ইমাম খাইর, সিবিএন:
বাংলাদেশে উগ্রতা ও সহিংসতার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ তিনটি জেলার মধ্যে কক্সবাজার অন্যতম। গুটি কয়েক মানুষের কারণে ঐতিহ্যবাহী কক্সবাজারের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কক্সবাজারকে দুর্নামমুক্ত করা সম্ভব।
বুধবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে কক্সবাজার জেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘উগ্রবাদ ও সহিংসতা প্রতিরোধে নাগরিক সমাজের ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা কথাগুলো বলেছেন।
সভায় বলা হয়, ধর্মের নামে উগ্রতা ছড়াতে তৎপর একটি শ্রেণী। সেখানে ধর্মান্ধ ও স্বল্প শিক্ষিতের পরিমাণ বেশী। ইংরেজি শিক্ষিতরা জঙ্গিবাদে জড়ানোর রিপোর্ট প্রকাশ পেয়েছে। দেশের সুনাম, সমৃদ্ধির জন্য হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে। এ জন্য নীতি শিক্ষা খুবই প্রয়োজন বলে বক্তারা মনে করেন।
ইয়ং পাওয়ার ইন সোস্যাশল এ্যাকশান (ইপসা)-এর আয়োজনে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার।
তিনি বলেন, ভুল বার্তার কারণে সামজের কিছু লোক বিভ্রান্ত হচ্ছে। তাদের সঠিক পথ বাতলিয়ে দেয়ার দায়িত্ব আমাদের সবার। সরকার কঠোর হস্তে জঙ্গিবাদ দমনের কারণে বাংলাদেশ একটা পর্যায়ে এসেছে। জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সমাজের শান্তি, শৃঙ্খলার স্থিতিশীলতা নিয়েই দেশের উন্নয়ন। উগ্রতা ও সহিংসতার বিরুদ্ধে আমাদের সচেতনতা বাড়াতে হবে। বিশৃঙ্খলা করে কেউ ভাল অবস্থানে যেতে পারেনি।
সভার বিশেষ অতিথি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন আক্ষেপ করে বলেন, যে পরিমাণ থানা বেড়েছে সে পরিমান সেবা বাড়েনি। টাকা ছাড়া থানায় মামলা রেকর্ড হয়না। যে পরিমাণ মাহফিল বেড়েছে সেপরিমাণ আমলদার বাড়েনি। মসজিদ বেড়েছে কিন্তু মুসল্লি বাড়েনি। এই হচ্ছে সমাজের বাস্তব চিত্র। তিনি বলেন, আগাছামুক্ত ফসল চাষ কোনভাবেই সম্ভব নয়। তবে আগাছার পরিমাণ ফসলের চেয়ে বেশি হলে সমস্যা।
জেলা পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, শত চেষ্টা করেও সমাজের আগাছা পুরোপুরি পরিস্কার করা যাবেনা। কারণ, পৃথিবীর জন্ম লগ্ন থেকেই আগাছা তথা বিশৃঙ্খলা ছিল। সেজন্য ধর্মীয় নীতিবাক্যগুলো সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে দিতে হবে।
গোলটেবিল আলোচনায় মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে উগ্রবাদ ও সহিংসতা প্রতিরোধে নাগরিক সমাজের ভূমিকা রাখতে বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিদের ভূমিকা এবং ইপসার কর্মকা- তুলে ধরেন সংস্থাটির আঞ্চলিক প্রধান ও উপপরিচালক খালেদা বেগম। সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন কক্সবাজার পৌরসভার নারী কাউন্সিলর জাহেদ আক্তার।
ইপসার প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর (ট্রেনিং) রজত বড়ুয়া রিকোর সঞ্চালনায় গোলটেবিল আলোচনার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সহকারী পরিচালক মোঃ শহিদুল ইসলাম। উগ্রবাদ ও সহিংসতা প্রতিরোধে নাগরিক সমাজের ভূমিকার উপর দিক নির্দেশনা দিয়ে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির কক্সবাজার জেলা সেক্রেটারি মাওলানা মুহাম্মদ আলমগীর।
তিনি বলেন, ধর্মীয় শিক্ষার আমল না থাকায় আমরা আজ বিপথগামি। জানমালের নিরাপত্তা নেই। চারিদিকে অশান্তি। সমাজের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য সন্তানদের তদারক করতে হবে। আদব আখলাক শিক্ষা দিতে হবে।
মাওলানা আলমগীর বলেন, কোন ধর্মে উগ্রতা, সহিংসতা, বিশৃঙ্খল সৃষ্টির স্থান নেই। প্রত্যেকের উচিৎ ধর্মীয় বিধিবিধান মেনে চলা। তাহলে সমাজের সর্বস্থরে শান্তি ফিরে আসবে। দেশ এগিয়ে যাবে।
গোলটেবিল আলোচনার সমন্বয় করেন ইপসার ফোকাল পারসন মোহাম্মদ হারুন। উপস্থিত ছিলেন প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর যীশু বড়ুয়া, মনিটরিং অফিসার প্রবাল বড়ুয়া প্রমুখ। গোলটেবিল আলোচনায় বিভিন্ন স্তরের অর্ধশতাধিক প্রতিনিধি অংশ গ্রহণ করেন।