীগ), লুৎফর রহমান কাজল (বিএনপি), মোহাম্মদ আমিন (ইসলামি শাসনতন্ত্র), মুফিজুর রহমান (জাতীয়পার্টি) ও মো: হাছন।
কক্সবাজার সদর উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন এবং রামু উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন নিয়েই কক্সবাজার-৩ আসনটি গঠিত।
এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ১৪ হাজার ৩৬ জন। ভোটকেন্দ্র সংখ্যা ১৬৮টি।
সদর উপজেলায় ১০৮টি ভোট কেন্দ্রের বিপরীতে এক লাখ ৩৫ হাজার ১৪ জন পুরুষ ও এক লাখ ২১ হাজার ৪ জন নারী মিলিয়ে ভোটার রয়েছে দুই লাখ ৫৬ হাজার ১৮ জন।
রামু উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ৬১ ভোট কেন্দ্রের বিপরীতে ৮১ হাজার ৪১০ জন পুরুষ ও ৭৬ হাজার ৬০৮ নারীসহ ভোটার সংখ্যা এক লাখ ৫৮ হাজার ১৮ জন।
কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) :
শাহজাহান চৌধুরী (বিএনপি), শাহীন আক্তার (আওয়ামী লীগ), সাইফুদ্দিন খালেদ (এনডিএম), আবুল মনজুর, মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন, মোহাম্মদ শোয়াইব।
উখিয়া উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন এবং টেকনাফ উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন নিয়েই কক্সবাজার-৪ আসনটি গঠিত।
এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৬৪ হাজার ৪০৬ জন। ভোটকেন্দ্র সংখ্যা ১০০টি।
উখিয়া উপজেলায় ৪৫টি ভোট কেন্দ্রের বিপরীতে ৬০ হাজার ৪৮৮জন পুরুষ ও ৫৮ হাজার ২৯৭ জন নারী মিলিয়ে ভোটার রয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৭৮৫ জন।
টেকনাফ উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৬টি ইউনিয়নে ৫৫ ভোট কেন্দ্রের বিপরীতে ৭২ হাজার ৫২২জন পুরুষ ও ৭৩ হাজার ৯৯ নারীসহ ভোটার সংখ্যা এক লাখ ৪৫ হাজার ৬২১ জন।