ইমাম খাইর, সিবিএন
একাদশ সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন বুধবার (২৮ নভেম্বর) জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণ, জেলা নির্বাচন অফিসসহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে ছিল সম্ভাব্য প্রার্থীদের ভিড়। শেষদিনে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে প্রার্থীদের পাশাপাশি সমর্থকদের বেশ চাপ ছিল। পরিস্থিতি সামাল দিতে আগেভাগে পুলিশসহ অন্যান্য প্রশাসনও ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে রাখে। কোথাও বিশঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি। সৌহার্দ্যপূর্ন পরিবেশে সব প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছে।
নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত সময়সূচির ভেতরে মনোনয়নপত্র জমা করতে প্রার্থীরা নিজ এলাকা থেকে সকালে রওয়ানা করে। এ সময় নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমর্থকেরাও পিছু নেয় প্রার্থীদের।
এখানে একটা বিষয় উল্লেখ করার মতো। মনোনয়নপত্র জমাদানকে কেন্দ্র করে বিএনপির মধ্যে উৎসবের পরিবেশ দেখা দেয়। দলীয় অফিস উৎসবমুখর ছিল। কিন্তু জেলা আওয়ামী লীগের অফিস তালাবদ্ধ ছিল। এমনকি অন্যান্য দিন গেইট খোলা থাকলেও আজ বন্ধ ছিল।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমলের কোন কর্মী, সমর্থক দলের অফিস কেন্দ্রিক দেখা যায়নি।
অপরদিকে, বুধবার সকাল সাড়ে দশটায় শহরের শহিদ শরণিস্থ বিএনপি কার্যালয় সরগরম দেখা যায়। কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের বিএনপির প্রর্থী লুৎফুর রহমান কাজলের মনোননয়পত্র জমা দেয়াকে কেন্দ্র করে প্রচার লোক সমাগম ঘটে। হোটেল নিরিবিলি প্রাঙ্গণ লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। অনেকটা বিশাল সমাবেশে রূপ নেয়।
বেলা ১ টার দিকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার মোঃ কামাল হোসেনের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়নপত্র জমা দেন বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী লুৎফুর রহমান কাজল।
এ সময় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শামীম আরা স্বপ্না, জেলা এলডিপির সভাপতি গোলাম কিবরিয়া, জেলা ইসলামী ঐক্যজোটের সাধারণ সম্পাদক মওলানা ইয়াসিন হাবিব, সদর উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি আবদুল মাবুদ, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট মোহাম্মদ ছৈয়দ আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় লুৎফুর রহমান কাজল রিটার্নিং অফিসারের সহযোগিতা ও গণতন্ত্রের পক্ষে থাকার আহবান জানালে রিটার্নিং অফিসার মোঃ কামাল হোসেন বিধিসম্মত সকল সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
এর আগে কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টেটের মনোনীত প্রার্থী জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী মনোনয়পত্র জমা দিয়েছেন।
এ সময় শাহজাহান চৌধুরীর সাথে ছিলেন উখিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি সরওয়ার জাহান চৌধুরী, ভাইসচেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক সোলতান মাহমুদ চৌধুরী, ফজল করিম চেয়ারম্যান, টেকনাফ উপজেলা যুবদলের সভাপতি এড. হাসান ছিদ্দিকী, যুবদল নেতা রাশেদুল করিম মার্কিন, শাহাদাত হোসেন ও যুবদলনেতা আবদুল কাইয়ুম প্রমুখ।

কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমল রিটার্নিং অফিসারের কাছে বুধবার (২৮ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২ টায় মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার মোঃ কামাল হোসেন মনোনয়নপত্রটি গ্রহন করেন।
এ সময় জেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ বশির আহমদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আশরাফ হোসেনসহ প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এমপি কমলের সাথে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি জাফর আলম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাশেদুল হক রাশেদ, রামু উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রিয়াজুল আলম, সদর উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আবু তালেব ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল করিম মাদু।

এদিকে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টির ৫ প্রার্থীসহ মোট ৭ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন।
বুধবার (২৮) নভেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে রিটানিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন এবং সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূরুদ্দিন মোহাম্মদ শিবলী নোমানের কাছে ৭জন প্রার্থী স্ব স্ব মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
দলীয় প্রতীকে মনোনয়ন জমা দেন ধানের শীষ নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি এডভোকেট হাসিনা আহমেদ, নৌকা প্রতীকে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদ্য পদত্যাগকারী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলম, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক বর্তমান সাংসদ আলহাজ্ব মৌলভী মোহাম্মদ ইলিয়াছ, হাতুড়ী প্রতীকে ওয়াকার্স পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা হাজী বশিরুল আলম ও হারিকেন প্রতীকে ববি হাজ্জাজের নেতৃত্বাধীন জাতীয়বাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) থেকে ফয়সাল চৌধুরী।
এছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বিএমচর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা বদিউল আলম ও আওয়ামীলীগ প্রার্থী জাফর আলমের মেয়ে তানিয়া আফরিন জাফর।
এদের মধ্যে ৬ জন প্রার্থী ২৮ নভেম্বর মনোননয়পত্র জমা দিলেও বিএনপির প্রার্থী এডভোকেট হাসিনা আহমেদ জমা দিয়েছেন ২৭ নভেম্বর।
সুত্র মতে, কক্সবাজার জেলার ৪টি পৌরসভা ও ৭১ ইউনিয়নের ৫১২ ভোটকেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ২০৪ জন। সেখানে ৭ লাখ ৭ হাজার ৮৩১ জন পুরুষ এবং ৬ লাখ ৫৭ হাজার ৩৭৩ জন মহিলা। ভোট কক্ষের সংখ্যা ২ হাজার ৭৩৮টি।
জেলার চারটি আসনে ভোটের পরিসংখ্যান:
কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া):
চকরিয়া উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৮টি ইউনিয়ন এবং পেকুয়া উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন নিয়েই কক্সবাজার-১ আসনটি গঠিত।
এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৯০ হাজার ৬৮১ জন। ভোটকেন্দ্র সংখ্যা ১৩৯টি।
চকরিয়া উপজেলায় ১৮টি ইউনিয়নের ৯৯টি ভোট কেন্দ্রের বিপরীতে এক লাখ ৪৮ হাজার ৮০৫ জন পুরুষ ও এক লাখ ৩৫ হাজার ৬০৬ জন নারী মিলিয়ে ভোটার রয়েছে দুই লাখ ৮৪ হাজার ৪১১ জন।
পেকুয়া উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ৪০ ভোট কেন্দ্রের বিপরীতে ৫৫ হাজার ৬২০ জন পুরুষ ও ৫০ হাজার ৬৫০ নারীসহ ভোটার সংখ্যা এক লাখ ৬ হাজার ২৭০ জন।
কক্সবাজার-২ (কুতুবদিয়া-মহেশখালী):
কুতুবদিয়া উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন এবং মহেশখালী উপজেলার একটি পৌরসভার ৮টি ইউনিয়ন নিয়েই কক্সবাজার-২ আসনটি গঠিত।
এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৯৬ হাজার ৮১ জন। ভোটকেন্দ্র সংখ্যা ১০৫টি।
কুতুবদিয়া উপজেলায় ৬ ইউনিয়নের ৩৭টি ভোট কেন্দ্রের বিপরীতে ৪৪ হাজার ২৩ জন পুরুষ ও ৪০হাজার ৪৪২ জন নারী মিলিয়ে ভোটার রয়েছে দুই লাখ ৮৪ হাজার ৪৬৫ জন।
মহেশখালী উপজেলার একটি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়নে ৬৮ ভোট কেন্দ্রের বিপরীতে ১ লাখ ৯ হাজার ৯৪৯ জন পুরুষ ও ১ লাখ ১ হাজার ৬৬৭ নারীসহ ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ১১ হাজার ৬১৬ জন।
কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু):
কক্সবাজার সদর উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন এবং রামু উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন নিয়েই কক্সবাজার-৩ আসনটি গঠিত।
এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ১৪ হাজার ৩৬ জন। ভোটকেন্দ্র সংখ্যা ১৬৮টি।
সদর উপজেলায় ১০৮টি ভোট কেন্দ্রের বিপরীতে এক লাখ ৩৫ হাজার ১৪ জন পুরুষ ও এক লাখ ২১ হাজার ৪ জন নারী মিলিয়ে ভোটার রয়েছে দুই লাখ ৫৬ হাজার ১৮ জন।
রামু উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ৬১ ভোট কেন্দ্রের বিপরীতে ৮১ হাজার ৪১০ জন পুরুষ ও ৭৬ হাজার ৬০৮ নারীসহ ভোটার সংখ্যা এক লাখ ৫৮ হাজার ১৮ জন।
কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ):
উখিয়া উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন এবং টেকনাফ উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন নিয়েই কক্সবাজার-৪ আসনটি গঠিত।
এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৬৪ হাজার ৪০৬ জন। ভোটকেন্দ্র সংখ্যা ১০০টি।
উখিয়া উপজেলায় ৪৫টি ভোট কেন্দ্রের বিপরীতে ৬০ হাজার ৪৮৮জন পুরুষ ও ৫৮ হাজার ২৯৭ জন নারী মিলিয়ে ভোটার রয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৭৮৫ জন।
টেকনাফ উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৬টি ইউনিয়নে ৫৫ ভোট কেন্দ্রের বিপরীতে ৭২ হাজার ৫২২জন পুরুষ ও ৭৩ হাজার ৯৯ নারীসহ ভোটার সংখ্যা এক লাখ ৪৫ হাজার ৬২১ জন।