নিজস্ব প্রতিবেদক:
পর্যটন রাণী কক্সবাজার শহরের সমুদ্র সৈকতের ঐহিহ্যের সঙ্গী হয়ে আছে সুস্বাদু ও মানসম্মত খাবারের নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান ‘ফুড ভিলেজ’। সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধ সী-ইন পয়েন্ট অবস্থিত এই রেস্টুরেন্ট দিয়ে আজকের জাঁকজমক সুগন্ধা পয়েন্টের যাত্রা হয়েছিল। আজ থেকে ১৬ বছর আগে সুগন্ধা পয়েন্টে পর্যটকদের খাবারের নিশ্চয়তা দেয়ার জন্য প্রথম পর্যটনসেবী প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা করেছিল ‘ফুড ভিলেজ’। ‘ফুড ভিলেজ’কে অনুসরণ করে আজ সুগন্ধা পয়েন্ট হয়ে উঠেছে কক্সবাজারের পর্যটনের প্রধান কেন্দ্র।

বাহারী আলোতে ঝলমল ফুড ভিলেজ।

তবে দীর্ঘ ১৬ বছরের পথচলায় অনেক বাধা-বিঘœ এবং নানা চড়াই-উতরাই পেরোতে হয়েছে এই প্রতিষ্ঠানকে। এক সময় পর্যাপ্ত কাস্টমার না পেয়ে বছরের পর পর লাখ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। এছাড়া আরো পারিপার্শি¦ক নানা ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। তারপরও কক্সবাজারের পর্যটনকে এগিয়ে দিতে ‘ফুড ভিলেজ’কে শত কষ্টে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছিল। ফেলে আসা এসব অতীতের তিক্ত ঘটনার কথা বলছিলেন- এই প্রতিষ্ঠানের কর্ণদ্বার ও কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পকে আজকের অবস্থানে নিয়ে আসার অন্যতম কারিগর এস.এম কিবরিয়া খাঁন।

শীতল ছায়ার সুনিবিড়ি ঠিকানা ফুড ভিলেজ।

তরুণ উদ্যোক্তা এস.এম কিবরিয়া কক্সবাজারের আধুনিক পর্যটন শিল্পের যাত্রার উদ্যোক্তদের একজন। দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে মানুষকে কক্সবাজার সম্পর্কে আকৃষ্ট করতেন তিনি। পর্যটক আকৃষ্ট করতে কক্সবাজারে তার হাত ধরেই যাত্রা করেছিল আজকের নাম করা পর্যটনসেবী সংস্থা ট্যুর অপারেটস অব কক্সবাজার-টুয়াক। আজকে এই সংগঠনের হয়ে আত্মকর্মসংস্থান হয়েছে শত শত তরুণের। কক্সবাজারের পর্যটনকে এগিয়ে দিতে সেই সময়কার ‘জঞ্জাল’ সুগন্ধা পয়েন্টে একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইকো রেস্টুরেন্ট ‘ফুড ভিলেজ’ নির্মাণ করেছিলেন এস.এম কিবরিয়া খাঁন। নিশ্চিত লোকসান জেনেও ঝুঁকি নিয়েই এই রেস্টরেন্ট শুরু করেছিলেন। কারণ তাঁর স্বপ্ন ছিলো এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই আলো ছড়াবে সুগন্ধা পয়েন্ট। তার প্রত্যাশা আজ বাস্তবে পরিণত হলো।

ছোট-বড় সবার স্বাচ্ছন্দের ঠিকানা ফুড ভিলেজ।

এস.এম কিবরিয়া খাঁন বলেন, ‘পর্যটনের প্রতি আমার খুব বেশি আকর্ষণ। তাই কক্সবাজারের পর্যটনের আবাদকালেই আমি এই শিল্পের সাথে জড়িয়ে পড়েছিলাম। ঝুঁকি নিয়েই নিজের শ্রম, অর্থ আর মেধা ইনভেস্ট করেছিলাম। অনেক লোকসান গুনেছি কক্সবাজারের পর্যটনের উন্নয়নে। তারপরও কখনো হাল ছাড়িনি। আমার স্বপ্ন ছিলো কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প একদিন বিশ^মানের হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমার স্বপ্নযাত্রার অংশ হিসেবে ‘ফুড ভিলেজ’র যাত্রা করেছিলাম। তখন কক্সবাজার সৈকতের ডাইবেটিকস পয়েন্ট, লাবণী পয়েন্টেই শুধুমাত্র পর্যটক বিচরণ করতো। সেই সময় সুগন্ধা পয়েন্ট একদম জঞ্জালে ভরপুর ছিলো। ওই পয়েন্টে দিন-দুপুরে ছিনতাই হতো। মাদকসেবীদের আড্ডা ছিলো দিনরাত। এমন প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে আমি ‘ফুড ভিলেজ’ প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। সম্পূর্ণ ইট-পাথর বিহীন ইকো সিস্টেমে পরিবেশবান্ধব এই রেস্টরেন্টটি নির্মাণ করেছিলাম। তারপরও দীর্ঘদিন বছর ব্যবসা জমেনি। ফলে লোকসান দিতে দিতে এক সময় নিঃস্ব হয়ে গিয়েছিলাম। তবে যেসব পর্যটকেরা রেস্টুন্টটিতে তারা অত্যন্ত আনন্দ পেতো। তাদের এই আনন্দ আর পর্যটন শিল্পকে উন্নত করতে আমি শত কষ্টেও ‘ফুড ভিলেজ’কে টিকিয়ে রেখেছি।’

 

রেস্টুরেন্ট সূত্রে জানা গেছে, পর্যটকদের উপযোগী ব্রেফাস্ট, লাঞ্চ, ডিনার, চা-কফি, ফিস বারভিকিউসহ সব ধরণের খাবার পাওয়া যায় ‘ফুড ভিলেজ-এ। প্রখর রোদের মাঝে ঝাউগাছের ছায়ায় মনোরম পরিবেশে কাঠ আর বাঁশ অত্যন্ত আকর্ষণীয়ভাবে নির্মিত এই ইকো রেস্টুন্টে গেলেই অতি সহজেই স্বাচ্ছন্দ অনুভব করেন পর্যটকেরা। খাবারের মান ও মূল্য অত্যন্ত সন্তোষজনক। তাই পর্যটকসহ ভোজনরসিক যে কেউ মনোরম পরিবেশে সময় কাটিয়ে ভালো মানের খাবার খেতে আসতে পারেন ‘ফুড ভিলেজ’-এ।

সুস্বাদু খাবারের আস্থার ঠিকানা ফুড ভিলেজ।

‘ফুড ভিলেজ’র স্বত্ত্বাধিকারী এস.এম কিবরিয়া জানান, এস. আলম গ্রুপের প্লটের আওতাধীন জমিতে অবস্থিত ‘ফুড ভিলেজ’। মাসিক ভাড়া এস. আলম গ্রুপকে দিতে হয়। এছাড়াও আইনী নিশ্চয়তার জন্য উচ্চ আদালতের কাগজপত্রও রয়েছে। সব মিলে সম্পূর্ণ আইনী কাঠামোর মধ্যে থেকেই ‘ফুড ভিলেজ’ পরিচালনা করা হচ্ছে।