|| মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী ||

সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনে আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ বিএনপি’র মনোনয়ন ছিনিয়ে এনেছেন। আলমগীর মোহাম্মাদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ একই আসনে সপ্তম ও অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিপুল ভোটের ব্যবধানে টানা দু’বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এবারো আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ একই আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন পেয়েছেন। কক্সবাজার-২ আসনের মনোনয়ন নিয়ে কক্সবাজার জেলা জামায়াতের ইসলামীর আমীর মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে বলেছেন, জামায়াতের কারাবন্দী কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ.এইচ.এম হামিদুর রহমান আযাদ ২০ দলীয় জোটের মনোনীত প্রার্থী হিসাবে এ আসনে অবশ্যই মনোনয়ন পত্র দাখিল করবেন। মনোনয়নপত্র বাছাই এ আইনী বাধ্যবাধকতা পার হতে পারলেই সাবেক সংসদ সদস্য এ.এইচ.এম হামিদুর রহমান আযাদ চুড়ান্ত নির্বাচনী যুদ্ধে অবতীর্ণ হবেন। এ.এইচ.এম হামিদুর রহমান আযাদ যদি আইনী বাঁধা অতিক্রম করতে নাপারেন, তখন এ আসনে বিএনপি’র বিকল্প প্রার্থী নির্বাচন করবেন বলে জেলা জাময়াতের আমীর মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন। তবে এবিষয়ে আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ্ ফরিদ এ প্রতিবেদককে বলেছেন, দল থেকে তাঁকেই কক্সবাজার-২ আসনে জোট ও বিএনপি’র মূল প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে তাঁকেই ধানের শীষ প্রতীকের একক প্রার্থী হিসাবে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত পত্র দেয়া হয়েছে বলে জানান। তবে অাইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এ.এইচ.এম হামিদুর রহমান আযাদের আইনী জটিলতা কাটিয়ে উঠা খুব একটা সহজ নয়। কারণ যুদ্ধ অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হাইকোর্টের সম মর্যাদাসম্পন্ন একটি আদালত। আইনী লড়াই করে এ আদালতের আইন ও আদেশ রহিত করা অথবা ভূল প্রমান করা খুব কঠিন হবে। এজন্য আইন বিশেষজ্ঞদের মত অনুযায়ী আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদই এ আসনে শেষপর্যন্ত ধানের শীষের ঝান্ডা উড়াবেন। এআসনের ভোটারেরা জামায়াতের আযাদ আর বিএনপি’র ফরিদের মধ্যে কে মূল প্রার্থী, কে ডেমী প্রার্থী এনিয়ে বেশ কৌতুহলের মধ্যে রয়েছে।

অন্য দিকে, এই আসনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেয়েছেন আশেক উল্লাহ রফিক। আশেক উল্লাহ রফিক ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদের একতরফা নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন। আশেকউল্লাহ রফিকের পিতা মরহুম এডভোকেট রফিক উল্লাহ এবং বিএনপি’র প্রার্থী আলমগীর মোহাাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদের আত্মীয়তার সম্পর্কে আপন জেঠাত ভাই। সে হিসাবে আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আশেক উল্লাহ রফিকের চাচা। আবার আশেক উল্লাহ্ রফিক বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদের ভাতিজা। দু’জনই একই পরিবারের সদস্য। অর্থাৎ আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদের পিতা মরহুম হাজী আকতার কামাল ও আশেক উল্লাহ্ রফিকের দাদা মরহুম মকবুল আহামদ মোকতার সম্পর্কে আপন ভাই। দু’জন প্রার্থীর বাড়িই হচ্ছে- মহেশখালী উপজেলার বড় মহেশখালী গ্রামে। একই পরিবারের দু’জন সদস্যদের হাতেই এখন আওয়ামীলীগের নৌকা আর বিএনপি’র ধানের শীষ। মহেশখালীতে ভোটের পরিবার হিসাবে পরিচিত এই পরিবারের মধ্যেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সুস্পষ্ট বিভক্তি চলে আসবে। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আশেক উল্লাহ রফিককে কোন সময় মাঠপর্যায়ে নিজের নির্বাচন করতে হয়নি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ছাত্র রাজনীতি করেছেন আশেক উল্লাহ্। চট্টগ্রাম সরকারী বানিজ্য কলেজ ছাত্র সংসদের একসময় জিএস ও ভিপি ছিলেন। ছাত্রবস্থায় চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন।

অপরদিকে, ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে সপ্তম জাতীয় সংসদে বিরোধীদলের এবং অষ্টম জাতীয় সংসদে সরকারীদলের এমপি ছিলেন। ওয়ান ইলাভেন সরকারের রোষানলে পড়ে গ্রেপ্তার হয়ে জেল খেটেছেন। নির্বাচন ও রাজনীতিতে পরিপক্ক আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ্ ফরিদকে এখন লড়তে হচ্ছে একই পরিবারের সদস্য পুত্রতুল্য ভাতিজা আশেক উল্লাহ রফিকের সাথে। একইভাবে, নৌকার মাঝি আশেক উল্লাহ রফিককে লড়তে হচ্ছে পিতৃতুল্য মুুরব্বী চাচা আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ্ ফরিদের বিরুদ্ধে। নৌকা আর ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে চাচা-ভাতিজার লড়াই খুব জমবে বলে নির্বাচন বিশ্লেষকেরা ধারণা করছেন। এআসনে আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ বিএনপি’র মনোনয়ন প্রাপ্তির খবরে এ আসনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন বন্ঞ্চিতরা আশেক উল্লাহ্ রফিকের মনোনয়ন বাতিল করে নিজেরা মনোনয়ন লাভের জন্য আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছেন বলে কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগ সুত্রে জানা গেছে।
সর্বোপরি আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ্‌ ফরিদ বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রাপ্তির খবরে কক্সবাজার-২ আসনে পূর্বের অনেক হিসাব নিকাশ পরিবর্তন হতে চলছে।

উপকূলীয় এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ২৯৬০৮১ জন। তারমধ্যে-মহেশখালী উপজেলায় ২১১৭১৬ জন। কুতুবদিয়া উপজেলায় ৮৪৪৬৫ জন। মোট ভোট কেন্দ্র ১০৫টি।